ডা. সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা
বাঙালি সাংস্কৃতিকভাবে পরিবার-অন্তপ্রাণ। স্বামী-স্ত্রী, সন্তানাদি, মা-বাবা, ভাইবোন সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বাস করতেই আমরা ভালোবাসি। আজকাল অবশ্য শহুরে জীবনে একক পরিবার বাড়ছে। তারপরও একসঙ্গে থাকার প্রবণতা শক্তভাবেই গেঁথে আছে আমাদের হৃদয়ে। কিন্তু করোনাভাইরাস আমাদের এই আবেগে চুড়ান্তভাবে আঘাত করেছে। এতে আক্রান্ত হওয়া মানেই পরিবারের সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। হোক না তা সাময়িক সময়ের জন্য। অসুস্থতার সময় প্রিয় মানুষের উপস্থিতি যেখানে জরুরি, সেখানে এই ভাইরাস বরং আলাদা করে দেয়। এখন এই যে জনে জনে আলাদা থাকার ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে, আসলে কয়টি পরিবারে এমন সম্ভব? প্রত্যেকের জন্য আলাদা ঘর, আলাদা বাথরুম সরবরাহ করার সুযোগ কয়টি পরিবারের আছে? আসলে দায়িত্বের খাতিরেই হোক কিংবা বাধ্য হয়েই হোক, করোনা আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে একই বাড়ি বা ঘরে থাকা এবং তার সেবা-শুশ্রূষা করা এখন খুবই স্বাভাবিক। অবশ্য মানুষের ভয়ও কমছে ধীরে ধীরে। তবে ভয় যতই কমুক কিংবা আক্রান্ত স্বজনের সেবায় আপনি যতই তাদের নিকটবর্তী হোন না কেন, ভাইরাসটির ভয়াবহতা কিন্তু অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বরং নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণের ফলে আরো সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে একই ঘরে থাকা এবং তাদের সেবা করার ক্ষেত্রে নিমোক্ত নির্দেশনাসমূহ অবশ্যই মেনে চলা জরুরি।
ভয় যতই কমুক কিংবা আক্রান্ত স্বজনের সেবায় আপনি যতই তাদের নিকটবর্তী হোন না কেন,
ভাইরাসটির ভয়াবহতা কিন্তু অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
একই সঙ্গে থাকার ক্ষেত্রে
- আক্রান্ত সদস্যের সঙ্গে একই কক্ষে থাকতে হলে সব সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। একই বিছানায় না ঘুমিয়ে ১ মিটার বা ৩ ফুট দূরত্ব রেখে মেঝেতে বা সোফায় ঘুমান।
- দূরত্বে শুয়েও কখনো মুখোমুখি থাকবেন না। উল্টোদিকে মুখ রেখে ঘুমাতে হবে।
- একই বাথরুম ব্যবহার করতে হলে সব সময় বাথরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। আক্রান্ত ব্যক্তি বাথরুম ব্যবহার করার পর জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। অন্তত বালতি, মগ, সাবান-শ্যাম্পু, তোয়ালে এসব জিনিস তার জন্য আলাদা করে দিন।
- ঘরে অবস্থান করার সময় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অন্যরা অবশ্যই মাস্ক, গ্লাভাস ব্যবহার করবেন।
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জামা কাপড়, বাসন-কোসন নিয়মিত সময় পরপর জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- ঘরের দরজার হাতলসহ ধাতব যেসব জিনিসে ভাইরাসটির উপস্থিতি থাকে সেসব জিনিস একটু পরপর পরিষ্কার করুন।
- ঘর থেকে বাড়তি আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলে ফাঁকা জায়গা বের করুন। ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।
- পরিবারের সব সদস্যই যাতে নিয়মিত হাত ধোয়া, নাকে মুখে হাত না দেওয়া প্রভৃতি স্বাস্থ্যবিধিসমূহ মেনে চলে সেটি নিশ্চিত করুন।
আক্রান্ত স্বজনের সেবা-যত্নের ক্ষেত্রে
বাড়িতেই হোক বা হাসপাতালেই হোক, আক্রান্ত স্বজনের সেবা-যত্নের জন্য পরিবারের একজনকে সব সময় থাকতেই হয়। রোগীর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নির্দেশনাবলি মেনে চলা আবশ্যক।
- পরিবারের অপেক্ষাকৃত তরুণ সদস্য, যার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো এবং স্বাস্থ্যগত দিক থেকে কোনো অসুবিধা নেই এমন সদস্যকে এই দায়িত্ব দিন।
- রোগীর সেবায় যিনি থাকবেন তিনি ত্রিস্তরীয় মাস্ক পরবেন, ঘনঘন হাত ধোবেন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পালন করবেন।
- কখনো হাঁপিয়ে উঠলে রোগীকে কিছুতেই বুঝতে দেবেন না।এমন অবস্থায় একাকী কোথাও শান্ত হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে শ্বাসক্রিয়া করুন। বুকভরে শ্বাস নিন, শ্বাস ছাড়ুন। ইতিবাচক চিন্তাগুলোকে প্রাধান্য দিন।
- রোগীর কক্ষ থেকে বেরিয়েই সাবান দিয়ে গোসল করে নেবেন।
- শরীরের সমস্ত জামা কাপড় সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন।
- সব সময় মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকবেন। আপনার মনের আনন্দ ও মনের জোর দেখে রোগী মনে সাহস পাবেন।
ডা. সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা
এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন)
এফআরসিপি (এডিন), এফএসিপি (আমেরিকা)
ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
চেম্বার: ল্যাবএইড লি: (ডায়গনস্টিক)