অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকলে করণীয়

অধ্যাপক ডা. এফ. এম. সিদ্দিকী

সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ থাকা উচিত। ৯০ এর নিচে নেমে গেলেই জটিলতা হতে থাকে। কোভিড-১৯ সংক্রমণে অনেকেরই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়।
দেশে চিকিৎসার সুযোগ পর্যাপ্ত নয়। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংকট রয়েছে।এমতাবস্থায় আক্রান্ত হলে এবং রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে টের পেলে কী করবেন রোগী বা তার স্বজনরা বুঝে উঠতে পারেন না।

অক্সিজেন কমে যাচ্ছে কি না যেভাবে বুঝবেন

  • মাথাব্যথা
  • শ্বাসকষ্ট
  • হৃৎস্পন্দন দ্রুত ওঠানামা করা
  • কাশি
  • মাথা ঝিমঝিম করা

এই কোভিডকালে অনেকেই বাসায় পালস অক্সিমিটার রাখছেন। অক্সিমিটার দিয়ে নিয়মিত রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করে জেনে নিন সর্বশেষ অবস্থা। আর অক্সিমিটার না থাকলে উপর্যুক্ত লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন রোগীর অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে যা করবেন
এমন পরিস্থিতি হলে রোগী বা রোগীর স্বজনরা প্রথমেই ভয় পেয়ে ঘাবড়ে যান। এই ভয় বা চাপ রোগীকে আরো খারাপ অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এক্ষেত্রে মানসিকভাবে শক্ত থেকে নিম্নোক্ত নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করুন।

ধীর স্থির থাকুন
তাড়াহুড়ো করবেন না। হাঁটাচলা অবস্থায় থাকলে স্থির হয়ে যান। এ সময় কিছু খাবেন না।

লোকসমাগম কমিয়ে ফেলুন
অধিক লোকের উপস্থিতি এমনিতেই অক্সিজেন কমিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এমন অবস্থায় আশপাশ থেকে লোকজন সরিয়ে দিন।

অক্সিমিটার
দিয়ে রক্তে
অক্সিজেনের
মাত্রা পরীক্ষা
করে জেনে
নিন সর্বশেষ
অবস্থা।

উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন
শ্বাসকষ্ট শুরু হলে উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়–ন। একে বলা হয় প্রোনিং পদ্ধতি। কয়েকটি বালিশ সঙ্গে রাখবেন। মুখ বা গলার কাছে একটি, বুক ও পেটের নিচে দুটি এবং পায়ের তলায় একটি বালিশ দিয়ে দিন। এভাবে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন। এতে অক্সিজেনের প্রবাহ কিছুটা বাড়তে পারে।

গায়ের আঁটসাঁট পোশাক খুলে ফেলুন
অন্তর্বাস, টাইট পোশাক, গলার টাই, জুতা-মোজা, প্যান্ট-বেল্ট; শরীর থেকে এমন পোশাক খুলে ফেলুন বা ঢিলে করে দিন।পরিহিত জামার গলার কাছের বোতাম লাগানো থাকলে দ্রুত খুলে ফেলুন।

দরজা জানালা খুলে দিন
বদ্ধ ঘরে থাকলে অতিসত্বর ঘরের দরজা জানালা সব খুলে দিয়ে ঘর উন্মুক্ত করে দিন। তাতে ঘরে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়বে।

শ্বাসের ব্যায়াম করুন
ফুসফুস ভালো রাখতে নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা অত্যন্ত উপকারী। ব্যায়ামের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে দেওয়া রইল।

১. সোজা হয়ে বসুন। প্রথমে ফুসফুসের সবটুকু বাতাস বের করে দিন। চোখ এবং মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে বুকভরে শ্বাস নিন। সাধারণত ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় ধরে শ্বাস নিন। ১-৭ পর্যন্ত গোনার সময় ধরে ভেতরে আটকে রাখুন।এরপর মুখ গোল করে শ্বাস গ্রহণের দ্বিগুণ সময় অর্থাৎ ৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে বাতাস বের করে দিন। কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে অন্তত চার বার এরকম করুন। দিনে অন্তত দুই বার এই ব্যায়ামটি করার চেষ্টা করুন।

২. পূর্বের মতো গভীর শ্বাস গ্রহণ করুন। তবে এক্ষেত্রে শ্বাস গ্রহণের গতি ক্রমান্বয়ে কমে আসবে। এরপর শ্বাস ছাড়ার সময় এক, দুই, তিন এভাবে পাঁচ বা ছয় পর্যন্ত গুনতে গুনতে শ্বাস ছাড়ান। ব্যায়ামটি করার সময় চোখ বন্ধ রাখুন।


৩. মুখ বন্ধ করে দ্রুতলয়ে শ্বাস নেওয়ার ব্যায়ামকে বলে ‘বেলো ব্রিদিং।প্রতি সেকেন্ডে অন্তত তিনবার শ্বাস নেওয়াও ছাড়ার চেষ্টা করুন।উল্লেখ্য, শ্বাস গ্রহণ ও ছাড়ার তুলনামূলক সময় সমান রাখার প্রতি খেয়াল রাখুন।


অধ্যাপক ডা. এফ. এম. সিদ্দিকী
এএমবিবিএস, এফসিপিএস,এফএসিপি (ইউএসএ), এফআরসিপি
মেডিসিন ও বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল

LinkedIn
Share
WhatsApp