বর্ষায় এড়িয়ে চলবেন যেসব খাবার

আয় বৃষ্টি ঝেপে, ধান দেব মেপে—আমাদের ছেলেবেলার অন্যতম প্রিয় ছড়া। বর্ষা এলে বড়ো আনন্দে বৃষ্টিকে আহ্বান করতাম। হালের ছেলেপুলেরাও হয়তো এভাবেই ডাকে বর্ষাকে। আহ্বানেই হোক আর প্রাকৃতিক নিয়মেই হোক, বাংলায় বৃষ্টি আসে ঝেপে, ঝমঝমিয়ে। প্রকৃতি ধুয়ে-মুছে যায়। মনে আনন্দ জাগে। তবে এসব আনন্দের মাঝে কিন্তু লুকিয়ে থাকে দুশ্চিন্তা। বৃষ্টির মৌসুম যে কেবল আনন্দের মৌসুম নয়, এ যে রোগবালাইয়েরও মৌসুম! এ সময় বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বর্ষায় এড়িয়ে চলবেন যেসব খাবার

বর্ষায় রোগবালাই

বর্ষার ভরা মৌসুম চলছে এখন। বৃষ্টি হয়ে দাঁড়িয়েছে রোজকার ঘটনা। পাশাপাশি বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় চারপাশে বিরাজ করছে স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া। এতে রোজ-জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। দেখা দিচ্ছে সাধারণ সর্দিজ্বর, ঠান্ডা-কাশি, অ্যালার্জি, ত্বকে সংক্রমণসহ নানা সমস্যা। এছাড়াও বর্ষাকালে অনেকের মধ্যে হজমের গোলযোগ বা পেটের সমস্যা হতে দেখা যায়। এ সময় আবহাওয়ায় আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে হজমশক্তি কমে যায়। তাই বর্ষায় হজমের সমস্যা থেকে বাঁচতে এবং সার্বিকভাবে সুস্থ থাকতে কিছু নিয়মকানুন মেনে
চলা জরুরি।

যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন

বাইরের খোলা খাবার সবসময়ই বর্জনীয়। বর্ষায় আরো সচেতনভাবে এড়িয়ে যেতে হবে। ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড এড়াতে কাঁচা শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া থেকেও বিরত থাকুন এ সময়টাতে। প্রচুর ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার খান এবং পানি পান করুন। সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। এছাড়াও যেসব খাবারের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা জরুরি—

বর্ষায় এড়িয়ে চলবেন যেসব খাবার

ভাজাপোড়া ও বাইরের খোলা খাবার

বাইরের বিভিন ধরনের ভাজাপোড়া খাবার যেমন— পেঁয়াজু, সিঙ্গারা, চপ, পাকোড়া এ সময় এড়িয়ে চলুন। অনেকেই ফুচকা, চটপটি এসব খুব পছন্দ করেন। এই খাবারগুলো খোলা পরিবেশে তৈরি ও পরিবেশন করা হয়। ফলে রোগজীবাণু সহজেই এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুখরোচক এসব খাবার খেতে খুব ইচ্ছে হলে বাড়িতে বানিয়ে পরিমিত পরিমাণে খেতে পারেন।

দূষিত পানি

মানবদেহের ৬০-৭০ শতাংশই পানি। পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি এটি মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, লিভার ও কিডনিকে সুস্থ রাখে। দিনে কতটুকু পানি পান করতে হবে, তা নির্ভর করে আবহাওয়া ও শারীরিক পরিশ্রমের ওপর। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ও কর্মক্ষম নারী-পুরুষের প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা জরুরি। এই পানিই আবার হতে পারে নানা অসুখের কারণ। বর্ষাকালে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। পানি যদি বিশুদ্ধ না হয় তাহলে সহজেই পানিবাহিত নানা রোগ আক্রমণ করতে পারে। তাই সবসময় পানি ফুটিয়ে বা ভালোভাবে বিশুদ্ধ করে পান করুন। বাইরে গেলে বিশুদ্ধ পানির বোতল সঙ্গে রাখতে পারেন।মানবদেহের ৬০-৭০ শতাংশই পানি। পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি এটি মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, লিভার ও কিডনিকে সুস্থ রাখে। দিনে কতটুকু পানি পান করতে হবে, তা নির্ভর করে আবহাওয়া ও শারীরিক পরিশ্রমের ওপর। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ও কর্মক্ষম নারী-পুরুষের প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা জরুরি। এই পানিই আবার হতে পারে নানা অসুখের কারণ। বর্ষাকালে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। পানি যদি বিশুদ্ধ না হয় তাহলে সহজেই পানিবাহিত নানা রোগ আক্রমণ করতে পারে। তাই সবসময় পানি ফুটিয়ে বা ভালোভাবে বিশুদ্ধ করে পান করুন। বাইরে গেলে বিশুদ্ধ পানির বোতল সঙ্গে রাখতে পারেন।

শাক

শাক আমাদের দেহের জন্য দারুণ উপকারী। তবে বর্ষায় শাক কিছুটা এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ, বর্ষায় শাকের জলীয় অংশ বেড়ে যাওয়ায় এতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন শুরু হয়। এছাড়া শাকের গায়ে পোকামাকড় ও নোংরা পানি লেগে থাকতে পারে। খুব ভালোভাবে তা পরিষ্কার করা না হলে এটি সহজেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

বর্ষায় এড়িয়ে চলবেন যেসব খাবার

সামুদ্রিক মাছ

মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃৎপিণ্ড ও এর পেশিকে শক্তিশালী করে। মস্তিষ্কের নতুন কোষ তৈরিতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় মাছ খুবই উপকারী। তবে, বর্ষাকাল মাছের প্রজননের আদর্শ সময়। এ সময় উন্নত মানের মাছ পাওয়া যায় না। এতে পেটের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রাস্তার পাশে কেটে রাখা ফল ও ফলের রস

আজকাল বাইরে বিভিন্ন ফল কেটে বিক্রি করতে দেখা যায়। আবার আখের রস ও অন্যান্য ফলের রসও পাওয়া যায় অহরহ। অনেকেই ফলের উপকারিতার কথা ভেবে সেই ফলের রস ও ফল খেয়ে থাকেন। কিন্তু রাস্তার পাশে কেটে রাখা সেসব ফলে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি। কারণ, কেটে রাখা ফলে বাতাসের সংস্পর্শে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। যা ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ পেটের নানা সমস্যার অন্যতম কারণ।

কোমল পানীয়

কোমল পানীয় আমাদের শরীরে খনিজের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে এনজাইমগুলো ভালোভাবে কাজ করতে পারে না। এতে হজমের মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়। এমনকি পেটে সংক্রমণও হতে পারে। তাই বর্ষায় কোমল পানীয় ও বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খান। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন অন্তত একটি মৌসুমি ফল খান। চায়ের সঙ্গে আদা, লেবু, তুলসী বা পুদিনা পাতা যোগ করতে পারেন। অসময়ের সবজি যেমন- ফুলকপি, বরবটি ইত্যাদি বর্ষায় না খাওয়াই ভালো। ব্যাকটেরিয়াল ও ভাইরাল ইনফেকশন থেকে বাঁচতে কাঁচা সবজির বদলে সেদ্ধ সবজি খান। রান্নায় শাকসবজি ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।

বর্ষাকালে আবহাওয়ার তারতম্য খুব বেশি হয়। এ সময় জীবাণুরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। তাই এ সময় খাবারের ব্যপারে সতর্ক থাকুন।


নাজিয়া আহমেদ

নাজিয়া আহমেদ

বিএসসি (অনার্স), এমএসসি- নিউট্রিশন (ঢাবি)
পুষ্টিবিদ
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp