মানুষের শরীরের প্রতিটি হাড়ের রয়েছে আলাদা আলাদা কাজ। ফলে যেকোনো একটি হাড়ের সমস্যাতেই ব্যহত হতে পারে কারো স্বাভাবিক জীবন। সেই সঙ্গে বিপর্যস্ত হতে পারে মানসিক অবস্থাও। তবে বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে এ ধারাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত চিকিৎসাসেবা শুরু হয়েছে আমাদের দেশেও। আর তারই ধারাবাহিকতায় কোমর, হাঁটু, কনুই ও কাঁধের হাড়ের প্রতিস্থাপন এখন দেশেই সম্ভব।
কৃত্রিম হাঁটু ও কোমর প্রতিস্থাপন
হাঁটুর সংযোগস্থলে সমস্যা হলে হাঁটাচলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই সমস্যা নিয়ে হাঁটতে গেলে পায়ের অন্যান্য হাড়েও সমস্যা দেখা দেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাথে শরীরের হাড়ের পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বয়স ও ওজন বেশি হলে এই সমস্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলে। বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষের গড় আয়ু যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে ওজন বৃদ্ধিসহ হাঁটুর নানা সমস্যা। ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয় ।
কিন্তু হাঁটুতে ব্যথা থাকলে তা সম্ভব নয়। ঠিকমতো উঠাবসা করতে না পারার কারণে নামাজ আদায় কিংবা প্রার্থনা করাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
আবার কোমরের সমস্যাও বয়সের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তাই একজন অন্যজনের থেকে আলাদা ধরনের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। যেমন- জন্মের পরপর হয় Development Dysplasia of Hip, GQvov Transient Synovities, Perthies Disease, Sliped Capital Femoral Epiphysis ইত্যাদি। প্রতিটি সমস্যার আলাদা আলাদা ব্যবস্থাপনাও রয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপর্যুক্ত সমস্যাগুলো জটিল আকার ধারণ করে এবং রোগীরা আর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তখন সম্পূর্ণ হিপ প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়।
যাদের জন্য অপারেশন
- অস্টিও আর্থ্রাইটিস (শেষ পর্যায়)
- রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস।শাকসবজি ও ফলমূল কম খাওয়া।
- আঘাতজনিত জটিলতা।
- AVN বা Avascular Necrosis of Femoral Head
- Ankylosing Spondylitis
- Fracture Neck Femur
- TB Hip
- Failed Hip
যে কারণে হাড়ের প্রতিস্থাপন করা হয়
- অজানা কারণে রক্ত সঞ্চালন কম বা বন্ধ হয়ে জয়েন্ট নষ্ট হওয়া।
- আঘাতজনিত কারণে জয়েন্ট অকেজো হওয়া।
- রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিসজনিত কোমর কিংবা হাঁটুর সমস্যা।
- মেরুদণ্ডের হাড় একীভ‚ত হয়ে কোমরের সমস্যা।
- হাড়ের যক্ষা থেকে সৃষ্ট সমস্যা।
- অস্টিওআর্থ্রাইটিস।
- আঘাতজনিত কারণে হাঁটু নষ্ট হলে।
অপারেশন পরবর্তী পরিচর্যা
হাঁটু ও কোমর প্রতিস্থাপনের পর সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। অপারেশন পরবর্তী সময়ে কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা প্রয়োজন। যেমন-
- হাঁটু প্রতিস্থাপনের পর ব্যথা সহনীয় হলে রোগীকে দাঁড় করানো বা ওয়াকার দিয়ে হাঁটানোর চেষ্টা করতে হবে।-
- রোগীর জন্য ভালো আনালজেসিয়া প্রয়োজন।
- কিছু ফিজিওথেরাপি নিতে হয়, যেমন বাধাপ্রাপ্ত ব্যায়াম ও হাঁটু ভাজ সোজা করার ব্যায়াম। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় রোগীকে বিশেষ কিছু ব্যায়াম শেখানো হয় যা রোগীর সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে।
- হাঁটু বা কোমর প্রতিস্থাপনের পর কিছু কিছু রোগীর অপারেশন করা স্থানে ফোলা বা গরম হতে পারে। সেটি কমানোর জন্য ক্রায়োথেরাপি বা বরফের কমপ্রেশন নেওয়া লাগতে পারে।
- হাঁটু বা কোমর প্রতিস্থাপন, উভয় ক্ষেত্রেই টয়লেটে কমোড ব্যবহার করতে হয়।
- অপারেশনের ২ সপ্তাহ পর একবার এবং পরবর্তী প্রথম তিন মাস প্রতি ৩ সপ্তাহে একবার, এরপরের ৬ মাস প্রতি ছয় সপ্তাহে একবার এবং পরবর্তী একবছর ১২ সপ্তাহে একবার চিকিৎসকের কাছে ফলোআপ করতে হয়।
প্রতিস্থাপন কোথায় করাবেন
২০০৭ সাল থেকে ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে হাঁটু ও কোমর প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত সফলভাবে ৩৮৫০ টি কোমরাস্থি ও ১২০০ টি হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কাঁধের প্রতিস্থাপন হয়েছে ২ টি। উন্নত বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিস্থাপনে সফলতার সাক্ষর রাখছে ল্যাবএইড। প্রায় ৫০০০ এর অধিক হিপ এন্ড নি রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির সাফল্য নি:সন্দেহে কেবল ল্যাবএইড নয় পুরো বাংলাদেশের গর্ব।
“Life is Movement, Movement is Life”
——————————————————————————————————————————————————

অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন
চিফ কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান
আর্থোপ্লাস্টি ও ট্রমা সার্জন
ল্যাবএইড হাসপাতাল লিঃ
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত