অ্যাপেন্ডিসাইটিসে পেটে ব্যথার ধরন
-ডা. এ. কে. এম. আহসান উল্লাহ

পেটের ব্যথা কেন হচ্ছে তা অনেকসময় নিজেই কিছুটা বোঝা যায় সেক্ষেত্রে খেয়াল করতে হবে, ব্যথা পেটের কোন অংশে হচ্ছে। কামড়ে ধরে আছে নাকি চিনচিন ব্যথা হচ্ছে। বমি বা অন্য কোনো উপসর্গ আছে কি না।
আমাদের দেহে পেট বেশ বড়ো জায়গা। এখানে নানা ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকে। অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গ্যাস্ট্রিক, কিডনি বা পিত্তথলিতে পাথর, প্রস্রাবের সংক্রমণসহ প্রভৃতি কারণে ব্যথার উৎপত্তি হতে পারে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যথার লক্ষণ ও স্থান সম্পর্কে জেনে ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে হবে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস কী ও কেন হয়
অ্যাপেন্ডিক্স নামে আমাদের দেহে ছোট্ট একটি নল আকৃতির অঙ্গ আছে। যেটি দৈর্ঘ্যে দুই থেকে বিশ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। নাভির পাশে, তলপেটের ডান দিকে অবস্থিত এই অঙ্গটির তেমন প্রয়োজনীয়তা নেই বলেই সাধারণত মনে করা হয়। এই অঙ্গটিতে প্রদাহ হয়ে ফুলে গেলে পেটে ব্যথা হয়, যা অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা হিসেবে পরিচিত। এ ব্যথা আকস্মিকভাবে শুরু হয়ে প্রথমে নাভির চারপাশে অনুভূত হয়। ধীরে ধীরে ব্যথা চলে আসে তলপেটের ডান দিকে, কুঁচকির কিছুটা ওপরে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্যথা মিলিয়ে যায়। কিন্তু রোগীকে একদম কাবু করে ফেলে।
যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে। তবে ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি থাকে। সাধারণত নারীদের তুলনায় পুরুষদের অ্যাপেন্ডিসাইটিসে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। অতিরিক্ত রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট খাবার খাওয়া ও আঁশজাতীয় খাবার কম খাওয়ার কারণেও অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা হতে পারে।
তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেন্ডিসাইটিস
তলপেটে ব্যথা হলেই ভয় পাওয়ার কারণ নেই। ব্যথার তীব্রতা ও ধরন খেয়াল করা জরুরি। তলপেটে ব্যথা হলে সবসময় সেটি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা হবে এমনটা নাও হতে পারে। তলপেটে মূত্রাশয়, মূত্রনালি, মেয়েদের ডিম্বাশয়, জরায়ুসহ নানান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকে। প্রস্রাবের সংক্রমণ, মূত্রনালি বা মূত্রাশয়ে পাথর, ডিম্বাশয়ে সিস্ট বা সাধারণ কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেও তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
তলপেটে ব্যথা হলেই
ভয় পাওয়ার কারণ নেই।
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা বুঝবেন যেভাবে

পেটের ব্যথা যদি নাভির মাঝ দিয়ে ক্রমশ তলপেটের ডান দিকে ছড়িয়ে পড়ে, ব্যথার স্থানে হাত দিলে যদি ব্যথা বেড়ে যায় এবং ধীরে ধীরে তীব্রতা বাড়ে তাহলে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা মনে করা হয়। তবে পেটের ডান দিকে বা নাভির চারপাশে ব্যথা হলেই সেটি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণে হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। নিশ্চিত হতে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।
এছাড়াও যেসব উপসর্গ দেখে দ্রুত চিকিৎসককের পরামর্শ নিতে হবে-
- কাশি দেওয়ার সময় পেটে ব্যথা
- তলপেটের একদিকে চাপ দিলে অপর পাশে তীব্র ব্যথা
- ঘন ঘন জ্বর আসা
- ক্ষুধামান্দ্য
- বমিভাব বা বমি
- কোষ্ঠকাঠিন্য
চিকিৎসা
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ আগে থেকেই প্রকাশ পায় না। অ্যাপেন্ডিক্স ব্লক হয়ে গেলে এতে সংক্রমণ শুরু হয় এবং জটিলতা তৈরি করে। আল্ট্রাসাউন্ড বা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকগণ এটি নির্ণয় করে থাকেন। এছাড়া মূত্র পরীক্ষা, পেটের এক্স-রে, সিটিস্ক্যান করার প্রয়োজনও হতে পারে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস কোনো ভয়াবহ রোগ নয়। তবে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা না করালে এটি ফেটে ভেতরের বর্জ্য ছড়িয়ে সংক্রমণ হতে পারে। এই অবস্থাকে বলা হয় পেরিটোনাইটিস। এমন অবস্থায় রোগীর জীবনাশঙ্কাও দেখা দিতে পারে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা একটাই-অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলা। এটি জটিল কোনো অস্ত্রোপচার নয়। বর্তমানে পেটে ছিদ্র করেও এই অস্ত্রোপচার করা যায়। তাই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ডা. এ. কে. এম. আহসান উল্লাহ
এমবিবিএস, এমএস, এফসিপিএস (সার্জারি)
এমআরসিএস (এডিনবার্গ), এমআরসিএস (ইংল্যান্ড)
এ.টি.এল.এস কোর্স সার্টিফাইড (আমেরিকা)
সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারি), জেনারেল ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন
সহকারী অধ্যাপক (অবঃ), সার্জারি বিভাগ
বিএসএমএমইউ (পিজি হাসপাতাল), ঢাকা
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল।