বর্ষায় মাথার ত্বক ও চুলের যত্ন
বর্ষায় প্রকৃতি একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। কখনো তীব্র গরমে ঘাম আবার কখনো হঠাৎ বৃষ্টিতে ভেজা—
এসব কারণে ঘর থেকে পরিপাটি হয়ে বের হলেও চুলের শেষরক্ষা হয়ে ওঠে না। পরিবেশের এই বিরূপ প্রভাব আমাদের ত্বক ও চুলের ওপরেও পড়ে। চুল সুস্থ ও মজবুত রাখতে চুলের গোড়া শুকনো রাখার বিকল্প নেই। তবে বর্ষাকালে ঘরের বাইরে গেলে এটি বেশ মুশকিল কাজ বটে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় চুল সহজে শুকাতে চায় না। এছাড়া ধুলাবালির কারণে মাথার ত্বকের রোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যা চুলপড়া ও খুশকি হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই আবহাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে মাথার ত্বক এবং চুলেরও নিতে হবে বিশেষ যত্ন।
বর্ষায় মাথার ত্বকের যত্ন
এই আবহাওয়ায় বাতাসের মাধ্যমে চুলে প্রচুর ধুলাবালি আটকায়। চুল ভেজা থাকলে ময়লা দ্রুত মাথার ত্বকে গিয়ে জমে। ফলে মাথার ত্বকে খুশকি ও চুলকানি হয়। এছাড়া বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, ভ্যাপসা গরম, মাথায় ঘাম, ভেজা চুল প্রভৃতি কারণে মাথার ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়, বাসা বাঁধে ছত্রাক। তা থেকে ত্বকে প্রদাহ, চুল পড়া, চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় মাথার ত্বকের যত্নে
যেসব বিষয় মেনে চলা জরুরি-
- ছত্রাক সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সবসময় মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখুন।
- নিয়মিত শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন। প্রতিদিন বাইরে গেলে একদিন পরপর শ্যাম্পু করতে পারেন।
- চুল পরিষ্কারে চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু নির্বাচন করুন।
- শ্যাম্পু ব্যবহারের পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
- চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন না।
- গোসলের পর চুল আলতোভাবে মুছে বাতাসে শুকিয়ে নিন।
- ভেজা চুল আঁচড়াবেন না।
বর্ষায় চুলের যত্ন
অন্যান্য ঋতুতে যদি একজন মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৮০ টি চুল পড়ে, বর্ষায় সেটি বেড়ে দ্বিগুন হয়ে যায়। এ সময় খুশকি, চুলপড়াসহ চুলের নানা সমস্যা বেড়ে যায়।
এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় অনেকের চুল সহজে শুকায় না। ফলে মাথার ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। এতে চুলের গোড়া নরম হয়ে অতিরিক্ত চুল পড়ে। কিছু ঘরোয়া যত্নের মাধ্যমেই চুলের এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যেমন—
- গোসলের পরপরই ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে নেওয়া।
- বর্ষার মৌসুমে অ্যান্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহার করা।
- রোদে খোলা চুলে বাইরে গেলে সান-প্রটেক্টর ক্রিম ব্যবহার করা।
- রোদে বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করা বা ওড়না দিয়ে চুল ঢেকে রাখা।
- প্রতিদিন পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করলেও একদিন পরপর শ্যাম্পু ব্যবহার করা।
- মাথার ত্বকে শ্যাম্পু এবং চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করা।
- মাসে অন্তত দুই থেকে তিনবার চুলে তেল ব্যবহার করা।
এ সময়ের সতর্কতা
বর্ষায় মাথার ত্বক ও চুলের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভোগেন তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা। তৈলাক্ত ত্বকে আর্দ্র আবহাওয়ায় সহজেই ছত্রাক জন্মাতে পারে। তাই এ সময় মাথার ত্বক ও চুলের যত্নে একটু বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। অনেকেই মনে করেন, বর্ষায় চুলে তেল ব্যবহার করলে চুল আরো তেলতেলে হয়ে যাবে। এই ভয়ে অনেকেই তেল ব্যবহার করেন না। কিন্তু তেল ব্যবহার না করা কোনো সমাধান নয়।
চুলের যত্নে সবচেয়ে প্রাচীন যে উপাদানটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে তা হচ্ছে—তেল। মাথার ত্বকে সপ্তাহে অন্তত দুদিন তেল ব্যবহার করুন। এতে চুলের গোড়া যেমন মজবুত হবে, তেমনই চুলের উজ্জ্বলতাও বাড়বে। আবার বর্ষায় কন্ডিশনার ব্যবহার করেন না কেউ কেউ। এটি ঠিক নয়। এতে চুল আরো রুক্ষ হয়ে পড়ে।
শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। কন্ডিশনার চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায় এবং চুলকে আরো মসৃণ করে তোলে। এছাড়া ভেষজ উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। যেমন—মেথি, অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা মাথার ত্বক ও চুলের জন্য দারুণ কার্যকর। এতে থাকা ভিটামিন-ই মাথার ত্বক পরিচর্যার জন্য আদর্শ এক উপাদান।
মাথার ত্বক ও চুলের পরিচর্যা শুধু বাইরে থেকে করলেই হবে না। নিয়মিত খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার। সেইসাথে প্রচুর পানি পান ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। চুলের পরিচর্যায় ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করতে পারেন। তবে নিজে নিজে ওষুধ সেবন করা যাবে না। চুলের সমস্যা বেড়ে গেলে বা ছত্রাক দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. মো. কামরুল হাসান চৌধুরী
এমবিবিএস, ডিসিডি, এমএসসি (ক্লিনিক্যাল ডার্মাটোলজি)
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন (ইউকে)
চর্ম, যৌন, অ্যালার্জি, লেজার অ্যান্ড হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন
(আইএসএইচআরএস- অ্যাসোসিয়েট মেম্বার)
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল