বাদল দিনের সতর্কতা

বর্ষার অনেক রূপ। বর্ষায় প্রাণ-প্রকৃতি যেমন সবুজ হয়ে ওঠে অন্যদিকে অতিরিক্ত বর্ষা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে দেয়। এই ঝরঝর মুখর বাদল দিনগুলোতে সুস্থ থাকতে নিচের নির্দেশনাগুলো জেনে নিন।

বর্ষায় ঘরবাড়ি

বর্ষাকালে আবহাওয়া এমনিতেই আর্দ্র থাকে। বেড়ে যায় মশার উৎপাতও। এ সময় ঘরবাড়ি ও আঙিনার বিশেষ যত্ন না নিলে রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে এই পরামর্শগুলো গুরুত্ব দিন—বর্ষাকালে আবহাওয়া এমনিতেই আর্দ্র থাকে। বেড়ে যায় মশার উৎপাতও। এ সময় ঘরবাড়ি ও আঙিনার বিশেষ যত্ন না নিলে রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে এই পরামর্শগুলো গুরুত্ব দিন—

বাদল দিনের সতর্কতা
  • ঘরবাড়ি যেন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। বাড়ির ছাদে বা দেওয়ালে ফাঁটা থাকলে বর্ষার আগেই মেরামত করে নিন।
  • পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখুন। ছাদে, ব্যালকনিতে বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন।
  • বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন করে নিন।
  • মশা প্রতিরোধের জন্য ঘরের জানালায় নেট লাগিয়ে নিতে পারেন।

বৃষ্টির দিনে বাইরে গেলে

বর্ষাকালে বাইরে বের হতে হলে নিম্নোক্ত পরামর্শগুলো মেনে চলুন—

  • সঙ্গে অবশ্যই ছাতা বা রেইনকোট রাখুন।
  • ঘরের জানালা বন্ধ করে বের হোন।
  • বিদ্যুতে চলে হয় এমন জিনিসের লাইন খুলে রাখা ভালো। বাজ পড়লে বা ভারী বর্ষণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে এসব নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
  • ঝড় বৃষ্টিতে অনেকসময় রাস্তাঘাটে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুতের তার পড়ে থাকে। স্পর্শ লাগলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাই এ সময় হাঁটাচলায় সাবধানী হোন।

বর্ষার জামা-জুতা

এ সময় বর্ষা উপযোগী, আরামদায়ক এবং দ্রুত শুকিয়ে যায় এমন পোশাক-পরিচ্ছদ বেছে নিন। এক্ষেত্রে—

  • সিল্ক বা সিফনের হালকা পোশাক পরা ভালো।
  • মোটা, লম্বা ও ভারী জামা পরবেন না। এগুলো ভিজে গেলে শুকাতে দেরি হয়। দীর্ঘসময় ভেজা কাপড়ে থাকলে হতে পারে সর্দি-কাশি, চর্মরোগ।
  • পানিরোধক জুতা পরুন। প্লেইন সোলের জুতা ব্যবহার না করাই ভালো। এতে বর্ষায় পিচ্ছিল পথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
  • হাই-হিল জুতা এড়িয়ে চলুন। হাই-হিলে কর্দমাক্ত রাস্তায় পায়ের ভারসাম্য রাখা সহজ নয়।

বর্ষায় সুস্থ থাকতে বিশুদ্ধ পানি পান

বর্ষায় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই এ সময় বিশুদ্ধ পানি পান করা জরুরি। পানি অবশ্যই ফুটিয়ে বা ফিল্টারিং করে নেবেন। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান করুন। পানি দ্রুত ঢকঢক করে গিলে ফেলবেন না। মুখে নেওয়া থেকে গিলে ফেলা পর্যন্ত অন্তত পাঁচ-দশ সেকেন্ড সময় নিন। ঘুমানোর আগে এবং ভরপেটে বেশি পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। রাস্তার
পাশে বিক্রি হওয়া শরবত ও খোলা পানি এড়িয়ে চলুন। বাইরে গেলে পানির বোতল সঙ্গে রাখতে পারেন।

বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকবেন যেভাবে

এপ্রিল-জুলাই মাসে তাপমাত্রা বেশ আর্দ্র ও উষ্ণ থাকে। এ সময় সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হতে দেখা যায়। বজ্রপাতের সময় নিরাপদ থাকতে যেসব বিষয় মেনে চলা জরুরি—

  • খোলা বা উঁচু জায়গায় অবস্থান করবেন না। নিকটস্থ কংক্রিটের ঘরের নিচে আশ্রয় নিন।
  • গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে থাকুন। এ সময় যাত্রী-ছাউনিগুলোও অনিরাপদ।
  • ঘরের জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের মধ্যে থাকুন।
  • বজ্রপাতের সময় ধাতব বস্তু, সিঁড়ির রেলিং, জানালার কাচ, ল্যান্ডলাইন টেলিফোন, ধাতব পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
  • টিভি, ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি স্পর্শ করবেন না। বজ্রপাত শুরু হলে বৈদ্যুতিক লাইন থেকে সমস্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন।
বাদল দিনের সতর্কতা

বর্ষায় খাদ্যে বিষক্রিয়া এড়াতে যা করবেন

বর্ষায় পরিচিত এক সমস্যা ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া। সাধারণত খাবারের মাধ্যমে কোনো জীবাণু দেহে প্রবেশ করলে এটি হতে পারে। দেহে জীবাণু প্রবেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এর লক্ষণ দেখা দেয়। আবার কখনো কখনো কয়েকদিন বা সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর লক্ষণ প্রকাশ পায়। পাতলা পায়খানা, পেট মোচড়ানো বা কামড়ানো, পেটে ব্যথা, বমিভাব বা বমি, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি, শরীরব্যথা—এগুলো ফুডপয়জনিংয়ের উপসর্গ। এটি মারাত্মক কোনো সমস্যা নয়। সচরাচর সাত দিনের মধ্যেই সেরে যায়। আক্রান্ত হলে ডাবের পানি, স্যালাইন, শরবত ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা করা না হলে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। ফুডপয়জনিং এড়াতে যা করতে পারেন—

বাদল দিনের সতর্কতা
  • বাসি-পচা, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন না।
  • রাস্তার খোলা খাবার খাবেন না।
  • বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
  • খাবার সবসময় ঢেকে রাখুন।
  • ব্যবহৃত থালাবাসন ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
  • ফ্রিজে রাখা পুরনো খাবার খাবেন না।
  • ভাজাপোড়া ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • খাওয়ার আগে-পরে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।

ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার

ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার

ব্যবস্থাপক, মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স
ল্যাবএইড হাসপাতাল

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share
WhatsApp