পরোক্ষ ধূমপানেও মৃত্যুঝুঁকি

অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান মৃত্যু ঘটায়। ধূমপান বহু জীবনঘাতী রোগের প্রত্যক্ষ কারণ। এই সত্যিগুলো আমরা সবাই জানি। বিশ্বাসও করি। তবে মনে করি, যারা সরাসরি নিজেরা ধূমপান করেন, কথাগুলো তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ধূমপায়ীর আশপাশে যারা থাকেন, অর্থাৎ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন যারা, তাদের ঝুঁকিও যে কোনো অংশে কম নয়, এটি আমাদের মাথাতেই থাকে না।

পরোক্ষ ধূমপান কী

ইংরেজিতে বলে প্যাসিভ স্মোকিং বা সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং। নিজে ধূমপান না করলেও ধূমপায়ীর আশপাশে থাকার ফলে অধূমপায়ীর ভেতরেও সিগারেটের নিকোটিনসহ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করে। একেই বলে পরোক্ষ ধূমপান।

যেসব রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়

ধূমপানের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নানা ধরনের রোগ তৈরি করে। বয়স ও শারীরিক অবস্থাভেদে রোগে আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা একটু কমবেশি হয়। তবে জীবনঘাতী ভয়াবহ সব রোগের উৎস এটি।

ফুসফুসের সমস্যা: সিগারেটের বিষাক্ত পদার্থ সবচেয়ে ক্ষতি করে থাকে ফুসফুসের। সিওপিডির মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুখের পাশাপাশি ফুসফুস-সংক্রান্ত যেকোনো বড়ো ধরনের জটিলতার কারণ হতে পারে এই পরোক্ষ ধূমপান।

শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা: পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা হয়। এ ক্ষেত্রে শিশু বা পূর্ণবয়স্ক বলে কোনো কথা নেই। যেকোনো বয়সের মানুষই শ্বাসের সমস্যায় আক্রান্ত হবেন।
অ্যাজমা: পরোক্ষ ধূমপানের শিকার একজন অধূমপায়ী অ্যাজমার মতো বড়ো ধরনের অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন।

ক্যানসার: এতে বিভিন্ন রকমের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় আশঙ্কাজনভাবে। মস্তিষ্কের ক্যানসার, মূত্রথলির ক্যানসার, পাকস্থলির ক্যানসার, স্তন ক্যানসার কিংবা ফুসফুসের ক্যানসারের ক্ষেত্রে এটি ভয়াবহ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা যায়, যারা পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হন, তাদের ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে প্রায় ২০-৩০ শতাংশ বেশি।

কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা: পরোক্ষ ধূমপানের ফলে হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।

দ্রুত সংক্রমণ: যেকোনো প্রদাহ, জ্বর, হাঁচি-কাশি, সর্দি-ঠান্ডা প্রভৃতি সমস্যায় তারা খুব দ্রুতই সংক্রমিত হয়ে থাকেন।

পরোক্ষ ধূমপানের কারণে
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়
শিশু ও গর্ভবতী নারীরা।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন যারা

আমাদের দেশে বাসগৃহ, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্রে প্রায় সর্বত্রই উন্মুক্তভাবে ধূমপান করতে দেখা যায়। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ অনিচ্ছাকৃতভাবেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে থাকেন। বয়স্ক বা পূর্ণবয়স্কদের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে শিশু ও গর্ভবতী নারীরা।

শিশুদের ক্ষেত্রে যা হয়ে থাকে

  • পরোক্ষ ধূমপানের কারণে জন্ম নিতে পারে অপরিণত শিশু। কম ওজনসম্পন্ন বা বিকলাঙ্গ হওয়া আশঙ্কাও থাকে।
  • নবজাতক শিশুর আকস্মিক মৃত্যু ঘটতে পারে।
  • কানে প্রদাহ হতে পারে। কমে যেতে পারে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি।
  • শিশুর দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • শিশুর স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। আচরণগত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

গর্ভবতীদের ঝুঁকি

  • পরোক্ষ ধূমপানের ফলে গর্ভবতী মা নিজেও ভয়াবহ অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন।
  • এ সময় শরীর এমনিতেই খুব দুর্বল থাকে। ফলে যেকোনো রকম সংক্রমণের শিকার হয়ে ঘটতে পারে মাতৃমৃত্যু।
  • গর্ভকালীন পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি বয়ে বেড়াতে হতে পারে সারা জীবন। এ সময় যে রোগ শরীরে বাসা বাঁধবে, তা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে উঠতে পারে।

ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন

অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন
এমবিবিএস, এফসিসিপি, এফআরসিপি, পিএইচডি, এফসিপিএস
ফেলো পালমনোলজি স্লিপ মেডিকেল আইসিইউ (সিঙ্গাপুর)
মেডিসিন, বক্ষব্যাধি ও স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
প্রফেসর, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
চেম্বার: ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

LinkedIn
Share
WhatsApp