ত্বকের বলিরেখা : দূর করবেন যেভাবে

ত্বকের বলিরেখা : দূর করবেন যেভাবে

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে কতগুলো দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা দেয়। প্রধানতম পরিবর্তন ঘটে আমাদের ত্বকে। ত্বক কুঁচকে যায়, ভাঁজ দেখা দেয়। যাকে সাধারণত বলিরেখা বলা হয়। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে ত্বকে বলিরেখা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে অল্প বয়সেই এটি হতে দেখা যায়। তারুণ্য ঢাকা পড়ে যায় বুড়িয়ে যাওয়া ত্বকের আড়ালে। এমনটি হলে আক্রান্ত ব্যক্তি খুব হীনম্মন্যতায় ভুগে থাকেন। একই বয়সী বা কাছাকাছি বয়সী কারো ত্বক টানটান, অথচ নিজের দিকে তাকালে নিজেরই খারাপ লাগে।

কেন হয় ত্বকের বলিরেখা

আগেই বলা হয়েছে, এটি বয়োবৃদ্ধির স্বাভাবিক ঘটনা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে ত্বক পাতলা হয়ে যায়। ত্বকের আর্দ্রতা ও স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়। যার দরুণ ত্বক নিজেকে রক্ষা করার সক্ষমতা হারায়। এরই ফলাফল হিসেবে ত্বকে বলিরেখা, ভাঁজ বা বিভিন্ন দাগ দৃশ্যমান হতে দেখা যায়।

তরুণ বয়সে ত্বকে কোনো সমস্যা হলে তা দ্রুতই সেরে যায়। কিন্তু যখন বয়স বেড়ে যায় তখন ত্বকের নমনীয়তা কমে যাওয়ায় ত্বকে স্থায়ী গর্ত বা ক্ষত তৈরি হয়। তাহলে অনেকের ক্ষেত্রে অল্প বয়সে বা পর্যাপ্ত বয়স হওয়ার আগেই যে বলিরেখা দেখা দেয় এর কারণ কী? এক্ষেত্রে বংশগত, জীবনযাপনপ্রক্রিয়া, পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, সূর্যালোক—প্রভৃতি বিষয়ের ভূমিকা রয়েছে। এখানে কয়েকটি বিষয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে।

জীবনযাপনপ্রক্রিয়া : ভুল জীবনযাপনপদ্ধতির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকে। ঠিকমতো না ঘুমানো, ভুল ভঙ্গিতে শোয়া, শারীরিক পরিশ্রম না করা বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করা, শরীরচর্চা না করা, চোখ-মুখ কুঁচকে থাকা— এসব অভ্যাসের ফলে ত্বকে বলিরেখা পড়তে পারে।

পরিবেশ : দূষিত পরিবেশ ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাতাসে থাকা ধোঁয়া, ধুলাবালু বা পরিবেশে বিদ্যমান নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গ্যাস লোমকূপের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে শরীরে কোলাজেন উৎপাদনের হার কমে যায়। ফলে ত্বকের নমনীয়তা হ্রাস পায়।

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি : এটি ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিক ফাইবারের ক্ষতি করে। এই ফাইবার সংযোজক টিস্যু গঠন করে, যা ত্বককে দেহের সঙ্গে জুড়ে থাকতে সহায়তা করে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ত্বক দুর্বল হয়ে যায় এবং নমনীয়তা হারায়। যারা অধিক রোদে কাজ করেন বা বাইরে দীর্ঘসময় খেলাধুলা করেন তাদের ত্বকে অল্প বয়সেই বলিরেখা পড়ার ঝুঁকি বেশি।

খাদ্যাভ্যাস : ত্বকে বুড়িয়ে যাওয়ার ছাপ পড়ার ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস অনেক বড়ো একটি বিষয়। ভিটামিন, স্নেহ ও খনিজসমৃদ্ধ খাবারের ঘাটতি থাকলে অল্প বয়সেই ত্বক কুঁচকে যেতে পারে। ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধূমপান দেহের কোলাজেন, ইলাস্টিক ফাইবার ও প্রোটিওগ্লাইকান তৈরিতে বাঁধা দেয়, যা দেহের জৈব সংশ্লেষ ও ত্বকের সংযোজক টিস্যুর মাঝে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।

বলিরেখা প্রতিরোধে করণীয় ও বর্জনীয়

  • বলিরেখা প্রতিরোধে প্রথমেই নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন নিশ্চিত করা জরুরি। অযথা রাত জাগার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। শোয়ার সময় বালিশ এমনভাবে রাখুন যাতে মুখ বা গলার ত্বকে কোনোরূপ চাপ না পড়ে। প্রতিদিন কিছু সময় শরীরচর্চা করবেন। শারীরিক পরিশ্রমও গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোনোভাবেই অধিক পরিশ্রম করবেন না। আনন্দ, বিরক্তি বা হতাশার অভিব্যক্তি প্রকাশের সময় যথাসম্ভব চোখ-মুখ কুঁচকে থাকবেন না।
  • গুরুত্ব দিন পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে। ভাজাপোড়া, অধিক তেলযুক্ত খাবার, বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এ, সি ও ই রাখবেন। এক্ষেত্রে গাজর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া, পালংশাক, মিষ্টি আলু, পেঁপে, কমলালেবু, পেস্তাবাদাম, চিনাবাদাম, কাঠবাদাম ইত্যাদি খেতে পারেন। মাছ, মাংস, ডিম খেতে হবে নিয়মিত। পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করতে হবে। ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া ও চিনি খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকবেন।
  • অধিক সূর্যালোক এড়িয়ে চলবেন। রোদের সময় বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। চোখে রোদপ্রতিরোধী চশমা ব্যবহার করা ভালো। লম্বা হাতাওয়ালা, ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন।
  • দৈনন্দিন কাজকর্মে যেমন—ধোয়া-মোছার কাজের সময় হাতে গ্লাভস পরে নিন। ধুলাবালু, ময়লা পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন। ময়েশ্চারাইজার ক্রিম, লোশন ত্বকের জন্য ভালো। এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি

বলিরেখা দূরীকরণে সর্বাধুনিক চিকিৎসার নাম বোটক্স (বটুলিনাম টক্সিন)। মূলত ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই চিকিৎসা করা হয়। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ব্যথামুক্ত উপায়ে বোটক্স করা হয়। ২৫ বছর বয়সের বেশি যে কেউ এ চিকিৎসা নিতে পারেন। একবার বোটক্স নিলে ৫-৬ মাস পরপর রিটাচ করতে হয়।


ডা. ফারিবা মজিদ

চর্ম, যৌন, কুষ্ঠ, অ্যালার্জি, লেজার ও কসমেটিক সার্জন
এমবিবিএস (ঢাকা মেডিকেল কলেজ)
এমসিপিএস, এফসিপিএস (চর্ম ও যৌন রোগ)
অ্যাডভান্স ট্রেনিং অন এস্থেটিক ডার্মাটোলজি (ডিডিআই)
সহকারী অধ্যাপক (চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ)
ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
চেম্বার : ল্যাবএইড আইকনিক, কলাবাগান, ঢাকা

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp