বৃষ্টিতে ভেজার ভালো-মন্দ
বর্ষাকালে হুটহাট বৃষ্টি চলে আসে। কখনো টিপটিপ, কখনো ঝেঁপে আসে বৃষ্টি। না চাইলেও কখনো ভিজতে হয়। আবার শখেও অনেকে ভিজে থাকেন। আসলে আমাদের দেশে বৃষ্টি অনেকটা উৎসবের মতো। বৃষ্টিতে ভেজার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা যেমন আছে তেমনি কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। তাই এক্ষেত্রে ভালো-মন্দ দুটো দিকই মাথায় রাখুন।
বৃষ্টিতে ভেজার উপকারিতা
দূর করে চর্মরোগ : বর্ষার আগে থাকে গ্রীষ্মের তীব্র গরম। গ্রীষ্মের গরম, ঘাম ও ধুলোবালির কারণে আমাদের ত্বকে নানা রকম রোগ হয়ে থাকে। ঘাড়ে-পিঠে ঘামাচি ও ফুসকুড়ি হয়। মুখে ব্রণের পরিমাণ বেড়ে যায়। বৃষ্টির পানি এসব চর্মরোগ নিরাময়ে দারুণ উপকারী।
বৃষ্টির পানি ত্বকের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে এবং ত্বকের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ফলে ঘামাচি, চুলকানি, i¨vশ, ব্রণ— প্রভৃতি সমস্যা কমে যায়। এতে ত্বকের খসখসে ভাবও দূর হয়।
স্বাস্থ্যকর চুল : বৃষ্টির পানি অধিকতর পরিষ্কার। এতে প্রাকৃতিক অ্যালকালাইন থাকে, যা মাথার ত্বকের ময়লা, খুশকি ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং চুলের গোড়া শক্ত করে। নিয়মিত বৃষ্টিতে ভিজলে চুলের রুক্ষভাব কমে গিয়ে চুল আরো উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয়। ভেজার পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।
ভিটামিন বি-১২ : বৃষ্টির পানি খুব হালকা হয়ে থাকে। এই পানি ভিটামিন বি-১২-এর উৎকৃষ্ট উৎস। নিয়মিত বৃষ্টিতে ভেজা শরীরের ভিটামিন ঘাটতি পূরণের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
হরমোনের ভারসাম্য : হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় বৃষ্টিস্নান খুবই কার্যকর উপায়। শরীরের হরমোনে ভারসাম্যহীনতা থাকলে বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন।
কানের জটিলতা : বৃষ্টিতে ভিজলে কানের নানাবিধ সমস্যাও দূর হয়। কানের বিভিন্ন সংক্রমণ, কানব্যাথা, কান পাকা—এমন সব সমস্যাসমূহ দূরীকরণে বৃষ্টির পানি বেশ ভালো কাজে দেয়।
মানসিক প্রফুল্লতা : বৃষ্টির পানি এন্ডোরফিন বা সেরোটিনিনের মতো হ্যাপি হরমোনগুলোকে সক্রিয় করে দেয়। এগুলো মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা দূর করে এবং তাৎক্ষণিক আনন্দের উদ্রেক করে।
বৃষ্টিতে ভেজায় সতর্কতা
বৃষ্টিতে ভেজার ক্ষেত্রে দরকার কিছু সতর্কতা। একটু অসতর্কতায় উপকারের বদলে শরীর ও ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
এড়িয়ে চলুন প্রথম বৃষ্টি : বর্ষার প্রথম দিকের বৃষ্টিতে না ভেজাই নিরাপদ। এই পানি সাধারণত দূষিত হয়ে থাকে, যা চুল, ত্বক ও শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
খেয়াল রাখুন সময়ের দিকে : বৃষ্টির ক্ষতিকর দিক এড়িয়ে উপকারী দিক গ্রহণ করতে সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না। বৃষ্টিতে ভেজার আদর্শ সময় ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এর বেশি হলে জ্বর-সর্দি-কাশি হতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের চাই অধিক সতর্কতা : গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে বৃষ্টিতে না ভেজাই ভালো। পা পিছলে পড়ে গিয়ে বিপদ বাড়তে পারে। আবার জ্বর-সর্দি হলে গর্ভস্থিত সন্তানের ক্ষতি হতে পারে।
এড়িয়ে চলুন কাদা-পানি : অনেকে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে কাদা-পানিতে শরীর মাখামাখি করেন। মাটিতে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণু বৃষ্টির পানির স্পর্শ পেয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
ডা. সুমন্ত কুমার সাহা
এমবিবিএস, এমডি (কার্ডিওলজি), এমআরসিপি(ইউকে)
এমআরসিপিএস (গ্লাসগো), এমআরসিপিই(এডিন)
এমআরসিপি(লন্ডন)
মেডিসিন, হৃদরোগ ও বার্ধক্যজনিত রোগ বিশেষজ্ঞ
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল