বর্ষায় বয়স্কদের যত্ন

বর্ষায় বয়স্কদের যত্ন

বছরজুড়েই বয়স্করা হৃদ্‌রোগসহ নানা রকম রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। ঋতু পরিবর্তনের সময় তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। আবার কোনো কোনো ঋতুতে তাদের মুখোমুখি হতে হয় বিশেষ কিছু শারীরিক জটিলতায়। বর্ষা তেমনই এক ঋতু। এ সময় পুরনো রোগ যেমন—হৃদ্‌রোগ, বাতজ্বর, বক্ষব্যাধি প্রভৃতি আরো বেড়ে যায়। আবার নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাবও বৃদ্ধি পায়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের বহুমুখী আক্রমণে প্রবীণ ব্যক্তিরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে কিছু নির্দেশনা মেনে চলা দরকার।

বর্ষায় বয়স্কদের যত্ন

মেনে চলুন স্বাস্থ্যবিধি

সবারই ব্যক্তিগত পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য। নিয়মিত গোসল করা, বাইরে থেকে এসে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, নাকে-মুখে হাত না দেওয়া—প্রভৃতি ব্যাপারে খুব সচেতন হতে হবে। এসব ব্যাপারে অবহেলা করলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা জন্ডিসের মতো রোগগুলো শরীরে বাসা বাঁধে।

টিকা নিন

হেপাটাইটিস, ফ্লু প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় টিকা না নেওয়া থাকলে বর্ষা আসার আগে আগেই নিয়ে নিন।

চাই সুষম খাবার

সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। লক্ষ্য রাখুন, বয়স্কদের খাদ্যতালিকায় যেন ভিটামিন, খনিজ, মিনারেলসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যগুণসম্পন্ন পুষ্টিকর খাবার থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করবেন। লবণ কম খাবেন। নিয়মিত আপেল, কলা, পেঁপে, লেবুসহ প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ ফলের পাশপাশি মৌসুমী ফল খাওয়া দরকার।

বিশুদ্ধ পানি ও খাবার

বর্ষাকালে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিতে পারে। তাই পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি জেনে রাখা দরকার। পানি ফুটিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। শাকসবজি বা অন্যান্য খাবার রান্না করার ক্ষেত্রেও বিশুদ্ধতার ব্যাপারটি গুরুত্ব সহকারে মাথায় রাখতে হবে।

বাইরের খাবার একদম নয়

বয়স্কদের মাথায় রাখতে হবে, বয়সটা আর আগের মতো নেই। শরীরের কলকবজা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও নেই তরুণ বয়সের মতো। ফলে খাবারে রাশ টানতেই হবে। যা কিছু অস্বাস্থ্যকর তা এড়িয়ে চলতে হবে। ভাজাপোড়া ও অধিক তেল-মসলাযুক্ত খাবার একদমই খাওয়া চলবে না। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে।

স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ ও ভিড় এড়িয়ে চলুন

পরিবারের বয়স্ক মানুষটি যে ঘরে থাকেন সেই ঘরটি যেন কোনোভাবেই স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে না থাকে, এটি খেয়াল রাখুন। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখবেন। এ সময় বয়স্কদের ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে চলাই ভালো। ঘরের আর্দ্র আবহাওয়া ও লোকজনের ভিড় ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

কাদা-পানিতে হাঁটবেন না

বর্ষাকাল এলেই রাস্তাঘাট ময়লা পানি ও কাদায় একাকার হয়ে যায়। কোনোভাবেই নোংরা পানি ও কাদা পায়ে বা গায়ে লাগতে দেবেন না। এসব কাদা-পানির সংস্পর্শে পায়ের আঙুলের ফাঁকে হাজা বা গোটা গোটা ফুসকুড়ির মতো চর্মরোগ হয়ে থাকে।

সঙ্গে রাখুন বর্ষাতি

বাদলা দিনে বাইরে যেতে হলে সঙ্গে ছাতা বা রেইনকোট রাখুন। আচমকা বৃষ্টিতে ভেজার ফলে ঠান্ডা-জ্বর, হাঁচি-কাশি হতে পারে।

বাঁচতে হবে মশার কামড় থেকে

বৃষ্টি-বাদলায় মশার উপদ্রব বেড়ে যায় বহু গুণে। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ রোগ হয়ে থাকে। বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়ায় এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি। তাই বাড়ির আশপাশের ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরের জানালায় নেট লাগানো যেতে পারে। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা জরুরি। মশা প্রতিরোধী ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন।

ঘরে রাখুন প্রাথমিক চিকিৎসা-সরঞ্জাম

পরিবারে বয়স্ক মানুষ থাকলে অবধারিতভাবে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা-সরঞ্জাম ঘরে রাখুন। যেমন—জ্বর মাপার থার্মোমিটার, সাধারণ কিছু ওষুধ, হিটিং প্যাড, অ্যালার্জির জন্য অ্যান্টি হিস্টামিন ওষুধ, ইনহেলার, নেবুলাইজার প্রভৃতি।


অধ্যাপক ডা. এস. এম. মোস্তফা জামান

অধ্যাপক ডা. এস.এম. মোস্তফা জামান

এমবিবিএস, ডিটিসিডি, এমডি (কার্ডিওলজি)
ফেলো-ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি
(ভারত, সিঙ্গাপুর ও জাপান)
হৃদরোগ, বাতজ্বর, বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি
বঙ্গন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp