ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধে ব্যথা
-ডা. মো. জিয়া উদ্দিন
সুমন মাহমুদ, বয়স ৪৫ বছর। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ভারী কাজ বা শারীরিক পরিশ্রম খুব একটা করেন না। কিছুদিন আগে বাসা পরিবর্তনের সময় ভারী জিনিস নাড়াচাড়া করায় তার কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়েছে। কাঁধের সন্ধিতে ব্যথার কারণে হাত নাড়াতে পারছেন না। হাত ওপরে তোলা, পেছনের পকেটে মানিব্যাগ রাখা, এমনকি চুল আঁচড়াতেও অসুবিধা হচ্ছে।
কাঁধব্যথা, কাঁধ শক্ত হওয়া বা জমাট বেঁধে যাওয়া ও কাঁধের নড়াচড়া সীমিত হয়ে যাওয়ার এই সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়-ফ্রোজেন শোল্ডার বা অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস। এই রোগে কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং রোগী হাত ওপরে ওঠাতে পারেন না।
কোনো আঘাত বা
অস্ত্রোপচারের
পর কাঁধের নড়াচড়া
কমে গেলে ফ্রোজেন
শোল্ডার হতে পারে।
ঝুঁকিতে আছেন যারা
ফ্রোজেন শোল্ডার কাঁধের অস্থিসন্ধির অসুখ। কোনো আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পর কাঁধের নড়াচড়া কমে গেলে এটি হতে পারে। ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন বা ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড কিংবা হাতের অস্ত্রোপচার হয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে। কাঁধের বেশি ব্যবহার কিংবা কোনো কারণে কাঁধে আঘাত পেলে বা স্ট্রোকের পরে ফ্রোজেন শোল্ডার দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘদিন ভারী কাজ করার অভ্যাস নেই এমন ব্যক্তি হঠাৎ ভারী কোনো কাজ করলেও কাঁধের এই সমস্যা হতে পারে। সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিদের এতে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তবে যেকোনো বয়সেই ফ্রোজেন শোল্ডার হতে পারে।
উপসর্গ
ফ্রোজেন শোল্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে মনে হয়, ব্যথাই প্রধান সমস্যা। কিন্তু ব্যথার চেয়েও গুরুতর সমস্যা হচ্ছে, অস্থি জমাট বাঁধা বা শক্ত হয়ে যাওয়া। আক্রান্ত রোগী ব্যথার তীব্রতায় হাত নাড়াচড়া করতে পারেন না। নাড়াচড়া না করলে অস্থিসন্ধি আরো শক্ত হয়ে যায়। এ সময় হাতের সাহায্যে কোনো কাজ করা সম্ভবপর হয় না। জামাকাপড় পরার ক্ষেত্রে হাত পেছনে নেওয়া ও নাড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়। যেকোনো কাজে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। মোটকথা, ফ্রোজেন শোল্ডারে আক্রান্ত হলে রোগী নিজের দৈনন্দিন কাজ সারতেও অসুবিধায় পড়েন। এছাড়াও যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে—
- হাত ও কাঁধের অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা।
- হাত ওপরে তুলতে বা পাশে নিতে অসুবিধা।
- আক্রান্ত পাশ ফিরে শুতে অসুবিধা হওয়া।
- হাত দুর্বল হয়ে যাওয়া বা হাতে শক্তি না পাওয়া।
- হাত দিয়ে কিছু তোলা বা বহন করতে না পারা।
- আঘাতের কারণে অস্থিসন্ধির আকার বিকৃতি।
- অস্থিসন্ধি ফুলে যেতে পারে।
চিকিৎসা
প্রতিটি রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে তার কারণের ওপর। নানা কারণে কাঁধে ব্যথা হতে পারে। কী কারণে ব্যথা হচ্ছে সেটি আগে নির্ণয় করা জরুরি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। অনেকসময় ফ্রোজেন শোল্ডারে আক্রান্তের নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে এক্স-রে ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
তবে যে কারণেই ব্যথা হোক, আক্রান্ত রোগীর দ্রুত চিকিৎসা করা জরুরি। দেরি হলে কাঁধের মাংসপেশি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অস্থিসন্ধি পুরোপুরি স্টিফ কিংবা অকেজো হয়ে দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাঁধের ব্যথার চিকিৎসা ওষুধ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, প্রয়োজন অনুযায়ী গরম বা ঠান্ডা সেঁক, স্ট্রেচিং ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে করা হয়। অনেকে নিজে নিজেই বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে ফিজিওথেরাপির চেষ্টা করেন, যা মোটেও উচিত নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি নিতে হবে।
কখনো কখনো ব্যথানাশক ওষুধ বা অস্থিসন্ধিতে স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী ধীরে ধীরে সেরে ওঠে। সেরে ওঠার সময়টা অনেকটাই নির্ভর করে চিকিৎসকের পরামর্শ সঠিকভাবে পালন করার ওপর। জটিল আকার ধারণ করলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
ডা. মো. জিয়া উদ্দিন
এমবিবিএস, ডি-অর্থো, এমএস (অর্থো সার্জারি) অর্থোপেডিক ও ট্রমা
হাড় ও জয়েন্ট বিশেষজ্ঞ এবং স্পাইন সার্জন
প্রাক্তন কনসালট্যান্ট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ
সিনিয়র কনসালট্যান্ট
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল