অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন
দীর্ঘদিন স্তব্ধ থাকার পর আবার স্বরূপে ফিরতে শুরু করেছে পৃথিবী। শপিংমল, পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। ফলে প্রতিটি স্থানে জনসমাগম যেমন বাড়ছে তেমনই যানবাহনগুলোতেও দেখা যাচ্ছে উপচেপড়া ভিড়। ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হলেও এখনো বেশিরভাগ মানুষই ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আসেনি। আবার ভ্যাকসিন নিলেই যে করোনাভাইরাস হতে শতভাগ নিরাপদ থাকা যাবে এ নিশ্চয়তাও দেওয়া যায় না। তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে যানবাহনে চলাচলের সময়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে।
ভ্যাকসিন নিলেই যে করোনাভাইরাস হতে শতভাগনিরাপদ থাকা যাবে এ নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
মাস্ক পরে থাকা
করোনাকালের শুরু থেকেই যে বিষয়টির ওপর সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে মাস্ক পরে থাকা। ঢাকা শহরের বাসগুলোতে এমনিতেই সবসময় উপচেপড়া ভিড় থাকে। চাইলেও বাসে উঠে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব হয় না। তাই যানবাহনে চলাচলের সময় কোনো অবস্থাতেই মুখ থেকে মাস্ক খোলা যাবে না। সবচেয়ে ভালো হয় যদি একসঙ্গে একাধিক মাস্ক ব্যবহার করা যায়।
যেখানে সেখানে হাত না দেওয়া
যানবাহনে চলাচলের সময় যেখানে সেখানে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গণপরিবহনে দাঁড়িয়ে চলাচলের সময় নিরাপত্তার স্বার্থে হাতল ধরতেই হয়। সেক্ষেত্রে ভালো হয় যদি এক হাতেই হাতলটি ধরে রাখা যায়। এছাড়া সিটে, জানালায় অহেতুক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। স্পর্শ করার পর হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
ভিড় বাসে না ওঠাই ভালো
ঢাকা শহরের বাসগুলোতে সবসময়ই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী থাকে। বাসে ঝুলে যাতায়াত করা কিংবা চাপাচাপি করে দাঁড়িয়ে থাকা যেন একটি নিয়মিত দৃশ্য হয়ে গেছে। তাই গণপরিবহনে ওঠার সময় একটু অপেক্ষা করতে হলেও চেষ্টা করুন অপেক্ষাকৃত কম ভিড়ওয়ালা বাসে উঠতে। অন্তত যদি বসার সুযোগ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে কিছুটা হলেও দূরত্ব মানা সম্ভব।
সুরক্ষা-সরঞ্জাম সঙ্গে রাখুন
যানবাহনে চলাচলের সময় ব্যাগে সুরক্ষা- সরঞ্জাম রাখুন। যাদের নিয়মিত গণপরিবহনে যাতায়াতের প্রয়োজন হয় তারা অবশ্যই সঙ্গে জীবাণুনাশক স্প্রে রাখবেন। কম খরচে বাড়িতেই জীবাণুনাশক স্প্রে প্রস্তুত করে নিতে পারেন। কিছু ধরার পূর্বে স্প্রে করে নিন। নাকে, মুখে, চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
গণপরিবহনে খোলা খাবার খাবেন না
হাতে করে বাদাম, বিভিন্ন ধরনের চিপস, ঝালমুড়ি, ইত্যাদি বিক্রি করা গণপরিবহনের একটি সাধারণ দৃশ্য। এ জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই খাবারগুলো এমনিতেই অস্বাস্থ্যকর। তার ওপর ভাইরাস ছড়ানোর একটা বড়ো মাধ্যমও বটে। আবার খাওয়ার সময় মাস্কও খোলার প্রয়োজন হয়। তাই গণপরিবহনের খোলা খাবার বা রাস্তার পাশের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ব্যাগে সবসময় খাবার পানি রাখুন।
কেবিনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে
অনেকে লঞ্চে বা ট্রেনের কেবিনে ভ্রমণ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে নিজস্ব একটি চাদর বা কাপড় সঙ্গে রাখা ভালো। আরো ভালো হয় যদি কেবিনের কোনো কিছু একদমই ব্যবহার না করা যায়। কেবিনে ঢোকার পর যতটা সম্ভব নিজ দায়িত্বে কেবিন জীবাণুমুক্ত করে নিন।
যানবাহনে আদবকায়দা মেনে চলুন
যানবাহনে চলাচলের সময় আদবকায়দা মেনে চলুন। হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখুন। যেখানে সেখানে কফ বা থুত কিংবা নিজের ব্যবহার করা রুমাল বা টিস্যু ফেলবেন না। সহযাত্রীদের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। নিজের ঠান্ডা লাগলে বা জ্বর হলে গণপরিবহনে উঠবেন না। ঘরে থাকার চেষ্টা করুন।

বিকল্প ব্যবস্থা
দৈনন্দিন যাতায়াতের ক্ষেত্রে বর্তমানে বাস বা গণপরিবহন ছাড়াও অনেক ধরনের রাইড সার্ভিস চালু আছে। যেমন উবার, পাঠাও, সহজ ইত্যাদি। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে এ ধরনের সেবা নিতে পারেন। তবে এ ধরনের রাইড সার্ভিস কিছুটা খরচ সাপেক্ষও। যদি সামর্থ্য থাকে তবে গণপরিবহন এড়িয়ে বিকল্প হিসেবে রাইড সার্ভিস নেওয়াই ভালো।

অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন
এমবিবিএস, এফসিসিপি, এফআরসিপি, পিএইচডি, এফসিপিএস
ফেলো পালমনোলজি স্লিপ মেডিকেল আইসিইউ (সিঙ্গাপুর)
মেডিসিন, বক্ষব্যাধি ও স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
প্রফেসর, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
চেম্বার: ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল