এ সময়ে চোখ ওঠা
-ডা. আনসারুল হক
জীবনে কখনো চোখ ওঠেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে কি? হয়তো না। আবার, পরিবারে একজনের চোখ উঠেছে, কিন্তু বাকিরা কেউ আক্রান্ত হয়নি, এমনও দেখা যায় না সচরাচর। শীতকালীন আবহাওয়ায় ও বসন্তের শুরুর দিকে চোখ ওঠা খুবই পরিচিত অসুখ। এ সময় প্রকৃতিতে আসে নানান পরিবর্তন। বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের রেণু, ধূলিকণা, পাখির পালক ইত্যাদি। বেড়ে যায় অ্যালার্জিসহ চোখের নানান রোগবালাই। চোখ উঠলে চিন্তার কিছু নেই। সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে চোখ ওঠা আপনিই ভালো হয়ে যায়। চোখ ওঠাকে বলা হয় কনজাংটিভাইটিস বা রেড আই। চোখের পর্দায় কনজাংটিভা প্রদাহের কারণে এটি হয়।
কনজাংটিভাইটিসের উপসর্গ
- চোখের নিচের অংশ ফুলে লাল হয়ে যাওয়া।
- চোখে ব্যথা।
- ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের দুই পাতা জোড়া লেগে থাকা।
- চোখের মণির চারপাশে হালকা লাল হয়ে থাকা।
- চোখ থেকে অনবরত পানি পড়তে থাকা।
- চোখে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি।
- চোখ থেকে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বের হতে পারে।
কনজাংটিভাইটিসে চোখের পানি ও ময়লা
পরিষ্কারে হাত ব্যবহার না করে তোয়ালে,
রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন।
যেভাবে ছড়ায় কনজাংটিভাইটিস
কুসংস্কার প্রচলিত আছে, চোখ ওঠা রোগীর চোখের দিকে তাকালেই চোখ ওঠে বা অন্যরাও আক্রান্ত হয়। এটি ঠিক নয়। তবে, চোখ ওঠা অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে ও সংক্রামক। চোখে ভাইরাসের কারণে প্রদাহ হলে চোখের পানিতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায়।
সরাসরি হাত দিয়ে চোখ স্পর্শ করলে বা এই পানি মুছলে ভাইরাস হাতে চলে আসে। সেই হাতে কোনো কিছু স্পর্শ করলে ভাইরাস সেখানেও সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত তোয়ালে-রুমাল, সানগ্লাস বা কাপড়-চোপড় ব্যবহারের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়াও কারও সঙ্গে করমর্দন, টিভি বা এসির রিমোট, বিছানার চাদর, বালিশ, মুঠোফোন ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কনজাংটিভাইটিস বায়ুবাহিত রোগ। এটি বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়।
এ সময়ে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি-
- কালো চশমা ব্যবহার করুন। এতে বাইরের ধুলাবালু ও বাহ্যিক আঘাত থেকে চোখকে রক্ষা করা যায়।
- চোখের পানি ও ময়লা মোছার ক্ষেত্রে হাত ব্যবহার করবেন না। আলাদা তোয়ালে বা রুমাল ব্যবহার করুন।
- সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। অপরিষ্কার কাপড় দিয়ে চোখ মুছবেন না।
- চোখের পাতা অতিরিক্ত ফুলে গেলে সে ক্ষেত্রে বরফ দেওয়া যেতে পারে।
- না ধুয়ে চোখে হাত দেবেন না।
- শিশুর চোখ উঠলে আলাদা বিছানায় শোয়াতে হবে।
- নিজের ব্যবহার করা প্রসাধনী সামগ্রী ও কাপড় অন্যকে ব্যবহার করতে দেবেন না এবং নিজেও অন্যেরটা ব্যবহার করবেন না।
- চোখ ঘষে চুলকানো যাবে না।
- অন্যের ব্যবহৃত আই ড্রপ বা অয়েনমেন্ট ব্যবহার করবেন না।
চোখ ওঠা মারাত্মক কোনো সমস্যা নয়। তবে, কর্নিয়ার প্রদাহ হলে, সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি মারাত্মকরূপ ধারণ করতে পারে। স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। তৈরি হতে পারে কর্নিয়া সংযোজনের মতো অবস্থা। করোনার এ সময়ে চোখ ওঠা নিয়ে আরো সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. আনসারুল হক
এমবিবিএস, ডিও, এফআরএফএ, ফেলো ভিট্রিও-রেটিনাল সার্জারি (ভারত)
চিফ-কনসালট্যান্ট
ভিট্রিও-রেটিনাল ও লেজার সার্ভিস
ল্যাবএইড আই সেন্টার, ঢাকা।