বর্ষাকালে টাইফয়েড এড়াতে সতর্ক থাকুন
ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসের জন্য অনুকূল মৌসুম হচ্ছে বর্ষা। আবহাওয়াজনিত কারণে এ সময় এদের প্রকোপ বেড়ে যায়। এসব ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস নানা ধরনের পানিবাহিত রোগের প্রত্যক্ষ কারণ। টাইফয়েড এমনই একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত পানিবাহিত রোগ, বর্ষাকালে যে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
কেন হয় টাইফয়েড
টাইফয়েডের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার নাম স্যালমোনেলা টাইফি। দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে এর জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার ফলে পানি দূষিত হয়ে পড়ে। ড্রেনের নোংরা পানি, মলমূত্র বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে এ সময়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
টাইফয়েডের উপসর্গ
টাইফয়েডের প্রধান উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। জ্বর অন্য অনেক রোগের উপসর্গ। ফলে এ সময় জ্বর হলে তা টাইফয়েড কি না তা নিশ্চিত হতে কিছু পরীক্ষা- নিরীক্ষা করা জরুরি। সেই সঙ্গে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলোর প্রতি খেয়াল করতে হবে।
- শুকনো কাশি
- শারীরিক দুর্বলতা
- মাথাব্যথা
- পেটে ব্যথা, হজমে সমস্যা
- খাবারে অনীহা
- ডায়রিয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- পেট ফেঁপে যাওয়া
- বমিভাব
এসব ছাড়াও শরীরে ফুসকুড়ি উঠতে পারে। আক্রান্ত হওয়ার শুরুতে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পরে তা কেটে গিয়ে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
টাইফয়েডে সৃষ্ট জটিলতা
যথাসময়ে ঠিকঠাক চিকিৎসা না করা হলে টাইফয়েড মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করতে পারে। টাইফয়েডের কারণে অনেকসময় কোলনের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয় এবং গর্ত তৈরি হয়। এর ফলে কোলন ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। সমস্যাটি পিত্তথলি ও রক্তনালিতে সংক্রমণ ও হাড়ের সমস্যাসহ নিম্নোল্লিখিত রোগ তৈরি করতে পারে—
- মায়োকার্ডাইটিস (হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির প্রদাহ)
- এন্ডোকার্ডাইটিস (হৃৎপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ আস্তরণের প্রদাহ)
- প্যানক্রিয়াটাইটিস (অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ)
- মেনিনজাইটিস (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে সংক্রমণ ও প্রদাহ)
- কিডনি বা মূত্রনালিতে সংক্রমণ
- দীর্ঘমেয়াদি নিউমোনিয়া
কখন যাবেন চিকিৎসকের কাছে
টাইফয়েডের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক রক্ত, মল বা মূত্রের নমুনা কালচারের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে টাইফয়েড কি না তা নিশ্চিত হয়ে থাকেন। কোনো কোনো চিকিৎসক ‘উইডাল টেস্ট’ বলে একটি পরীক্ষা করে থাকেন। তবে এটি টাইফয়েড নিরূপণে নিশ্চিতকারী কোনো টেস্ট নয়। টাইফয়েড হলে সাধারণত প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। নির্ধারিত কোর্স শেষ হলেও যদি অসুস্থতা না কমে সেক্ষেত্রে চিকিৎসক অবস্থা বুঝে চিকিৎসার ধরনে পরিবর্তন এনে থাকেন।
টাইফয়েড রোগীর করণীয়
শরীরে টাইফয়েডের জীবাণু প্রবেশ করলে নানা জটিলতা দেখা দিতে থাকে। এ সময় রোগীকে সতর্ক হতে হবে। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কতগুলো নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি।
- জ্বর ও ডায়রিয়ার ফলে শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি, স্যালাইন, ডাবের পানি ও তরল খাবার খেতে হবে।
- জ্বর বেশি হলে ঘন ঘন মাথায় পানি ঢালতে হবে। মাথায় জলপট্টি দেওয়া যেতে পারে।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে সারা শরীর মুছিয়ে দিতে হবে।
- শরীর যাতে বেশি দুর্বল না হয়ে যায় এজন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
- প্রতিবার বাথরুম করার পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে।
- রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
টাইফয়েড প্রতিরোধে করণীয়
- বিশুদ্ধ পানি পান করুন। রাস্তার পাশের দোকান থেকে পানি পান করবেন না। বাইরে থাকলে বোতলজাত পানি পানের চেষ্টা করুন।
- খাবার প্রস্তুত ও খাবার গ্রহণের সময় ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। খাদ্যদ্রব্য বিশুদ্ধ করে নিয়ে রান্না করুন। কাঁচা খাবার পরিহার করুন।
- ফলমূল খাওয়ার আগে তা ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিন।
- সদ্য রান্না করা গরম খাবার খাবেন। বাসি খাবার এড়িয়ে চলুন।
- টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- প্রতিবার টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। বিশেষত শিশুদের মলমূত্র পরিষ্কারের ব্যাপারে বাড়তি নজর রাখুন।
ডা. শাহ হাবিবুর রহমান
এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন)
ফেলো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ভারত)
সহযোগী অধ্যাপক
মেডিসিন ও রিউম্যাটলজি বিশেষজ্ঞ
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল