ব্রণ নিয়ে যত চিন্তা

ব্রণ নিয়ে যত চিন্তা

-ডা. আয়েশা সিদ্দীকা

ক্লাস এইটে পড়ুয়া রুপন্তির গালে কয়েকটি ছোটো ছোটো ফুসকুড়ির মতো ব্রণ হয়েছে। সারাক্ষণ সেগুলো নখ দিয়ে খোঁটায় সে। এটা দেখে রুপন্তির মা তাকে এমন করতে নিষেধ করলেন। কিন্তু অবচেতনভাবেই বারবার রুপন্তির হাত গালে চলে যায়। কয়েকদিন পর তার মুখ ভরে গেল ব্রণে। তার মা তাকে নিয়ে গেলেন একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। চিকিৎসক জানালেন, রুপন্তির যে ব্রণ হয়েছে তা সিস্টিক অ্যাকনি। নখ দিয়ে খোঁটানোর কারণে ব্রণের কষ মুখের অন্যান্য স্থানে লেগে গেছে। ফলে সারা মুখে ব্রণ ছড়িয়ে পড়েছে। যেহেতু রুপন্তির বয়ঃসন্ধিকাল চলছে তাই হরমোন পরিবর্তন জনিত কারণেও ব্রণ হতে পারে বলে জানালেন তিনি।

কেন ব্রণ হয়?

অত্যন্ত পরিচিত একটি চর্মরোগ ব্রণ। ব্রণের ক্ষেত্রে বয়স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত হরমোন পরিবর্তনজনিত কারণে বয়ঃসন্ধিকালে বেশি ব্রণ হতে

দেখা যায়। কিশোর-কিশোরীদের ব্রণ হওয়া খুবই পরিচিত সমস্যা। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ৮০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী এই বয়সে ব্রণজনিত সমস্যায় ভুগে থাকে। তবে যেকোনো বয়সেই ব্রণ হতে পারে। সাধারণত যেসব কারণে ব্রণ হয়—

  • হরমোনের তারতম্য
  • ত্বকের অযত্ন-অবহেলা
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
  • জীবাণুর সংক্রমণ
  • অনিদ্রা
  • বংশগত কারণ
  • স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন
  • তৈলাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
  • পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম
  • অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন
  • সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির সংস্পর্শে থাকা
  • ত্বকে দীর্ঘসময় মেকআপ করে রাখা
  • মেকআপ ব্যবহারের পর সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার না করা
  • অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া
  • যানবাহনের দূষণ
  • ধূমপান

ব্রণের রয়েছে নানা ধরন। যেমন—প্রাথমিক পর্যায়ের ব্রণকে বলা হয় কমিডন। এটি হলে মুখে ব্ল্যাকহেডস বা দানার মতো হয়। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে যে ব্রণ হয় তাকে বলা হয় পাস্টিউলার অ্যাকনি। এই ব্রণ একটু বড় ও ব্যথাযুক্ত এবং এর ভেতরে পুঁজ থাকে। আবার আরেক ধরনের ব্রণ হয় যাতে মুখ ভর্তি হয়ে থাকে ব্রণে। একে বলা হয় সিস্টিক অ্যাকনি। এটি অন্যান্য ব্রণের চেয়ে কিছুটা আলাদা ধরনের হয়ে থাকে। এই ব্রণগুলো আকারে তুলনামূলক বড়ো, ব্যথাযুক্ত ও লাল হয়। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্রণ নির্মূল হতেও বেশ সময় লাগে।

এছাড়া রয়েছে ট্রপিক্যাল অ্যাকনি, যা অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্রতার কারণে হয়। এ ধরনের ব্রণ পিঠ ও ঊরুতে বেশি হতে দেখা যায়। আবার নারীদের মধ্যে কারো কারো প্রিমেন্সট্রুয়াল অ্যাকনি হতে দেখা যায়। এটি সাধারণত মাসিক শুরুর সপ্তাহখানেক আগে হয়। আবার কোনো প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে ব্রণ হলে তাকে অ্যাকনি কসমেটিকা বলা হয়। বারবার সাবান দিয়ে ত্বক পরিষ্কারের কারণেও ব্রণ হতে পারে। এই ব্রণকে বলা হয় অ্যাকনি ডিটারজিনেকস।

ব্রণের চিকিৎসা

ব্রণ ভয়ংকর কোনো সমস্যা না। কিন্তু ব্রণ হলে খোঁটাখুঁটি করার প্রবণতা দেখা যায়। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত দাগের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়ে মনে। শুরু হয় দুশ্চিন্তা। সাধারণত তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ বেশি হতে দেখা যায়। তৈলাক্ত ত্বককে বলা হয় অ্যাকনিপ্রন স্কিন। তবে নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে শুষ্ক ত্বকেও ব্রণ হতে পারে। তাই ব্রণ প্রতিরোধে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি।

যখন অল্প ব্রণ দেখা দেয় তখনই সালফার, জিংক, বেনজোয়েল পার অক্সাইড, রেটিন বা অ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত লোশন বা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু বেশি ব্রণ হলে সিস্টেমেটিক অ্যান্টিবায়োটিক বা সিস্টেমেটিক রেটিনয়েড থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। যখন এসব থেরাপি কাজ করে না তখন অ্যাকনি লেজার থেরাপি, ডায়মড পিলিং, লো লেভেল এলইডি লাইট এসব অ্যাসথেটিক থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। ব্রণ হলে দুশ্চিন্তা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে উর্পযুক্ত থেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসাসেবা নিন। একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করুন।

ব্রণ রোধে মেনে চলুন কিছু নিয়ম-কানুন

  • দিনে দুই থেকে তিনবার মাইল্ড বা হালকা ক্ষারযুক্ত ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন।
  • ত্বক তৈলাক্ত হলে ওয়াটার বেজড ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
  • ঘরের বাইরে যাওয়ার আগে এবং ঘরে ফিরে ত্বক পরিষ্কার করুন।
  • নিজের ব্যবহৃত তোয়ালে, চিরুনি, বালিশ আলাদা রাখুন।
  • মানসিক চাপ পরিহার করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
  • অতিরিক্ত রোদ ও শুষ্ক আবহাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  • ব্রণে হাত ও নখ লাগাবেন না, খুঁটবেন না।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে দূর করুন।
  • মুখে পানির ঝাপটা দিন।
  • চুল খুশকিমুক্ত রাখুন।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

ডা. আয়েশা সিদ্দীকা

এমবিবিএস (ঢাকা), সিসিডি (বারডেম), ডিডিভি (ডিএমসি)
এফসিপিএস (ডার্মাটোলজি অ্যান্ড ভেনারোলজি)
ফেলোশিপ ট্রেনিং ইন স্কিন সার্জারি অ্যান্ড লেজার (আইওডি, থাইল্যান্ড)
ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কোর্স ফর অ্যাজিং সায়েন্স (আইএমসিএএস, ভারত)
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ডার্মাটোলজি অ্যান্ড ভেনারোলজি বিভাগ
ডেল্টা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল
ডার্মাটোলজিস্ট, ভেনারোলজিস্ট অ্যান্ড কসমেটো-লেজার স্পেশালিস্ট
চেম্বার : ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক্‌স, গুলশান-২

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp