ব্রেইন ক্যানসার

ক্যানসার শব্দটি স্বাভাবিকভাবেই মনে একধরনের ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। আর তা যদি হয় ব্রেইন ক্যানসার তবে ভয়ের মাত্রাটা বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। ব্রেইন ক্যানসার একটি বিরল রোগ। অন্যান্য সকল ধরনের ক্যানসারের তুলনায় এটি বেশ জটিল। এ রোগের ফলে ব্রেইনের কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পায় এবং খুব দ্রæত তা ছড়িয়ে যায়। তাই সচরাচর রোগ ধরা পড়ার পর রোগীর হাতে চিকিৎসার জন্য খুব বেশিদিন সময় থাকে না।

ব্রেইন ক্যানসার কী

আগেই বলা হয়েছে, মস্তিষ্কের কোষগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধিজনিত রোগ হচ্ছে ব্রেইন ক্যানসার। এ ধরনের কোষগুলো ব্রেইন টিউমার নামেও পরিচিত। ব্রেইন টিউমার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট। বিনাইন টিউমার উপযুক্ত চিকিৎসায় সেরে যায়। কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট টিউমার খুব দ্রæত বৃদ্ধি পায় এবং এটি ক্রমশ মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তখন একে ব্রেইন ক্যানসার বলে।

ব্রেইন ক্যানসারের ধরন

ব্রেইন ক্যানসার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
১) সেকেন্ডারি ব্রেইন ক্যানসার- যেটি সবচেয়ে কমন।
এক্ষেত্রে দেহের অন্য অঙ্গে থাকা ক্যানসার ব্রেইনে ছড়িয়ে পড়ে।
২) এস্ট্রোসাইটোমা/ গ্লাইওমা- যা সরাসরি মস্তিষ্কে হয়ে থাকে।এগুলো ৪ রকম; গ্রেড-১, গ্রেড-২, গ্রেড-৩, গ্রেড-৪। গ্রেড-১ ও ২ কম বিপজ্জনক কিন্তু গ্রেড-৩, ৪ মারাত্মক।

ব্রেইন ক্যানসারের লক্ষণ


কোনো ব্যক্তি ব্রেইন ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তার শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। মাথাব্যথা ব্রেইন ক্যানসারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলেও মাথাব্যথা মানেই ব্রেইন ক্যানসার নয়। এর সঙ্গে জড়িত থাকে মাথাব্যথার তীব্রতা ও কত সময় পরপর মাথাব্যথা হয় সেই বিষয়টি। সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথাব্যথা হওয়াকে ব্রেইন ক্যানসারের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এ রোগের অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো-

  • খিঁচুনি হওয়া।
  • স্বাভাবিক আচরণে পরিবর্তন আসা।
  • বমি বমি ভাব হওয়া এবং বমি হওয়া।
  • হঠাৎ চোখে ঝাপসা দেখা, দৃষ্টিশক্তি কমে আসা।কথা জড়িয়ে যাওয়া বা কথা বলতে অসুবিধা হওয়া।
  • স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে আসা। পড়াশোনা ও কাজে মনোযোগ কমে যাওয়া।
  • হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া এবং হাঁটাচলায় অসুবিধা হওয়া।
  • ব্রেইনের যে অংশে ক্যানসার হবে ধীরে ধীরে সে অংশের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া।
  • সকালে মাথা ব্যথা হওয়া এবং সময়ের সাথে সাথে কিছুটা কমতে থাকা।

কেন হয় ব্রেইন ক্যানসার

ব্রেইন ক্যানসারের কারণগুলো নিয়ে এখনো নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যায় না। তবে যে কয়টি বিষয়কে এর কারণ হিসেবে ধারণা করা হয় তা নিম্নরূপ-

  • বংশগত।
  • আগে থেকে অন্য কোনো ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তার ব্রেইন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।

  • ব্রেইন ক্যানসারের প্রধানতম কারণ হিসেবে ধরা হয় রেডিয়েশন বা উচ্চমাত্রার আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ।
  • বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ব্রেইন ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তবে অনেক সময় কম বয়সীদেরও ব্রেইন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

ব্রেইন ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এ রোগ নির্ণয়ের প্রধানতম পরীক্ষাটি হচ্ছে এমআরআই।

ব্রেইন ক্যানসার নির্ণয়ের অন্যান্য পরীক্ষাগুলো হচ্ছে-

  • সিটি স্ক্যান
  • ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স স্পেক্টোস্কোপি
  • এনজিওগ্রাম

ব্রেইন ক্যানসারের চিকিৎসা ক্যানসারের ধরনের ওপর নির্ভর করে। প্রাইমারি ব্রেইন ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হয় সার্জারি দিয়ে এবং এরপর রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। আর সেকেন্ডারি ব্রেইন ক্যানসারের চিকিৎসা হয় সার্জারি বা রেডিওথেরাপি-কেমোথেরাপি এবং সেই সঙ্গে প্রাথমিক ক্যানসারের চিকিৎসার মাধ্যমে, যা নির্ভর করে টিউমারের সংখ্যা ও আকারের ওপর।

এছাড়া ব্রেইন ক্যানসার প্রতিরোধে যে বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখা অতি প্রয়োজন তা হলো-

  • ধূমপান ত্যাগ করা।
  • তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
  • বেশি পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া।
  • দূষণমুক্ত পরিবেশ এড়িয়ে চলা।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে
ব্রেইন ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
তবে অনেক সময় কম বয়সীদেরও ব্রেইন
ক্যানসারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

ডা. মওদুদুল হক
এমবিবিএস, এমডি, পিএইচডি (এমএস), নিউরোসার্জারি
ব্রেইন টিউমার, স্ট্রোক, মেরুদন্ডের রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
সহযোগী অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ), ঢাকা এক্স চীফ রেসিডেন্ট, নিউরোসার্জারি
ওসাকা সিটি ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল, জাপান
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp