এ সময় ভাইরাল ফিভার
ঘটনা ১ : কয়েকদিন আগে অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎ বৃষ্টির কবলে পড়েন সেজান মাহমুদ। কাকভেজা হয়ে বাসায় ফেরেন সেদিন। বৃষ্টিতে ভেজার দুদিন পর থেকেই দেখা দিয়েছে জ্বর ও সর্দি। নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। একইসঙ্গে রয়েছে প্রচণ্ড শরীর ব্যথা।
ঘটনা ২ : পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া নুহাদ ও তার কলোনির বন্ধুরা প্রতিদিন বিকেলে মাঠে একসঙ্গে খেলাধুলা করে। খেলার মাঠ কলোনির ভেতরে হওয়ায় মায়েরাও নিশ্চিন্তে বাচ্চাদের খেলার সুযোগ দেন। নুহাদের বন্ধু তূর্য হঠাৎ সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় দুদিন খেলতে আসে না। পরপর আরো দুজন জ্বরে আক্রান্ত হলে নুহাদের মা তাকেও খেলতে যেতে নিষেধ করেন।
উপরের দুটি ঘটনাই ভাইরাল জ্বরের দিকে ইঙ্গিত করে। এই জ্বর বছরের যেকোনো সময় হতে পারে। তবে মৌসুম পরিবর্তনের সময় বেশি হতে দেখা যায়। ভাইরাল জ্বর সাধারণত ছোঁয়াচে হওয়ায় একসঙ্গে পরিবারের অনেকেই আক্রান্ত হতে পারে।
ভাইরাল জ্বর
বর্ষায় আবহাওয়ার তারতম্য দ্রুত ঘটে। কখনো সারাদিন গুমোট থেকে হঠাৎ বৃষ্টি আবার কখনো ঝকঝকে রোদ। প্রকৃতির পট পরিবর্তনের খেলার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় নানা রোগবালাই। এ সময় ঘরে ফেরার পথে একটু বৃষ্টিতে ভিজলে বা বেশিক্ষণ রোদে হাঁটলেই জ্বর আসে। আবার বাতাসে ধুলোবালির উপদ্রব তো আছেই। এসব কারণে বর্ষার এই সময়টাতে ঘরে ঘরে দেখা দেয় নানা ধরনের ভাইরাল জ্বর। বিভিন্ন ভাইরাসজনিত জীবাণুর সংক্রমণের কারণে ভাইরাল জ্বর হয়ে থাকে।
ভাইরাল জ্বরের উপসর্গ
- জ্বর।
- মাথাব্যথা।
- সর্দি-কাশি।
- বমিভাব বা বমি।
- ডায়রিয়া।
- নাক দিয়ে পানি পড়া।
- পেটব্যথা।
- গলাব্যথা।
- হাত-পায়ে তীব্র ব্যথা।
- খাবারে অরুচি বা ক্ষুধামান্দ্য।
- শুরুতে তীব্র হলেও সাত-আট দিনের মধ্যে জ্বর কমে যায়।
- জ্বরের মাত্রা বেশি হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
ভাইরাল জ্বরের কারণ
সাধারণত বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে ভাইরাল জ্বর দেখা দেয়। ভাইরাল জ্বরের জন্য দায়ী যেসব ভাইরাস—
- ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, বি, সি, ডি
- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস
- নরোভাইরাস
- অ্যাডেনোভাইরাস
- রোটাভাইরাস
- করোনাভাইরাস
চিকিৎসা ও পরামর্শ
দেহে ভাইরাস আক্রমণের কয়েক দিনের মধ্যেই জ্বর দেখা দেয়। জ্বরের কারণে শরীরে সারাক্ষণ শীত-শীত ভাব, মাথাব্যথা, নাক দিয়ে অঝোরে পানি পড়া, ঠান্ডা, সর্দিসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রে টাইপ ‘বি’ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে পেটব্যথাও হতে পারে। বাতাসের মাধ্যমে ও আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি থেকে ভাইরাস জ্বর হতে পারে। ঠান্ডা লাগলে বা বৃষ্টিতে ভিজলেও ভাইরাস জ্বরের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জ্বরের ধরন ও উপসর্গ দেখে ভাইরাল জ্বর নির্ণয় করা যায়। সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের মধ্যেই এই জ্বর সেরে যায়। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। এক সপ্তাহের বেশি সময় জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রোগীর মাথায় পানি দিয়ে, গা-হাত-পা মুছে দিতে হবে।
- এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক রাখতে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
- রোগীকে পরিপূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
- বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
- এ সময় ফলমূল খাওয়া যেতে পারে।
- গলাব্যথা ও সর্দি-কাশি দূর করতে আদা দিয়ে গরম চা খাওয়া যেতে পারে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না।
প্রতিকার
ভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর হলে দুশ্চিন্তার তেমন কারণ নেই। তবে জ্বর সাত দিনের বেশি সময় অতিক্রম করলে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, সাইনোসাইটিস, ডায়রিয়াসহ মস্তিষ্কের জটিলতা দেখা দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে জটিলতা আরো বেড়ে যেতে পারে। এসব জটিলতা এড়াতে শিশুকে যথাসময়ে মাম্পস, টিটেনাস, স্মল পক্স, চিকেন পক্স, পোলিও ও হেপাটাইটিসের টিকা দিয়ে নিতে হবে। যেহেতু এটি রোগীর হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, তাই আক্রান্ত রোগীকে অন্যদের থেকে কিছুটা দূরত্বে রাখতে হবে। বাসায় পোষা প্রাণী থাকলে তাদের নিয়মিত ভ্যাকসিন দিতে হবে।
ডা. সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা
এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন) এফআরসিপি (এডিন), এফএসিপি (আমেরিকা)
ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন)
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
চেম্বার : ল্যাবএইড লি. (ডায়াগনস্টিক)