বসে কাজ করার নিয়মকানুন

বসে কাজ করার নিয়মকানুন

ঘাড় গুঁজে দিন লিখতে লিখতে/ ঘাড় গুঁজে রাত লিখতে লিখতে/ মুছেছে দিন—মুছেছে রাত/ যখন আমার লেখবার হাত অসাড় হলো….

কবি জয় গোস্বামী ‘মেঘবালিকার জন্য রূপকথা’ কবিতায় ঘাড় গুঁজে লিখতে লিখতে হাত অসাড় হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। চেয়ারে বসে কম্পিউটারের স্ক্রিনে চোখ রেখে কি-বোর্ডে ব্যস্ত আঙুল চালিয়ে দিনের বড়ো সময়টা কাটাতে হয় যাদের তারা ব্যাপারটা ভালো বুঝবেন। টাইপ করতে করতে একসময় সত্যিই হাত অসাড় হয়ে আসে। বসে থাকতে থাকতে পিঠে, কোমরে বা কাঁধের মাংসপেশিতে ব্যথা শুরু হয়। তাই বসে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।

বসে কাজ করার নিয়মকানুন

একটানা বসে কাজ : হতে পারে যেসব সমস্যা

পেশাগতভাবে ডেস্ক-নির্ভর কাজ করতে হয় যাদের বা চেয়ারে বসে একটানা পড়াশোনা করে যে শিক্ষার্থীরা তাদের কতগুলো সমস্যা হয়। মাথা, চোখ, হাত, পা, পিঠ, ঘাড়, পাকস্থলী, হৃদযন্ত্র— প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো হতে পারে—

  • একটানা বসে থাকায় শরীরে জমা হওয়া চর্বি ঝরে যাওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে ফ্যাটি অ্যাসিড বেড়ে গিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি হয়।
  • স্বাভাবিকভাবেই ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
  • পিঠ, ঘাড়, কোমর বা কাঁধে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা দেখা দেয়।
  • দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকায় মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়ে। এতে মেরুদণ্ডের মাংসপেশি ও লিগামেন্টও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের স্ক্রিন বা যেকোনো নির্দিষ্ট একদিকে তাকিয়ে থাকায় চোখ ব্যথা করে ও দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব পড়ে।
  • ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • পায়ের রক্তসঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কী করবেন

উপর্যুক্ত সমস্যা এড়াতে নিম্নোক্ত নির্দেশনা মেনে চলবেন—

কম্পিউটার মনিটরের অবস্থান : যাদের কাজ কম্পিউটারে তারা কম্পিউটারের মনিটর উঁচু বা নিচুতে নয়, চোখ বরাবর রাখুন। ঘাড়ের অবস্থানের ব্যাপারটি পড়াশোনার সময়ও মাথায় রাখুন। ঘাড় বাঁকা করে, উবু হয়ে বেশিক্ষণ পড়বেন না।

সোজা হয়ে বসুন : হিপ, হাঁটু ও গোড়ালি ৯০ ডিগ্রি কোণে সোজা রেখে বসুন।

আরামদায়ক চেয়ার-টেবিল : চেয়ার-টেবিলের উচ্চতা যেন আপনার উচ্চতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ও আরামদায়ক হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

টেবিলের নিচে থাক তক্তা বা টুল : টানা কাজের ফাঁকে পা রাখার জন্য টেবিলের নিচে কাঠের তক্তা, টুল বা পিঁড়ির মতো কিছু রাখতে পারেন। বিশেষত যাদের পা ফুলে যায়, তারা এতে উপকার পাবেন।

পিঠের পেছনে বালিশ বা কুশন : পিঠের পেছনে লাম্বার রোল, বালিশ বা কুশন ব্যবহার করতে পারেন।

উঠে দাঁড়ান : যারা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন, তারা প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ২০ সেকেন্ডের জন্য উঠে দাঁড়াবেন।

একটুখানি পায়চারি : নেহাত বেশিক্ষণ বসে থাকলে উঠে দাঁড়িয়ে মিনিট পাঁচেক হাঁটাহাঁটি করুন।

হালকা ব্যায়াম : দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে অল্প সময়ের জন্য ব্যায়াম করবেন। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন—

চেয়ারের পাশে : প্রথমে চেয়ারের পেছনে দাঁড়ান। দুহাতে ধরুন। এবার বাঁ পা দিয়ে ডান পায়ের কাফ মাসল স্পর্শ করুন। পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে ভর দিয়ে দাঁড়ান। এভাবে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড স্থির থাকুন। এভাবে তিনবার করুন। বিপরীতভাবে আরও তিনবার করুন।

বসে থেকে : নিতম্বের এক অংশ চেয়ার থেকে ওপরে তুলে ফেলুন এবং সেখানকার মাংসপেশির ওপর চাপ প্রয়োগ করুন। এভাবে অন্তত ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এবার দাঁড়িয়ে : চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে এক পা ধীরে ওপরের দিকে প্রসারিত করুন। পা সোজা করে ধরে রাখুন। এরপর ধীরে ধীরে পা নামিয়ে আনুন। এক পা শেষ হলে অন্য পা ব্যবহার করুন। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে এবার এক পায়ে ভর দিয়ে পা সামনে-পেছনে বাঁকা করুন। এবার অন্তত ৩০ সেকেন্ড ব্যায়ামটি অভ্যাস করুন।

বোতল ব্যায়াম : পানির বোতল বরাবর সোজা করে ধরুন। এরপর ডান দিকে ধীরে ধীরে শরীর বাঁকান, যতখানি পারা যায়। এবার আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। এবার ঠিক একই রকমভাবে দুই হাত দিয়ে বোতল ধরা অবস্থায় শরীর বাঁ দিকে বাঁকান।


ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার

ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার

ব্যবস্থাপক, মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স
ল্যাবএইড হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp