প্রোস্টেট ক্যানসার: লক্ষ্য রাখুন লক্ষণে

প্রোস্টেট ক্যানসার এক প্রকার ক্যানসার যা প্রোস্টেট গ্রন্থিতে বিকাশ লাভ করে। গ্লোবোক্যানের অনুমানের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে প্রোস্টেট ক্যানসারের ১,২৭৬,১০৬ নতুন রোগী পাওয়া গেছে। উন্নত দেশগুলিতে এতে বেশি আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।


প্রোস্টেট এবং সেমিনাল ভেসিকালগুলো পুরুষ প্রজনন-ব্যবস্থার অংশ। প্রোস্টেট মূত্রাশয়ের নিচে, সুপারির আকারের, প্রায় এক আউন্স ওজনের এবং মলদ্বারের সামনে মূত্রনালিকে ঘিরে থাকে। স্ফীত প্রোস্টেটে পুরুষদের প্রস্রাব করতে সমস্যা হয়। প্রোস্টেটের স্ফীতি দুই প্রকার হয়। প্রথমটি বিনাইন (নিরীহ) প্রোস্ট্যাটিক হাইপারগ্লাশিয়া (BPH)- যা ক্যানসার নয়। সাধারণত বয়সজনিত কারণে হয়। জীবনের জন্য খুব কমই হুমকিস্বরূপ। এটি চারপাশের টিস্যুগুলিকে আক্রমণ করে না বা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে না। দ্বিতীয়টি প্রোস্টেটের ম্যালিগন্যান্ট (মারাত্মক) বৃদ্ধি। এটি কখনো কখনো জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। নিকটস্থ অঙ্গ, টিস্যু অথবা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে।

প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ

প্রাথমিক পর্যায়ে প্রোস্টেট ক্যানসারের প্রায়শই কোনো লক্ষণ থাকে না। যখন লক্ষণগুলো দেখা দেয় তখন এগুলো নিরীহ বর্ধিত প্রোস্টেট বা বিপিএইচের মতো হতে পারে। প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণগুলো হতে পারে-

  • তলপেটে হালকা ব্যথা
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা
  • প্রস্রাবের সময় ব্যথা জ্বালাপোড়া বা দুর্বল ধারার প্রস্রাব
  • ক্ষুধা হ্রাস, ওজন হ্রাস, হাড়ের ব্যথা ইত্যাদি।

প্রোস্টেট ক্যানসারের কারণ ও ঝুঁকি

কেন বা কীভাবে প্রোস্টেট ক্যানসার শুরু হয় তা কেউ জানে না। পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়সী তিনজন পুরুষের মধ্যে একজনের প্রোস্টেটে কিছু ক্যানসারকোষ থাকে। তবে অনেক সময়ই এরা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। পুরুষদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের প্রোস্টেট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রোস্টেট ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস-সম্পন্ন পুরুষদেরও এই রোগটি হওয়ার ঝুঁকি ২ থেকে ৩ গুণ বেশি। স্থ‚লতা, অতিরিক্ত ধূমপান, বেশি পরিমাণে ক্যালোরি, পশুর চর্বি, পরিশোধিত চিনি খাওয়া এবং পর্যাপ্ত ফল ও শাকসবজি না খাওয়া প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

কীভাবে প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়

সঠিকভাবে খাওয়া, ব্যায়াম করা, শরীরের ওজন কম রাখা এবং ধূমপান না করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো এবং তা প্রোস্টেট ক্যানসার এড়াতে সহায়তা করে। কেউ কেউ বিশ্বাস করে, ফিনেস্টেরাইড এবং ডুটাস্টারাইড জাতীয় ওষুধ প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। অন্যেরা বিশ্বাস করে যে তারা কেবল প্রোস্টেট ক্যানসারের বিকাশকে ধীর করে। তবে সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিবেচনায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।

প্রোস্টেট ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের সুবিধা ও ঝুঁকি


স্ক্রিনিং প্রোস্টেট ক্যানসার ছড়িয়ে যাওয়ার আগে তাড়াতাড়ি খুঁজে পেতে সহায়তা করে। দুটি পরীক্ষার মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হয়। প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (PSA) রক্তপরীক্ষা এবং ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা (DRE)।

প্রোস্টেট সূচ বায়োপসি


বিশেষ ধরনের আলট্রাসাউন্ড প্রোবের সাহায্যে মলদ্বারে বেদনানাশক প্রয়োগ করে বায়োপসি গান দ্বারা প্রোস্টেট থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বায়োপসি করার পরে বীর্যে, মূত্রে এবং মলে রক্ত থাকতে পারে। এটি মোটামুটি দ্রুত চলে যায়। যদি না যায় বা জ্বর হয় তাহলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

গ্রেডিং ও স্টেজিং


বায়োপসি থেকে প্রাপ্ত টিস্যুতে প্রোস্টেট ক্যানসারের কোষগুলোর গ্রেডিং করা হয়। দুটি গ্রেডকে একত্রিত করে একটি স্কোর তৈরি করা হয়। এই স্কোর বুঝতে সাহায্য করে যে ক্যানসার কম, মধ্যবর্তী বা উচ্চ-ঝুঁকিযুক্ত রোগ কিনা। স্টেজিংয়ে জানা যায়, ক্যানসারটি প্রোস্টেটের মধ্যে কোথায় রয়েছে। এটি কতটা বিস্তৃত এবং এটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা। ডিআরই, সিটি স্ক্যান, এমআরআই স্ক্যান বা হাড় স্ক্যানের স্টাডিজ দ্বারা ক্যান্সার স্টেজিং সম্পন্ন হয়।

বেশিরভাগ প্রোস্টেট ক্যানসার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং অগ্রসর হতে অনেক বছর সময় নেয়। যদিও আমাদের দেশে প্রোস্টেট ক্যানসারের অধিকাংশ চিকিৎসাই বিদ্যমান তবে অপ্রতুল। এগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে আছে। একটি সমন্বিত হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই অনুভ‚ত হচ্ছে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ল্যাবএইডের উদ্যোগে রাজধানীর গ্রিনরোডে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ল্যাবএইড ক্যানসার ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। যার আংশিক কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই উদ্যোগ ক্যানসার চিকিৎসায় দেশের মানুষের আস্থা ফেরাতে সাহায্য করবে।

প্রতি ৮ জন পুরুষের মধ্যে অন্তত একজন তার জীবনকালে প্রোস্টেট ক্যানসারের আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জনের বয়সই ৬৫ বা তদূর্ধ্ব। ৪০ এর নিচের বয়সে এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার উদাহরণ বিরল।

অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর কবীর
এমবিবিএস, এফসিপিএস, এফআরসিএস (গ্লাসগো, ইউকে) ইউরোলজিস্ট, এন্ড্রোলজিস্ট ও ইউরো-অনকোলজিস্ট
সংযুক্ত অধ্যাপক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ
একাডেমিক ডিরেক্টর
ইউরোলজি ও ট্রান্সপ্লান্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ (ইউটিএফবি) এক্স ইউরোলজিক্যাল সার্জন
এইনট্রি ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল, লিভারপোল, ইউকে
চীফ কনসালট্যান্ট ইউরোলজিস্ট
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp