কন্টিনিউড জ্বর

কন্টিনিউড জ্বর: ঝুঁকি কতটা

স্কুল থেকে ফিরেই মায়ের কোলে বসে পড়ে রিফাত। মা কপালে হাত বুলিয়ে টের পান জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে ছেলে। তাৎক্ষণিক মাথায় পানি ঢালেন। তোয়ালে ভিজিয়ে শরীর মুছে দেন। কিন্তু কিছুতেই শরীরের তাপমাত্রা কমছে না। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তাপমাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছিল না রিফাতের।রোগীর শরীরের তাপমাত্রা যখন ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে তখন সেটিকে বলা হয় কন্টিনিউড জ্বর। এই জ্বরে তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠানামা করে না, আবার স্বাভাবিক অবস্থায়ও আসে না।

কন্টিনিউড জ্বর: ঝুঁকি কতটা

বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই জ্বর হতে পারে। সাধারণত তিনদিনের মধ্যেই আক্রান্ত রোগী সেরে ওঠেন। তবে রোগীর অন্যান্য জটিলতা থাকলে দুই সপ্তাহের মধ্যে আবার জ্বর ফিরে আসতে পারে। তিনদিনের মধ্যে তাপমাত্রা না কমলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

কন্টিনিউড জ্বরের কারণ

কন্টিনিউড জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা একদিন বা তার চেয়ে বেশি সময় একই অবস্থানে থাকে। কিছুতেই জ্বর কমে না। সধারণত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, প্রদাহজনিত রোগ যেমন— রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসসহ নানা কারণে এই জ্বর হতে পারে। এছাড়া আরো যেসব কারণে কন্টিনিউড জ্বর হতে পারে—

  • টাইফয়েড
  • নিউমোনিয়া
  • মেনিনজাইটিস
  • প্রস্রাবের সংক্রমণ
  • অতিরিক্ত তাপ
  • টিউমার
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কন্টিনিউড জ্বরের উপসর্গ

কন্টিনিউড জ্বর ও অন্যান্য জ্বরের মধ্যে দুয়েকটা ছাড়া বেশকিছু উপসর্গগত মিল রয়েছে। অন্যান্য জ্বরের মতো এই জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যেও সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট, খাবারে অরুচি হতে পারে। এছাড়া যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে—

  • একটানা তীব্র জ্বর।
  • তাপমাত্রা ১০৪° ফারেনহাইটের বেশি।
  • মাথাব্যথা থাকতে পারে।
  • পেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা।
  • পেটে ব্যথা।
  • দুর্বলতা।
  • কাঁপুনি দেখা দিতে পারে।
  • ক্লান্তি ও অবসাদ।
  • কখনো অবিরাম ঘাম হতে পারে।

কন্টিনিউড জ্বরে ঝুঁকি আছে কখন?

যদি ভাইরাসজনিত জ্বর হয় তাহলে সেটি তিন থেকে পাঁচ দিন, বড়োজোর সাত দিন থাকতে পারে। জ্বরের পাশাপাশি যদি নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা খুসখুস ও কাশি থাকে তাহলে ভাইরাস জ্বর হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

তাই অকারণে অস্থিরতার প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে জ্বর যদি এর বেশি স্থায়ী হয় এবং তাপমাত্রা কিছুতেই না কমে তাহলে ঝুঁকি আছে। জ্বরের সঙ্গে যদি নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

  • বমি
  • শ্বাসকষ্ট
  • বুকে ব্যথা
  • ফুসকুড়ি
  • গলাব্যথা বা গলা ফুলে যাওয়া
  • ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া

কন্টিনিউড জ্বরের চিকিৎসা

এ সময় আক্রান্ত রোগীকে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রচুর পানি, ফলের রস ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। সংক্রমিত অবস্থায় সব ধরনের সামাজিকতা এড়িয়ে চলা জরুরি। এতে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা এড়ানো যায়। সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট হিসাবে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। এতে জ্বরের পাশাপাশি ব্যথাও কমে। গলাব্যথা থাকলে লবণ ও গরম পানি দিয়ে গার্গল করা যেতে পারে। এছাড়া কুসুম গরম পানি, গরম স্যুপ, আদা ও লেবুর চা খেতে পারেন।

জ্বর তিনদিনের বেশি স্থায়ী হলে এবং তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না এলে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর ও সুষম খাবার রাখুন। নিয়মিত তাজা ফলমূল ও রঙিন শাকসবজি খান। শরীর সতেজ ও সুস্থ রাখতে প্রতিদিন শরীরচর্চা করুন। প্রচুর পানি পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলুন।


অধ্যাপক ডা. এস. এম. মোস্তফা জামান

অধ্যাপক ডা. এস.এম. মোস্তফা জামান

এমবিবিএস, ডিটিসিডি, এমডি (কার্ডিওলজি)
ফেলো-ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি
(ভারত, সিঙ্গাপুর ও জাপান)
হৃদরোগ, বাতজ্বর, বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি
বঙ্গন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল।


রাতের বেলা জ্বর

রাতে জ্বর হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। নানা কারণেই রাতে জ্বর হতে পারে। জ্বরজনিত উপাদান পাইরোগেনের কারণে রাতে জ্বর হতে পারে। মূত্রনালির সংক্রমণ, ত্বকের প্রদাহ, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ—প্রভৃতি কারণেও রাতে জ্বর হয়ে থাকে। ব্যাপারটি অবহেলা করা যাবে না। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। রাতের জ্বর বড়ো কোনো রোগের উপসর্গ হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share
WhatsApp