টাইফয়েড

টাইফয়েড নাকি প্যারাটাইফয়েড?

টাইফয়েড নাকি প্যারাটাইফয়েড: শফিক হাসান একজন বেসরকারি চাকুরিজীবী। অফিস থেকে বাসার দূরত্ব বেশি হওয়ায় প্রায়ই সকালের নাস্তা হোটেল থেকে অফিসে আনিয়ে সারেন। দুপুরের খাবারেও করেন বেশ অবহেলা। অধিকাংশ সময়ই অফিসের কাছের একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খান।

হোটেলের পরিবেশ খুব স্বাস্থ্যকর না হলেও সময় ও খরচ বাঁচাতে সেখানেই নিয়মিত খান তিনি। কয়েকদিন যাবৎ জ্বরে ভুগছেন। শুরুর দিকে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলেও ইদানীং দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া। সারাক্ষণ বমিভাব ও দুর্বলতা বোধ করায় কাজেও ঠিকমতো মন বসাতে পারছেন না। চিকিৎসকের পরামর্শমতো রক্তের নমুনা পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন প্যারাটাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।

টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডের পার্থক্য

টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড দুটো রোগই পানির মাধ্যমে ছড়ায়। টাইফয়েডের জন্য স্যালমোনেলা টাইফি ও প্যারাটাইফয়েডের জন্য প্যারাটাইফি নামের ব্যাকটেরিয়া দায়ী। সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও দূষিত পানি পানের মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। দেখা দেয় জ্বর, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও অন্যান্য উপসর্গ।

প্যারাটাইফয়েড ও টাইফয়েডের উপসর্গগত মিল থাকলেও প্যারা- টাইফয়েডের স্থায়িত্ব ও জটিলতা টাইফয়েডের তুলনায় কম। টাইফয়েড জটিল আকার ধারণ করলে অনেকসময় খাদ্যনালির ভেতরে রক্তক্ষরণ ও খাদ্যনালি ছিদ্র হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর অবস্থা তৈরি হতে পারে। তবে প্যারাটাইফয়েডে এ ধরনের আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

টাইফয়েডের উপসর্গ

টাইফয়েড

টাইফয়েডে প্রথম দিকে হালকা জ্বর, বমি ভাব, অরুচি ও পেটব্যথা থাকে। ধীরে ধীরে জ্বর বাড়তে থাকে। তাপমাত্রা সহজে কমে না। প্রথম দিকে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলেও পরে পাতলা পায়খানা হতে পারে। সপ্তাহ শেষে অতিরিক্ত ক্লান্তি, কাশি, পেট ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে—

  • মাথাব্যথা
  • ডায়রিয়া
  • ক্ষুধামান্দ্য
  • পেট ও পিঠে ফুসকুড়ি
  • কথাবার্তায় অসংগতি

টাইফয়েডের চিকিৎসা

টাইফয়েডের উপসর্গ প্রকাশের পরপরই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। টাইফয়েড নাকি প্যারাটাইফয়েড তা নিশ্চিত হতে প্রথমেই রক্তের কালচার পরীক্ষা করাতে হবে। শরীরে এই রোগের জীবাণু পাওয়া গেলে ১০ থেকে ১৪ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন শুরু করার পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

টাইফয়েড

এ সময় চিকিৎসক যতদিন অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের পরামর্শ দেবেন ততদিন পর্যন্ত অবশ্যই ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। অনেকসময় দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে বা ওষুধ খাওয়ার পরেও জ্বর না কমলে টাইফয়েড জটিল আকার ধারণ করতে পারে। টাইফয়েড বা প্যারাটাইফয়েডে আক্রান্ত হলে জ্বর ও ডায়রিয়ার কারণে শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়।

এ সময় শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি জোগাতে রোগীকে প্রচুর তরল ও ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। জ্বর বেশি থাকলে শরীর বারবার মুছে দিতে হবে।

সচেতনতা ও প্রতিরোধ

টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডের জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তির মল ও অপরিষ্কার হাতের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়ায়। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, বিশুদ্ধ পানি পান, পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে এটি এড়িয়ে চলা যায়।

  • অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রচুর পানি পান করুন ও তরল খাবার খান।
  • শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
  • বাসি খাবার খাবেন না। বাড়িতে রান্না করা খাবার ঢেকে রাখুন। ভালোভাবে সেদ্ধ করা খাবার খান।
  • বাইরের খোলা খাবার, শরবত, লাচ্ছি বা পানি পানের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
  • মলত্যাগের পর ও খাবার খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে নিন।
  • শিশুর মলমূত্র ও পোশাক পরিষ্কার রাখুন।
টাইফয়েড

ডা. এফ. এম. সিদ্দিকী


অধ্যাপক ডা. এফ. এম. সিদ্দিকী

এএমবিবিএস, এফসিপিএস,এফএসিপি (ইউএসএ), এফআরসিপি
মেডিসিন ও বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp