করোনা-টিকার আদ্যোপান্ত

ডা. এম সাইফুদ্দিন

বেশকিছুদিন হলো বাংলাদেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। টিকা গ্রহণকারীদের লাইন প্রতিদিন দীর্ঘতর হচ্ছে। এখনো বিপুল সংখ্যক নিবন্ধনকারী অপেক্ষা করছেন টিকা নেওয়ার জন্য। আবার প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। গবেষকরা মনে করেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও করোনা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে টিকা কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারে। তবে এখনো অনেকের মনে প্রশ্ন, করোনা প্রতিরোধে আবিষ্কৃত টিকাগুলো কি আসলেই কার্যকর? সত্যিই কি টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি শঙ্কামুক্ত? নাকি টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তির কাছ থেকেও করোনা ছড়াতে পারে? কারা টিকা নিতে পারবেন এবং কাদের নিষেধাজ্ঞা আছে? টিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে এই নিবন্ধে।

শরীরে পুরোপুরি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হওয়ার জন্য
ভ্যাকসিন গ্রহণের পরে অন্তত তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া উচিত।

টিকা সম্পর্কিত তথ্য এবং টিকার কার্যকারিতা

টিকা নিতে বাধা নেই যাদের

করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি
করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে টিকা গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আছে। কিংবা করোনা থেকে সম্প্রতি সুস্থ হয়েছেন এমন ব্যক্তিও টিকা নিতে পারবেন না। সুস্থ হওয়ার পর, অর্থাৎ করোনা নেগেটিভ আসার চার সপ্তাহ পর যদি অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতা না থাকে সেক্ষেত্রে টিকা নিতে কোনো অসুবিধা নেই।


হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি
সাধারণত যারা হৃদরোগে ভুগছেন কিংবা যাদের হার্টের কোনো অপারেশন হয়েছে, বাইপাস সার্জারি হয়েছে, হার্টে রিং কিংবা পেসমেকার বসানো আছে তাদের ক্ষেত্রে টিকা নিতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে টিকা নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


গর্ভবতী নারী ও সন্তানকে দুগ্ধদান করছেন এমন নারী
করোনা পরিস্থিতিতে মা ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য গর্ভবতী নারীর টিকা নেওয়া আবশ্যক। তবে অবশ্যই ১৩ থেকে ৩৪ সপ্তাহের মধ্যে নিতে হবে। যদি গর্ভবতী মায়ের কোনো জটিল রোগ থাকে সেক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গবেষকরা মনে করেন, সন্তানকে দুগ্ধদানকারী নারী টিকা গ্রহণ করলে মায়ের বুকের মাধ্যমে শিশুর শরীরেও অ্যান্টিবডি চলে যায়। তাই সদ্য মা হয়েছেন কিংবা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের টিকা নেওয়ার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।


লিভারের অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তি
লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, ফ্যাটি লিভারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের টিকা নিতে কোনো বাধা নেই। তবে জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে টিকা গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


কিডনি রোগী
চিকিৎসকের পরামর্শ সাপেক্ষে কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি টিকা নিতে পারবেন। এমনকি কিডনি ডায়ালাইসিস চলছে কিংবা কিডনি অপারেশন হয়েছে এমন ব্যক্তিও টিকা নিতে পারবেন।

যাদের এলার্জিজনিত সমস্যা আছে
যাদের এলার্জিজনিত সমস্যা আছে তাদের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের ক্ষেত্রে
যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ আছে তাদের টিকা গ্রহণে কোনো বাধা নেই। কিন্তু ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চরক্তচাপ যদি অনিয়ন্ত্রিত হয় সেক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণে এনে তারপর টিকা নিতে হবে।

যারা টিকা নিতে পারবেন না

  • করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সম্প্রতি করোনা হতে সেরে উঠেছেন যারা।
  • যাদের রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা আছে তারা টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন।
  • হাসপাতালে ভর্তি থাকা ব্যক্তি কিংবা যাদের জটিল কোনো রোগের চিকিৎসা চলছে।
  • অন্য কোনো রোগের জন্য সম্প্রতি (২ সপ্তাহের কম) টিকা নিয়েছেন।
  • ১৮ বছরের কমবয়সী ব্যক্তি।

টিকা গ্রহণকারী করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি না
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত পাঁচটি টিকা করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর হলেও কোনো টিকাই শতভাগ কার্যকর নয়। তবে হ্যাঁ, টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের থেকে কম। আক্রান্ত হলেও অন্যদের তুলনায় স্বাস্থ্যঝুঁকি কম। তাছাড়া ভ্যাকসিনের প্রতিরোধক্ষমতার কারণে এই রোগটিতে কেউ আক্রান্ত হলেও গুরুতর অসুস্থ হোন না। অর্থাৎ ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পরও দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার নিজে সুস্থ থেকেও টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি অন্যদের মাঝে সংক্রমণ ছড়াতে পারেন। এছাড়া টিকা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিকা গ্রহণকারীদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, যেমন- সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা, মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ইত্যাদির ব্যাপারে এক ধরনের গা ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। এভাবে সামান্য অসচেতনতায়ও তিনি অন্যদের সংক্রমিত করতে পারেন। হতে পারেন করোনাভাইরাসের অন্যতম বাহক।

এছাড়া টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের ভেতরও কেউ আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। শরীরে পুরোপুরি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হওয়ার জন্য ভ্যাকসিন গ্রহণের পরে অন্তত তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া উচিত। কেউ ভ্যাকসিনের দুই ডোজ নেওয়ার পরও অন্যকে সংক্রমিত করতে পারেন। এভাবে টিকাগ্রহণকারীদের মাধ্যমেও সংক্রমণের যে প্রক্রিয়া সেটি অব্যাহত থাকতে পারে।


ডা. এম সাইফুদ্দিন
এমবিবিএস (ডিএমসি), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফসিপিএস (মেডিসিন)
এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি) বারডেম, এফআরসিপি (আয়ারল্যান্ড),
এফআরসিপি (গ্লাসগো), এফআরসিপি (এডিনবার্গ),
এফএসিই (ইউএসএ), এফএসিপি (ইউএসএ), এফআরএসএম (ইউকে)
ট্রেনিং ইন অ্যাডভ্যান্স এন্ডোক্রাইনোলজি (সিঙ্গাপুর, মায়ো ক্লিনিক ইউএসএ)
ফেলোশিপ ট্রেনিং (হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল)
এসোসিয়েট প্রফেসর (ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রাইনোলজি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ
ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হরমোন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

LinkedIn
Share
WhatsApp