ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ
বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে কিডনি বিকল হবার প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। আর এ ডায়াবেটিস বর্তমানে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে মহামারির মত বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এমন কোন পরিবার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যে পরিবারে ডায়াবেটিস রোগী নেই। বাংলাদেশে বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি আশাতীতভাবে লোপ পাওয়ায় মানুষের গড় আয়ু অনেকাংশে বেড়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটিরও অধিক লোক কোন না কোন কিডনি রোগে আক্রান্ত । আর কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ঘন্টায় ৫ জন লোক অকালে মৃত্যুবরণ করছে। কিডনি অকেজো রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে ডায়ালাইসিসের মত ব্যয়বহুল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কোন কারণে ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে সে মৃত্যুবরণ করে। এমন একটি ঘাতকব্যাধির ক্ষেত্রে তাই রোগ প্রতিরোধ করাটাই হবে লক্ষ্য।
আসুন ডায়াবেটিস ছাড়া আর কি কি কারণে কিডনি অকেজো হয় তা জেনে নেই-
১. উচ্চ রক্তচাপ
২. নেফ্রাইটিস
৩. বংশগত কিডনি রোগ
৪. কিডনি পাথরের সমস্যা
৫. বারবার কিডনিতে সংক্রমণ
৬. বিভিন্ন ওষুধপত্রের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
কি করে বুঝবেন?
মজার ব্যাপার হল শতকরা ৮০ শতাংশ কিডনি রোগী বুঝতেই পারেন না যে তাদের কিডনি অকেজো হয়েছে। যখন বুঝতে পারেন তখন তাদের দুটো কিডনিই শতকরা ৭০ ভাগই নষ্ট হয়ে যায়। তাই কিডনি রোগকে বলা হয় নিরব ঘাতক। তারপরও কিডনি রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে:-
- পায়ে পানি আসা
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- বমি বমি ভাব লাগা এমন কি অনবরত বমি হওয়া
- শারীরিক দুর্বলতা ও অবসন্নতা
- শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
- দিনের তুলনায় রাতে প্রস্রাব বেশি হওয়া
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
যেহেতু শতকরা ৮০ জন রোগীর ক্ষেত্রে কিডনি অকেজোর কোন লক্ষণ দেখা যায় না, তাই তাদের কিডনি রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষার কোন বিকল্প নেই। স্বল্প খরচে খুব অল্প কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে কিডনি রোগ সনাক্ত করা সম্ভব। আর তা হচ্ছে প্রস্রাবের অ্যালবুমিন এবং রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা।
কাদের কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
- যাদের ডায়াবেটিস আছে
- যারা উচ্চ রক্তচাপে ভূগছেন
- যাদের বংশে কিডনি রোগ আছে
- যাদের অতিরিক্ত ওজন
- যারা ধূমপান করেন
- যাদের কিডনি পাথরের সমস্যা আছে
- যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি
- অতিমাত্রায় এন্টিবায়োটিক ও তীব্র ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার
এদের সবারই অন্তত বছরে একবার প্রস্রাবে অ্যালবুমিন ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা উচিৎ। প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ সনাক্ত করা গেলে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে কিছুক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ভালো করা যায় এবং কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হওয়া থেকে বাধা দেয়া সম্ভব।
সুতরাং কিডনি বিকলের কারণ সমূহের যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা করালে বহুলাংশে তা কমিয়ে আনা সম্ভব।
ডায়াবেটিস থেকে কিডনি রোগ
আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নির্দিষ্ট পরিমানের চেয়ে বেশি থাকাই ডায়াবেটিস। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগীদের শতকরা ৪০ ভাগেরই ধীরে ধীরে একসময় কিডনি বিকল হয়ে যায়। এই কিডনি বিকল কিন্তু হঠাৎ করে হয় না। ডায়াবেটিস ধরা পড়ার ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে প্রথমতঃ প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নির্গত হতে শুরু করে। প্রথমে অল্প মাত্রায় ও পরে আরও বেশি মাত্রায় Albumin নির্গত হয়। Micro Albumin পর্যায়ে যদি ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথী ধরা পড়ে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি অকেজো হওয়া থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। চিকিৎসা না নিলে পরবর্তীতে Creatinine সহ অন্যান্য দূষিত পদার্থগুলো রক্তে জমতে শুরু করে তাকেই আমরা ‘কিডনি অকেজো’ বলি যা ধীরে ধীরে এমন পর্যায়ে চলে যায় যখন শরীরের বর্জ্য পদার্থগুলো কিডনি একেবারেই বের করতে পারে না। তখন কিডনির কাজ কৃত্রিম ভাবে করানো ছাড়া রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় না।
উত্তরণের উপায়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রক্তে শর্করার পরিমান খালিপেটে ৬ এর নীচে এবং ভরা পেটে ৮ এর নীচে রাখা। Hb A1c ৭% এর নীচে রাখতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং রক্তচাপ ১৩০/৮০ এর নীচে থাকবে। যেহেতু ডায়ালাইসিস এর মত চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং Dialysis Centre এর সংখ্যা দেশে অপ্রতুল তাই আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই কিডনি সুস্থ্য রাখার উপর জোর দিতে হবে।
জানা অজানার অ্যান্টিবায়োটিক
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া জাতীয় জীবাণুর বিরুদ্ধে। এই জীবাণুগুলো যদি অ্যান্টিবায়োটিকের কর্মক্ষমতাকে প্রতিরোধ করার মতো শক্তিশালী হয়ে উঠে তা হলে তাদেরকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু (Resistant organism) বলা হয়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন জীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিক এর উপস্থিতিতে বেঁচে থাকে। বিভিন্ন কারণে এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে। কখনো কখনো প্রাকৃতিক কারণে আবার কখনো মানুষের সৃষ্ট কারণে ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠে।
যেখানে অ্যান্টিবায়োটিক এর কোন ভূমিকা নেই যেমন সাধারণ সর্দি কাশি, ভাইরাল ইনফেকশন এসব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে সেখানে উপকার তো হয়ই না বরং অ্যান্টিবায়োটিক এর ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে।
এছাড়া আর একটি সমস্যা হল অ্যান্টিবায়োটিক এর কোর্স সম্পূর্ন না করা। অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শুরু করার পর রোগের উন্নতি হয়। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে অ্যান্টিবায়োটিকটি তার কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শুরু করলে তা কিছু জীবাণু ধ্বংস করে কিন্তু কোর্স সম্পূর্ণ না করলে সব জীবাণু ধ্বংস হয় না। ফলে মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করলে বেঁচে যাওয়া জীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠে এবং তাদের বংশ বৃদ্ধি ঘটে।
ল্যাবএইড ফার্মা’র সেফিক্সিম ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছে ÔCephoralÕ নামে যা USDMF Grade -এর কাঁচামাল থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে।
ডাঃ মোঃ নবীউল হাসান (রানা)
এমবিবিএস (ডিএমসি), এমডি (নেফ্রোলজি)
মেডিসিন, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ
সিনিয়র কনসালটেন্ট, কিডনি রোগ বিভাগ
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা।