করোনায় আক্রান্তদের বাড়িতে বসে চিকিৎসা

ডা. ইসরাত জেরিন লিছা

ইয়ামিন হোসেন বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন। তার মা অসুস্থ। অসুস্থতার উপসর্গগুলো দেখে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বলেই মনে হচ্ছে। সর্দি, কাশি-জ্বর এমনকি গায়ে ব্যথাও আছে। ইয়ামিন বুঝতে পারছেন না, কী করবেন। হাসপাতালে নিয়ে যাবেন নাকি বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করাবেন! অবশ্য প্রাথমিকভাবে যা যা করা দরকার তা করছেন। ফ্ল্যাটে মায়ের ঘরটি আলাদা করেছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা করাচ্ছেন। ইয়ামিন হোসেনের মতো এই দুশ্চিন্তা এখন আমাদের সবার ভেতরই রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব নাকি বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করাব, তা বুঝে উঠতে পারি না। তবে আমরা চিকিৎসকরা মনে করছি, ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে পারেন। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। তা হচ্ছে, সংক্রমণ এড়াতে এই করোনাকালে বাড়িতে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা রাখা এবং বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে কিছ পদ্ধতি মেনে চলা।

৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ করোনা আক্রান্ত রোগী
বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে পারেন।

উপসর্গ লক্ষ রাখুন
এই করোনাকালে স্বাস্থ্যগত পরিবর্তনের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। শরীরে কোনো অসঙ্গতি বোধ করলে তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। উপসর্গ দেখে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মনে হলে জরুরিভিত্তিতে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে।

নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলুন
যদি আপনার মধ্যে কোভিড-১৯ এর এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে সন্দেহ হয় তাহলে অতিসত্বর নিজেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলুন।


অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিন
সাধারণত করোনাভাইরাস সংক্রমণের কয়েকটি স্তর থাকে। যেমন-

  • শুরুতে ভাইরাস নাকে বা গলায় আক্রমণ করে। বড় কোনো অসুবিধা এ সময় দেখা দেয় না। হালকা সর্দি কাশি বা গলা জ্বলার মতো অসুবিধা হতে পারে। এমন অবস্থায় ভিটামিন সি খাওয়া জরুরি।
  • এর পরের পর্যায়ে কাশি-জ্বর বাড়তে থাকে। দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা নড়বড়ে হয়ে যায়। ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। এ অবস্থায় ঘরে বসেই গরম পানির ভাপ নেওয়া, গার্গল করা, অক্সিমিটার দিয়ে আক্সিজেন লেভেল মনিটর করা দরকার।পাশাপাশি ভিটামিন এবং ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে থাকলে ধীরে ধীরে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবেন।
  • শেষ পর্যায়ে শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট।ফুসফুসের পাশাপাশি বৃক্ক, হৃদযন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেলে হাসপাতালে নিতে হবে।

পূর্বসতর্কতা ও পূর্বপ্রস্তুতি


টেস্ট সেন্টারের যোগাযোগ নম্বর রাখুন
দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে করোনাভাইরাসের টেস্ট করানো হচ্ছে। বেশকিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছে। তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন।


টেলিমেডিসিন সম্পর্কে ধারণা রাখুন
জটিলতা এবং ঝুঁকি এড়াতে ফোন কিংবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা নেওয়া অধিকতর নিরাপদ। অনেক প্রতিষ্ঠানই টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে রোগী এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের টেলিমেডিসিন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা জরুরি।

আলাদা কক্ষ প্রস্তুত রাখুন
আক্রান্ত রোগীর আইসোলেশনের জন্য বাড়িতে একটি আলাদা কক্ষ প্রস্তুত রাখুন। সেটি সম্ভব না হলে অন্তত একটু আলাদা ফাঁকা জায়গার ব্যবস্থা রাখবেন। বাথরুম, ওয়াশরুম সেই কক্ষসংলগ্ন হলে সবচেয়ে ভালো হয়।

বাড়িতে মজুত রাখুন
মাস্ক, স্যানিটাইজার,
প্যারাসিটামল,
ভিটামিন সি, ভিটামিন
ডি, অ্যান্টিবায়োটিক,
জিংক ট্যাবলেট,
ভেপার নেওয়ার
ক্যাপসুল,
অক্সিমিটার।

বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অক্সিজেন সিলিন্ডারের সেবা দিয়ে থাকে। তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন।


ডা. ইসরাত জেরিন লিছা
মেডিকেল অফিসার
পোস্ট কোভিড ওয়েলনেস সেন্টার
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা

LinkedIn
Share
WhatsApp