জ্বর কি কোনো রোগ? জ্বরে যেসব পরীক্ষা জরুরি
জ্বর কি কোনো রোগ? জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, বরং জ্বরকে শরীরের ভেতর কোনো রোগের সতর্কবার্তা বলা যেতে পারে। এটি কখনো হতে পারে সর্দি-কাশির মতো সংক্রমণের কারণে। আবার কখনো হতে পারে অন্য কোনো রোগের উপসর্গ। জ্বরের আছে নানা রকমফের। অনেকের প্রায়ই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। আবার কারো কারো গায়ে সবসময় হালকা জ্বর থাকে। জ্বরের মাত্রা ও ধরন বহু রোগের দিকে নির্দেশ করে।
বলা হয়, আমাদের শরীরের ভেতর যখন কোনো জীবাণু আক্রমণ করে সেটি ঠেকাতে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বিভিন্ন কোষ থেকে পাইরোজেন নামক একধরনের পদার্থ নিঃসরণ করে। এটি দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। তাই এ সময় শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে জ্বরের অনুভূতি হয়।
সাধারণ জ্বরের উপসর্গ

শরীরের যেকোনো সংক্রমণ বা প্রদাহের বিপরীতে জ্বর প্রথম প্রতিরোধব্যবস্থা। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬° ফারেনহাইট। তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন তাকে জ্বর বলা হয়।
সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ৯৯° থেকে ১০০° ফারেনহাইটের মধ্যে থাকলে সেটি অল্প জ্বর। এরচেয়ে বেশি হলে তীব্র জ্বর।
অতিরিক্ত জ্বর শরীরকে দুর্বল করে ফেলে। সাধারণ জ্বরের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ওঠা-নামা করার পাশাপাশি আরো যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে—
শরীরের যেকোনো সংক্রমণ বা প্রদাহের বিপরীতে জ্বর প্রথম প্রতিরোধব্যবস্থা। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬° ফারেনহাইট। তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন তাকে জ্বর বলা হয়।
সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ৯৯° থেকে ১০০° ফারেনহাইটের মধ্যে থাকলে সেটি অল্প জ্বর। এরচেয়ে বেশি হলে তীব্র জ্বর।
অতিরিক্ত জ্বর শরীরকে দুর্বল করে ফেলে। সাধারণ জ্বরের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ওঠা-নামা করার পাশাপাশি আরো যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে—
- দুর্বলতা
- হাঁচি ও কাশি
- মাথাব্যথা
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- মাংসপেশিতে ব্যথা
- ক্ষুধামান্দ্য
- বিরক্তি ও অবসাদ
যেসব কারণে জ্বর হতে পারে
বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, হিট স্ট্রোক, ম্যালেরিয়া থেকে শুরু করে নানা কারণে জ্বর হতে পারে। এছাড়া ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, সাধারণ ফ্লু এ ধরনের জ্বর ভাইরাসের সংক্রমণ ও ঋতু পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। ভাইরাল জ্বর সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। তবে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া হলে সহজেই নিষ্কৃতি মেলে না। আরো যেসব কারণে জ্বর হতে পারে—
- রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস থাকলে
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হলে
- পিরিয়ডের কারণে
- টিকা নিলে
- আকস্মিক ভয় বা মানসিক আঘাত পেলে
- সাইনাস ইনফেকশন হলে
আবার কিছু জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবেও জ্বর হতে পারে। যেমন— বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, মস্তিষ্কের প্রদাহ, টাইফয়েড, রক্তনালির প্রদাহ, অ্যাকজিমা, সেলুলাইটিস, এসএলই, আইটিপি ইত্যাদি।
জ্বর হলে অবহেলা না করে
দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ
নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা
করিয়ে নিতে হবে।
জ্বর হলে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা জরুরি
সাধারণত জ্বরের ধরন ও উপসর্গ বুঝে এর পরীক্ষা করাতে হয়। বিভিন্ন ধরনের জ্বরের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণ সর্দিজ্বর হলে সেটি সহজেই ভালো হয়ে যায়। তবে একটানা তীব্র জ্বর হলে এবং রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিম্নবর্ণিত পরীক্ষাগুলো করিয়ে নিন।
কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি):
ব্লাড সেল টাইপ ও ব্লাড সেল কাউন্ট জানার পরীক্ষা সিবিসি। জ্বর হওয়ার পরপরই পরীক্ষাটি করা জরুরি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর ব্লাড সেল স্বাভাবিক আছে কি না, কোনো ইনফেকশন আছে কি না, রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কত ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। ডেঙ্গুজ্বর হলে অনেকসময় রক্তে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার সংখ্যা কমে যায়।

এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্লাটিলেট কাউন্ট ছাড়াও রক্তের শ্বেতকণিকা, হেমাটোক্রিট বা এইচটিসি (লোহিত কণিকার সঙ্গে রক্তের পরিমাণের অনুপাত) সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
এনএস ওয়ান অ্যান্টিজেন
সাধারণত ডেঙ্গুজ্বর ধারণা করা হলে Nonstructural Protein 1 বা NS1 অ্যান্টিজেন পরীক্ষাটি করা হয়। জ্বরের উপসর্গ দেখা দেওয়ার কয়েক মিনিট থেকে তিনদিন পর্যন্ত শরীরে এই অ্যান্টিজেন পাওয়া যায়। তিনদিন পর পরীক্ষাটি করলে খুব একটা লাভ হয় না। তাই জ্বর হওয়ার প্রথম দিনই পরীক্ষাটি করিয়ে নেওয়া ভালো।
অ্যান্টিবডি (আইজিএম, আইজিজি)
রোগীর শরীরে ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি উপস্থিত আছে কি না তা বুঝতে অ্যান্টিবডি Immunoglobulin M (IgM), Immunoglobulin G (IgG) পরীক্ষা করা হয়। ডেঙ্গুজ্বরে মোটামুটি সাত থেকে দশ দিনের একটা চক্র চলতে থাকে। জ্বর পাঁচদিন স্থায়ী হলে ষষ্ঠ দিনে এই পরীক্ষাটি করাতে হয়। রক্তে আইজিএম পজিটিভ থাকলে বুঝতে হবে বর্তমানে রোগীর সংক্রমণ রয়েছে। আইজিজি পজিটিভ থাকলে বুঝতে হবে আগে রোগীর সংক্রমণ ছিল এবং দ্বিতীয়বারের তিনি মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। সেক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে।
ব্লাড কালচার
টাইফয়েড জ্বরের ক্ষেত্রে ব্লাড কালচার নামক একধরনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। সাধারণত টাইফয়েড দ্রুত শনাক্ত করতে এটি করা হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া নমুনায় স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেলে টাইফয়েড নির্ধারণ করা যায়। টাইফয়েডের অনুরূপ আরেকটি জ্বর-প্যারারাটাইফয়েড। প্যারাটাইফয়েড সম্পর্কে নিশ্চিত হতে জ্বর হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্লাড কালচার পরীক্ষ করা হয়।
ইউরিন বা প্রস্রাব কালচার
অনেকসময় প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণে জ্বর হয়। কিডনি, ইউরেটার, ইউরিনারি ব্লাডার, ইউরেথ্রা ও প্রস্টেটের ইনফেকশনের কারণে প্রস্রাবে পাস সেল বেশি পাওয়া যায়। এই সমস্যাকে ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন বা সংক্ষেপে ইউটিআই বলা হয়। এই সেল শনাক্ত করতে প্রস্রাব কালচার পরীক্ষাটির প্রয়োজন হয়।
উপরোক্ত পরীক্ষাগুলো ছাড়াও প্রয়োজনীয় আরো পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। জ্বরের ধরন, ইতিহাস, উপসর্গ, স্থায়িত্ব প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ও পরবর্তী চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। সাধারণ ফ্লু থেকে যেমন জ্বর হতে পারে তেমনি বড়ো কোনো অসুখের কারণেও জ্বর হতে পারে। তাই জ্বর হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হবে।

ডা. সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা
এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন) এফআরসিপি (এডিন), এফএসিপি (আমেরিকা)
ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন)
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
চেম্বার: ল্যাবএইড লি. (ডায়াগনস্টিক)