অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার সচেতন হোন শুরুতে

অধ্যাপক জুলফিকার রহমান খান

খাদ্য পরিপাকতন্ত্রের একটি গ্রন্থি হলো অগ্ন্যাশয়। ইংরেজিতে যাকে বলে প্যানক্রিয়াস। হজমপ্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে এটি। এই অগ্ন্যাশয় যদি ঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে গ্রহণকৃত খাবারের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যথাযথভাবে শোষণ করা আমাদের শরীরের পক্ষে সম্ভব নয়। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত এনজাইম পাকস্থলির এসিডকে প্রশমিত করে। খাদ্যকে ভেঙে শোষণের উপযোগী করে তোলে। এছাড়াও অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয় যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার কী?

অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির কোষসমূহ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে টিউমার বা পিন্ডূ সৃষ্টি করে। আর এই টিউমারের বেশিরভাগই ক্যানসারে রূপ নেয়।

কারণ

  • অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রধানত জিনগত সমস্যা দায়ী।
  • অন্য অনেক ক্যানসারের মত এক্ষেত্রেও একটা বড় কারণ হচ্ছে ধূমপান।
  • বয়স একটি বড় ফ্যাক্টর। বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে বেড়ে যায় এই ক্যানসারের ঝুঁকি।
  • খাবারে অপরিমিতিবোধ বা অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের কারণেও এই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

লক্ষণসমূহ

নীরবে এবং ব্যথাহীনভাবে বৃদ্ধি পায় বলে স্বাভাবিক অবস্থায় অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের লক্ষণ বোঝা যায় না। যথেষ্ট বড় হয়ে গেলে তবেই প্রকাশ পায় লক্ষণগুলো।


জন্ডিস: কেবল লিভারের ইনফেকশন বা লিভারের রোগের কারণেই জন্ডিস হয়, তা নয়। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের কারণেও জন্ডিস হয়।

পায়খানার পরিবর্তন: কখনো পাতলা কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।

মলের রঙের পরিবর্তন: অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্তদের সাধারণত ধূসর বা খড়িমাটির মতো হালকা বর্ণের মল নির্গত হয়।

গাঢ় রঙের প্রস্রাব: অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের রোগীদের প্রস্রাব কমলা বা হালকা চা রঙের হয়।

পেট ফাঁপা: প্যানক্রিয়েটিক ক্যানসারে আক্রান্তদের বদহজমের সমস্যা হতে দেখা যায়। ফলে পেট ফাঁপা থাকে।

বমি ভাব: অগ্নাশয়ের ক্যানসার হলে পেটে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব থাকে।

ওজন হ্রাস: ওজন কমে যাওয়াও অগ্ন্যাশয়ের একটা লক্ষণ।

অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার রোধে যে খাবারগুলো উপকারী

দই: অগ্ন্যাশয়ের স্বাস্থ্যের জন্য দই একটি উপকারী খাবার। এটি খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।

পালংশাক: ভিটামিন বি ও আয়রনের সমৃদ্ধ উৎস পালংশাক, যা অগ্ন্যাশয়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান।

রসুন: রসুনে থাকে উচ্চ ঘনত্বের সালফার, সেলেনিয়াম, অলিগোস্যাকারাইডস, আরজিনিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েড যা অগ্ন্যাশয়কে সুরক্ষা দেয়।

লাল আঙুর: অগ্ন্যাশয়ের জন্য উপকারী পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি ফল লাল আঙুর।

ব্রোকলি: অগ্ন্যাশয়ের জন্য উপকারী খাবার হিসেবে ব্রোকলি একটি উল্লেখযোগ্য সবজি।

মাশরুম: পর্যাপ্ত পরিমাণে সেলেনিয়াম, ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন বি থাকে মাশরুমে, যা অগ্ন্যায়শয়ের সুস্থতার জন্য খুবই ভালো।

মিষ্টি আলু: উচ্চ ঘনত্বের বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যা অগ্ন্যাশয়ের সুস্থতার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।


টমেটো: টমেটো একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট। এতে রয়েছে ভিটামিন সি ও লাইকোপিন, যা অগ্ন্যাশয়ের
স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় এবং উন্নতিতে সাহায্য করে।

বিশেষভাবে লক্ষ্য করুন

  • হজমে সহায়তাকারী এনজাইম ও রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ইনসুলিন তৈরি হয় অগ্ন্যাশয় থেকে।
  • অগ্নাশয়ে ক্যানসারের লক্ষণ সহজেই বোঝা যায় না। লক্ষণসমূহ অনেকটা সাধারণ অগ্নাশয়ের রোগের মতোই প্রকাশিত হয়।
  • অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অগ্নাশয় ক্যানসার ধরা পড়ে খুব মারাত্মক পর্যায়ে। ততদিনে হয়তো ক্যান্সার অনেক স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এ অবস্থায় চিকিৎসা করা দুরূহ হয়ে পড়ে।

ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত ওজন, শারীরিক কর্মকান্ড না করা, ফল বা শাকসবজি কম খাওয়া-এসবই ক্যানসার হওয়ার মূল কারণ। ক্যানসারে যত মানুষ মারা যায় তার এক তৃতীয়াংশের জীবনযাপনেই দেখা যায় এই
বৈশিষ্ট্যগুলো।

অধ্যাপক জুলফিকার রহমান খান
এফসিপিএস (সার্জারি), এফআরসিএস (ইউকে), এফআইসিএস (ইউএসএ)
চেয়ারম্যান, হেপাটোবিলিয়ারি প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপান্ট সার্জারি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
লিভার, প্যানক্রিয়াস, বিলিয়ারি এবং ল্যাপারোস্কপিক সার্জন
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share
WhatsApp