ওমিক্রন: করোনাভাইরাসের নতুন ধরন কতটা ভয়, কী করবেন

অধ্যাপক ডা. রুবিনা ইয়াসমিন

করোনাভাইরাস নিয়ে জটিলতা কমছেই না। কিছুটা স্বাভাবিক হলেও কিছুদিন পরপরই নতুন নতুন ধরন আবিষ্কৃত হওয়ায় দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত হয়েছে ‘ওমিক্রন’ নামক আরেকটি ধরন। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েও পড়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। এদিকে শীতকালে বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগ-ব্যাধির পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকিও বেশি রয়েছে।

যে কারণে ওমিক্রন নিয়ে ভয়

• করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ধরন নিয়ে ভয় মূলত এদের মিউটেশনক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। ওমিক্রনের মিউটেশন ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি। ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনে এখনো পর্যন্ত ত্রিশের অধিক মিউটেশনের কথা জানা গেছে। যেখানে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন ছিল ১০টি, আলফা ভ্যারিয়েন্টে ১০টি এবং গামায় ১২টি।

• ওমিক্রন খুব দ্রুত ও সহজে ছড়াতে পারে।

• এটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা এড়াতে পারে।

• ওমিক্রনে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

• এখনো পর্যন্ত যে টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে তা এই ধরনটির বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হবে, সেটি নিশ্চিত নয়।

ওমিক্রন নিয়ে ভয়

তৃতীয় ডোজ
তথা বুস্টার
ডোজ নিন।
বুস্টার ডোজের
কার্যকারিতার
প্রমাণ পাওয়া
গেছে।

ওমিক্রনের উপসর্গ

ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের উপসর্গ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এর উপসর্গগুলো খুব একটা তীব্র নয় বরং মৃদু। যেমন-

• জ্বর
• শারীরিক ক্লান্তি
• মাথাব্যথা
• গায়ে ব্যথা
• গলাব্যথা

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়ার মতো ব্যাপার থাকে। কিন্তু ওমিক্রনের ক্ষেত্রে এমনটিও হচ্ছে না। তবে লক্ষণ যতই মৃদু হোক, ধরনটিকে নিরীহ বলার অবকাশ নেই। যত দ্রুত এটি রূপ বদলাচ্ছে, তাতে যেকোনো সময় চিত্র বদলে যেতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে মাঝারি থেকে গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণও এরই মধ্যে দেখা গেছে।

ওমিক্রনের মারণক্ষমতা কেমন

এখনো পর্যন্ত যতদূর জানা যাচ্ছে, ওমিক্রন ডেলটার মতো জীবনঘাতী নয়। এমনকি আক্রান্তদের অধিকাংশেরই হাসপাতালেও ভর্তি
হতে হয়নি।

করোনার তিন ঢেউ: তুলনামূলক পার্থক্য

করোনার তিন ঢেউ তুলনামূলক পার্থক্য

ওমিক্রন প্রতিরোধে কী করবেন

ওমিক্রন মোকাবেলায় এর মিউটেশন আটকানোই বড়ো চ্যালেঞ্জ। চিকিৎসাবিজ্ঞান যথাসাধ্য কাজ করছে বিষয়টি নিয়ে। তবে এর প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের সচেতনতার বিকল্প নেই। নিম্নোক্ত নির্দেশনা মেনে চলার মধ্য দিয়ে এর প্রকোপ ঠেকিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

টিকা নিন: যারা এখনো টিকা গ্রহণ করেননি, খুব দ্রুত তারা টিকা গ্রহণ করুন। যারা এর মধ্যে টিকার দুটো ডোজই নিয়েছেন, তারা তৃতীয় ডোজ তথা বুস্টার ডোজ নিয়ে নিন। বুস্টার ডোজের কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মেনে চলুন স্বাস্থ্যবিধি: ভিড় এড়িয়ে চলা, নিয়মিত বিরতিতে হাত ধোওয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন: দেহের ইমিউন সিস্টেম বাড়ানোর মাধ্যমে যেকোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব। তাই ব্রকলি, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, পালংশাক, আখরোট, গ্রিন টি প্রভৃতি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। দেহে যাতে পানির ঘাটতি তৈরি না হয়, সে জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

উৎফুল্ল থাকুন: মানসিক উদ্বেগ বিপদের কারণ হতে পারে। সব সময় মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকুন। চাপ এড়িয়ে চলুন, ছন্দময় জীবনযাপন করুন।

শরীরচর্চা ও কায়িক শ্রম: রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে শরীরচর্চার বিকল্প নেই। নিয়মিত শরীরচর্চা ও কায়িক শ্রমের মাধ্যমে শরীরকে সক্রিয় রাখুন।

নিয়মিত চেকআপ: দেহে কোনো অসঙ্গতি তৈরি হচ্ছে কি না, তা জানতে নিয়মিত চেকআপ করাবেন।


অধ্যাপক ডা. রুবিনা ইয়াসমিন

এফএসিপি, এফআরসিপি (এডিন)
এফসিপিএস (মেডিসিন)
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন বিভাগ
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা
চেম্বার: ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা।


সুখে অসুখে ম্যাগাজিন

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp