মাথাব্যথার নানা ধরন
-অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ (সবুজ)
কখনো মাথাব্যথায় ভোগেননি এমন মানুষ বোধ হয় পাওয়া যাবে না। মাথাব্যথার নানা ধরন ও কারণ রয়েছে। প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথায় ভোগেন। মাইগ্রেনের কারণে মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন অনেকে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সমস্যার ফলে হতে পারে মাথাব্যথা। কারো মাথার এক পাশে ব্যথা হয়। কারো হয় পুরো মাথাজুড়ে। কারো আবার চোখ, মুখ, চোয়াল, ঘাড়সহ ব্যথা হয়।
প্রধানত দুই রকমের মাথাব্যথা দেখা যায়।
১. প্রাইমারি
২. সেকেন্ডারি
প্রাইমারি মাথাব্যথা
মস্তিষ্কের স্নায়ু, পেশি ও রক্তনালির জটিলতা সংক্রান্ত মাথাব্যথা হচ্ছে প্রাইমারি মাথাব্যথা। মাথার নিজস্ব রোগের কারণে এটি হয়ে থাকে। এ মাথাব্যথা অন্য কোনো রোগের উপসর্গ নয়।
সাধারণত নিম্নোক্ত কয়েক ধরনের মাথাব্যথা প্রাইমারি মাথাব্যথার অন্তর্ভুক্ত।
মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা: এ জাতীয় মাথাব্যথা সাধারণত মাথার একপাশে হয়ে থাকে এবং ব্যথা হয় খুব তীব্র। দুই ঘণ্টা থেকে দুই তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এ ব্যথা। আক্রান্ত ব্যক্তি আলো, শব্দ বা গন্ধের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হতে পারেন। অর্থাৎ অতিরিক্ত আলো, শব্দ বা গন্ধ পেলে মাথাব্যথা শুরু হয়।
ক্লাস্টার মাথাব্যথা: মাইগ্রেনের মতো এ ব্যথাও মাথার একপাশে হয়। তবে মাইগ্রেনের তুলনায় এর স্থায়িত্ব কম। বিশ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে এ ব্যথা ঠিক হয়ে যায়। তবে এটি বেশ গুরুতর। প্রতিদিন একই সময়ে হয় এবং দিনে কয়েকবার হতে পারে। এর সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গও দেখা দিয়ে থাকে। যেমন—একপাশের নাক বন্ধ হয়ে থাকা, চোখ জ্বলা, চোখ দিয়ে পানি পড়া প্রভৃতি।
দৈনন্দিন জীবনযাপনে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চললে
মাথাব্যথা থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকা যায়।
সেকেন্ডারি মাথাব্যথা
অন্য কোনো রোগের উপসর্গ হিসেবে এ ধরনের মাথাব্যথা হয়ে থাকে। প্রাইমারি মাথাব্যথার চেয়ে গুরুতর ও ঝুঁকিপূর্ণ এটি। নিম্নোক্ত রোগগুলোর লক্ষণ হিসেবে এ ধরনের মাথাব্যথা হয়।
মস্তিষ্কের টিউমার: এক্ষেত্রে খুব ভোরের দিকে মাথাব্যথা শুরু হয়। সঙ্গে খিঁচুনি হতে পারে।
মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজম: এটি মস্তিষ্কের ধমনির ফোলা অংশ, যা হঠাৎ ফেটে গিয়ে রক্তপাত ঘটায়। ফেটে যাওয়ার আগে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়। সেই সঙ্গে বমিভাব বা বমি হতে পারে। রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন।
মেনিনজাইটিস: মস্তিষ্কের আচ্ছাদনকারী পর্দায় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটলে এটি হয়। এতে প্রচণ্ড মাথাব্যথার পাশাপাশি ঘাড় শক্ত হয়ে যেতে পারে।
সাইনোসাইটিস: অ্যালার্জি কিংবা জীবাণুর সংক্রমণে সাইনাসে প্রদাহ হয়ে এই মাথাব্যথা হয়ে থাকে। চোখ, গাল ও কপালজুড়ে এই ব্যথা হয়।
হরমোনের সমস্যা: হরমোনের ওঠানামার জন্য হতে পারে মাথাব্যথা। ঋতুস্রাব, গর্ভাবস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ জাতীয় মাথাব্যথা হয়।
উচ্চ রক্তচাপ: রক্তচাপ বেড়ে গেলে মাথাব্যথা হতে পারে। সেই সঙ্গে মাথার দুপাশে দপদপ করে কাঁপতে পারে।
রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক: মস্তিষ্কের রক্তনালি বন্ধ হয়ে বা ছিঁড়ে গিয়ে স্ট্রোক হতে পারে। একে বলে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক। এটি সরাসরি মাথাব্যথার সঙ্গে যুক্ত। এক্ষেত্রে মাথাব্যথা হয় ভয়াবহ। যেন এর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক মাথাব্যথা আর নেই।
প্রতিকার
ব্যথানাশক ওষুধ খেলে সাময়িকভাবে মাথাব্যথা কমতে পারে। কিন্তু মাথাব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় না করে ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। এক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান, এমআরআই বা পিইটি স্ক্যানের মাধ্যমে কারণ নির্ণয় করতে হবে এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
মাথাব্যথা উপশমে করণীয়
প্রাইমারি মাথাব্যথা খুব যন্ত্রণাদায়ক—এ কথা ঠিক। তবে এটি অন্যান্য রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। প্রাইমারি বা সেকেন্ডারি- মাথাব্যথা যেমনই হোক, দৈনন্দিন জীবনযাপনে নিম্নোক্ত নিয়ম মেনে চললে মাথাব্যথা থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকা যায়।
- দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুন।
- দীর্ঘক্ষণ একটানা কাজ করবেন না।
- মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন না।
- ঘুমের সাইকেল ঠিক রাখুন।
- মাথাব্যথার সময় কফি বা চা পান করলে উপকার পাবেন।
- অধিক আলো, গন্ধ, গরম, ঠান্ডা, শব্দ এড়িয়ে চলুন।
- ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
- মাথাব্যথা হলে বই পড়া, গান শোনা বা অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিন।
- দীর্ঘক্ষণ কানে ইয়ারফোন গুঁজে রাখবেন না।
অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ (সবুজ)
এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউরোলজি)
ফেলো ইন ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি অ্যান্ড স্ট্রোক (নয়াদিল্লি)
স্ট্রোক নিউরোলজিস্ট
অধ্যাপক, নিউরো-মেডিসিন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
ইন-চার্জ, ল্যাবএইড স্ট্রোক সেন্টার