ইন্টারমিটেন্ট ফিভার

ইন্টারমিটেন্ট ফিভার স্বল্পস্থায়ী বিরামহীন জ্বর

ইন্টারমিটেন্ট ফিভার

জ্বরের নানা ধরন আছে। একেক জ্বরের আবার একেক রকম জটিলতা। কোনো জ্বর স্বল্পস্থায়ী, কোনো জ্বর আবার অনেক দিন ভোগায়। কোনো জ্বর আপনা-আপনিই সেরে যায়। কোনো কোনো জ্বরের জন্য নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিতে হয়। নানা রকম জ্বরের মধ্যে ইন্টারমিটেন্ট ফিভার এমন এক ধরনের জ্বর যা স্বল্পস্থায়ী কিন্তু বিরামহীন।

জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়। অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ। তাই জটিল কোনো রোগ এড়াতে জ্বরের কারণ ও ধরন জেনে চিকিৎসা করানো জরুরি।

ইন্টারমিটেন্ট ফিভার কী

সারাদিনের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা এই জ্বর থাকে। বাকি সময় শরীর স্বাভাবিক থাকে। জ্বর থাকা অবস্থায় তাপমাত্রার হালকা ওঠানামা হয়। জ্বর যখন কমে যায় তখন একেবারে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নেমে আসে। জ্বর যে কয়দিন থাকে প্রতিদিন একই সময়ে একই মাত্রায় এমন হয়ে থাকে।

যেসব কারণে এমন জ্বর দেখা যায়

বড়োদের ক্ষেত্রে পিত্তনালি, প্রস্রাবের নালিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, কালাজ্বর, রক্তদূষণ, সেপসিস— প্রভৃতি ক্ষেত্রে এমন জ্বর হয়। শিশুদের গলার প্রদাহ, ওটিটিস মিডিয়ার (মধ্যকর্ণে জীবাণুর সংক্রমণজিত প্রদাহ) মতো জটিলতায় ইন্টারমিটেন্ট ফিভার হতে দেখা যায়।

ইন্টারমিটেন্ট ফিভারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পেল এপস্টেইন ফিভার। এতে তিন থেকে চারদিন জ্বর বা জ্বরজ্বর ভাব থাকে। হজকিন লিম্ফোমা (লিম্ফোসাইট নামক শ্বেত কণিকার ক্যানসার) থাকলে এ ধরনের জ্বর হয়।

ইন্টারমিটেন্ট ফিভারের লক্ষণ ও উপসর্গ

এ ধরনের জ্বরের লক্ষণ সাধারণ জ্বরের মতোই।

  • তাপমাত্রা ১০০.৪° ফারেনহাইট (৩৭° সেলসিয়াস) বা তার চেয়ে বেশি থাকবে।
  • তাপমাত্রা অল্প (২-৩° সেলসিয়াস) ওঠানামা করবে।
  • দিনের যেকোনো একটি নির্দিষ্ট সময় জ্বর থাকবে।
  • প্রতিদিন একই সময় জ্বর আসবে।
  • শরীরে কাঁপুনি অনুভূত হবে।
  • ক্লান্ত ও বিষণ্ণ বোধ হবে।

শিশুদের এ জ্বর হলে নিম্নোক্ত লক্ষণসমূহ দেখা যেতে পারে—

  • খুব খিটখিটে আচরণ করবে।
  • খাওয়া দাওয়া করতে অনীহা দেখাবে।
  • বারবার কান ধরে টানবে, যেন কানে ব্যথা পাচ্ছে এমন বোঝা যাবে।
  • গলাব্যথা হবে।
  • কথা বলা বা শব্দ করায় অনাগ্রহ দেখাবে। শব্দ করলেও গলার স্বরে পরিবর্তন বোঝা যাবে।
ইন্টারমিটেন্ট ফিভার

ইন্টারমিটেন্ট ফিভার হলে করণীয়

এটি খুব সাধারণ ধরনের জ্বর। খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

চিকিৎসকের পরামর্শ

যেকোনো জ্বর-জারি হলেই আমরা নিজেদের মতো ওষুধ খেয়ে থাকি। এটি না করাই ভালো। জ্বর যেমনই হোক চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ সেবন করা উচিত। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় রাখবেন।

বিশ্রাম নিন

টানা পরিশ্রমে জ্বর স্বাভাবিক মাত্রা থেকে উচ্চ মাত্রায় চলে যেতে পারে। তাই বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। শিশুদের জ্বর হলে বাইরে খেলাধুলা বা দৌড়াদৌড়ি করতে না দেওয়াই ভালো।

তরলজাতীয় খাবার খান

জ্বরের সময় সহজপাচ্য ও তরলজাতীয় খাবেন। পানিশূন্যতা এড়াতে পর্যাপ্ত পানি ও ফলের রস পান করবেন।

শিশুদের জন্য বিশেষ সতর্কতা

আপনার শিশুর যদি প্রতিদিন একই সময়ে জ্বর হতে থাকে, বিষয়টি হালকাভাবে নেবেন না। বড়োদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার কারণে সহজে এই জ্বর ভালো হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে তা নাও হতে পারে। এ জন্য শিশুর জ্বর হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন—

  • শিশুর আচরণে কোনো অসংগতি দেখা যাচ্ছে কি না।
  • শিশুর প্রস্রাব নিয়মিত বিরতিতে এবং যথার্থ পরিমাণে হচ্ছে কি না। প্রস্রাবের রঙে কোনো পরিবর্তন আসছে কি না।
  • শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না।
  • জ্বরের মাত্রায় বেশি পরিমাণে হেরফের হচ্ছে কি না।

উপর্যুক্ত লক্ষণগুলো দেখা গেলে এবং জ্বর পাঁচ দিনের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


অধ্যাপক ডা. মো. মনজুর রহমান (গালিব)

অধ্যাপক ডা. মো. মনজুর রহমান (গালিব)

এমবিবিএস (ঢাকা), এফসিপিএস (মেডিসিন)
সিনিয়র কনসালট্যান্ট
মেডিসিন বিভাগ
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp