ঘরেই করুন শরীরচর্চা
-ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার
ব্যস্ত জীবন আমাদের। সবদিক সামলে যে একটু নিজের শরীরের দিকে নজর দেব, মেলে না সেই সুযোগ। প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করার অবকাশ থাকে না অনেকেরই। ব্যায়ামাগার বা জিমে যাওয়া তো আরো কঠিন। কিন্তু রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি ও সুস্থ জীবনের জন্য শরীরচর্চা অপরিহার্য। তাহলে এই ব্যস্ততার সঙ্গে ব্যায়ামের সমন্বয় করা যেতে পারে কীভাবে? না, ভাবনার কিছু নেই। ঘরে বসেই করা যায়, শরীরচর্চার এমন কিছু কৌশল জেনে নিন। তারপর একটি সময় নির্ধারণ করে প্রতিদিন সেই নির্দিষ্ট সময়ে শরীরচর্চা করুন।
পুশ-আপ: এটি সবেচেয়ে পরিচিত ও কার্যকর একটি ব্যায়াম। এতে সারা শরীরের মাংসপেশির ওপর চাপ পড়ে। ফলে শরীর গঠনে এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবাই এটি করতে পারেন।
যেভাবে করবেন: এটি করতে কোনো সরঞ্জাম লাগে না। প্রন পজিশন বা উপুড় হয়ে শুয়ে শরীরের ভারসাম্য দুহাত ও পায়ের পাতার ওপর রেখে পুরো শরীর ওঠানামা করবেন। তবে হিপ উঁচু করা যাবে না।
স্কোয়াট: থাই, ঊরু বা নিতম্বের মেদ কমাতে এই ব্যায়াম খুব কার্যকর। এতে পায়ের জোর বাড়ে।
যেভাবে করবেন: ম্যাটের ওপর দাঁড়ান। এরপর চেয়ারে বসার মতো ভঙ্গি করে মেঝেতে বসুন-উঠুন। এ ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব হাঁটু ভাঁজ করবেন। অন্তত ১০ থেকে ১৫ বার এমন করুন।
প্লাংক: পেটের চর্বি কমাতে প্লাংক সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। কোমরের ব্যথা থাকলে উপকার পাওয়া যায়। মেরুদণ্ড মজবুত করে। হজমশক্তি বাড়াতেও বেশ ভূমিকা রাখেএটি।
যেভাবে করবেন: কনুই আর দুই পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে শরীরটাকে শূন্যে রাখুন। লক্ষ রাখবেন, শরীর যেন মাটির সঙ্গে সমান্তরালভাবে থাকে। কোমর সোজা রাখতে হবে। যতক্ষণ সম্ভব এভাবে থাকুন।
ক্রাঞ্চ: মেদহীন পেট ও কোমর পেতে ক্রাঞ্চ খুব কার্যকর ব্যায়াম। কেবল তা-ই নয়, এটি কোর পেশিগুলোকেও শক্তিশালী করে।
যেভাবে করবেন: মেঝেতে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাঁটু ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে নিন। দুই হাত রাখুন মাথার পেছনে। এবার পেটের নিচের অংশকে মেঝের দিকে চেপে ধরে কাঁধকে কিছুটা উপরে তুলে ধরুন। এভাবে তলপেটে চাপ সৃষ্টি করুন। ১০ থেকে ১৫ বার এমন করুন।
স্ট্যান্ড জগিং: এর পুরো শরীরের ব্যায়াম হয়। ফলে সারা শরীরের মেদ ঝরাতে এটি খুব জনপ্রিয়।
যেভাবে করবেন: এর জন্য কোনো যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ধীরলয়ে বা দ্রুতলয়ে জগিং করার মতো করুন।
স্কিপিং বা দড়িলাফ: এটি মূলত একটি খেলা। তবে ব্যায়াম হিসেবেও দারুণ উপকারী। দড়িলাফ গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ক্যালরি ক্ষয় হয়। হৃদ্যন্ত্রকে ভালো রাখে।
যেভাবে করবেন: এটি কীভাবে করতে হবে, তা মনে হয় বলে দেওয়ার দরকার নেই। ছোটোবেলা থেকেই আমরা কমবেশি এর সঙ্গে পরিচিত। তবে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন। ধীরেসুস্থে স্কিপিং করবেন। তড়িঘড়ি করবেন না। এক হাতে চাপ নেবেন না। দুই হাত সমানভাবে নিয়ে লাফাবেন।
সতর্কতা
- যাদের হাঁটুব্যথা আছে বা হাড়ে সমস্যা আছে, তারা এটি করবেন না।
- মেয়েরা মাসিক ও গর্ভকালে স্কিপিং করবেন না।
লেগ লিফটস: এই ব্যায়ামটি তলপেট ও হাঁটুর চর্বি কমায়। হাঁটুর ব্যথা হ্রাস করে। পেটের পেশি গঠনে সাহায্য করে। পেশির সহনশীলতা বাড়ায়। দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করতে হয় যাদের, তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী।
যেভাবে করবেন: মেঝেতে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। যতদূর সম্ভব পা সোজা রেখে ৯০ ডিগ্রি অ্যাংগেলে ওপরের দিকে তুলুন। ধীরে ধীরে নামিয়ে নিন। এরপর একই রকমভাবে অন্য পা-ও তুলুন ও নামান।
ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার
ব্যবস্থাপক
মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স
ল্যাবএইড হাসপাতাল