ক্যানসার সার্জারি

ক্যানসার চিকিৎসার অন্যতম প্রাচীন পদ্ধতি হচ্ছে সার্জারি। এই পদ্ধতিতে অপারেশনের মাধ্যমে শরীরের আক্রান্ত অংশ হতে ক্যানসার বা টিউমার অপসারণ করা হয়। প্রায় সবধরনের ক্যানসারের জন্য ক্যানসার সার্জারি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতি।

সার্জারি কেন করা হয়?

  • ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য।
  • ক্যানসার অপসারণের জন্য।
  • ক্যানসারটি কতদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এবং শরীরের অন্য কোনো অংশকে আক্রান্ত করেছে কিনা সেটি নিশ্চিত হতে।

গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় সার্জারি

ডায়াগনস্টিক সার্জারি: ডায়াগনস্টিক সার্জারিকে সার্জিক্যাল বায়োপসিও বলা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে চিকিৎসক শরীরে ক্যানসার আক্রান্ত টিস্যু এবং আক্রান্ত হতে পারে এমন সব টিস্যু অপসারণ করে থাকেন।

প্রাইমারি অর কিউরেটিভ সার্জারি: এটি ক্যানসার চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সার্জারি। এ পদ্ধতিতে টিউমার এবং এর আশপাশের টিস্যুগুলো অপসারণ করা হয়।

স্টেজিং: টিউমারটির আকার এবং ক্যানসার কতদূর পর্যন্ত ছড়িয়েছে সেটা জানতে এ ধরনের সার্জারি ব্যবহার করা হয়। ক্যানসার অপসারণের পাশাপাশি আক্রান্ত অংশের আশেপাশে কিছু লিম্ফনোড অপসারণ করে ক্যানসারের বিস্তার সম্পর্কে নিশ্চিত হতে এ সার্জারি করা হয়ে থাকে।

ডিবাল্কিং: অনেক সময় টিউমার অপসারণে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক পুরো টিউমারটি অপসারণ না করে এর কিছু অংশ ফেলে দেন।

প্রায় সবধরনের ক্যানসারের জন্য ক্যানসার সার্জারি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতি।

অ্যান্ডোস্কোপি: এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো পরীক্ষার জন্য ডাক্তার একটি পাতলা টিউবের মাধ্যমে শরীরে আলো ও ক্যামেরা প্রবেশ করান। যন্ত্রটিকে বলা হয় অ্যান্ডোস্কোপ। অনেকসময় মুখ, যৌনাঙ্গ বা মলদ্বারের মাধ্যমেও প্রবেশ করানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি আক্রান্ত পেশি বা কোষগুলোও অপসারণ করা হয়ে থাকে।

প্যালিয়েশন সার্জারি: এর মাধ্যমে টিউমারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা হয়। যেমন- এটি টিউমারের কারণে স্নায়ু, মেরুদন্ড বা অন্ত্রে সৃষ্ট ব্যথা ও জটিলতা দূর করে থাকে, শরীরের অন্যান্য অংশের ব্যথা হতে উপশম দেয়, ক্যানসারের কারণে সৃষ্ট রক্তপাত বন্ধ করে, যেসব ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্যগ্রহণে অসুবিধা হয় তাদের খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহের জন্য পাকস্থলিতে ফিডিং টিউব লাগানো হয়।

ল্যাপারোস্কপিক-মেডিয়াস্টিনোস্কোপি-থোরাস্কোপোকি সার্জারি: ল্যাপারোস্কপিক শব্দটি দ্বারা পেটের ছোটো একধরনের অপারেশনকে বোঝায়। মেডিয়াস্টিস্কোপিক ও থোরোস্কোপিকও একই ধরনের অপারেশন, তবে এটি বুকে করা হয়। এ ধরনের সার্জারিতে ক্যামেরাযুক্ত ছোট যন্ত্র ব্যবহার করে শরীরে ছোটো ছিদ্র করে টিউমার কিংবা আক্রান্ত টিস্যু অপসারণ করা হয়।

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এখন কোনো প্রকার কাটাছেঁড়া ছাড়াও ক্যানসার সার্জারি করা হচ্ছে। এ ধরনের কয়েকটি পদ্ধতি হচ্ছে-

ক্রায়োসার্জারি: নাইট্রোজেন অথবা আর্গন গ্যাসের মাধ্যমে সৃষ্ট অস্বাভাবিক ঠান্ডা দ্বারা ক্যান্সার আক্রান্ত টিস্যু বা টিউমারটি অপসারণ করাই হলো ক্রায়োসার্জারি। সাধারণত ত্বকের ক্যানসার, রেটিনেব্লাস্টোমা ও জরায়ু ক্যানসারের চিকিৎসায় এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

হাইপারথার্মিয়া: এ পদ্ধতিতে উচ্চতাপমাত্রা ব্যবহার করে টিউমার বা ক্যানসার আক্রান্ত টিস্যু অপসারণ করা হয়।

ফটোডাইনামিক থেরাপি: ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে এ চিকিৎসা করা হয়। ওষুধগুলো বিশেষ একধরনের আলোর সংস্পর্শে এসে বিক্রিয়া করে এবং আক্রান্ত কোষগুলি ধ্বংস করে।

কাদের সার্জারি প্রয়োজন


ক্যানসারে আক্রান্ত অনেকেরই সার্জারির প্রয়োজন হয়। তবে টিউমারজনিত ক্ষেত্রে সার্জারি সবচেয়ে কার্যকর ভ‚মিকা রাখে। লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যানসার কিংবা ক্যানসার ইতোমধ্যে ছড়িয়ে গেছে এমন ক্ষেত্রে সার্জারি বা অস্ত্রোপচার খুব একটা কার্যকর হয় না।


ডা. মোঃ সায়েফউল্লাহ
এমবিবিএস, এফসিপিএস (সার্জারি)
সহকারী অধ্যাপক
স্যার সলিমুলাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল জেনারেল, লেপারোস্কোপিক, কলোরেকটাল ও
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সার্জন
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp