মুখের যেকোনো জায়গায় কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধিকেই মুখের ক্যানসার বলা হয়ে থাকে। মুখের ভেতরে গালের অংশ, আক্কেল দাঁতের পেছনের মাংসপিন্ড, জিহ্বা, মাড়ি, তালু, মুখগহ্বরের তলদেশ, গলা ও মুখের যেকোনো ক্যানসারই ওরাল ক্যানসারের অন্তর্গত। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২ লক্ষ লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে মুখের ও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও তাইওয়ানে ওরাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী। যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
মুখের ক্যানসারের লক্ষণ
- মুখের ভেতরের কোনো ক্ষত বা আলসার যদি তিন সপ্তাহের অধিক সময় ধরে থাকে।
- কোনো কারণ ছাড়াই যদি মুখের ভেতরের কোনো অংশে মাংসের বৃদ্ধি বা লাম্প দেখা যায়, যা কিনা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
- কোনো দাঁত যদি কারণ ছাড়াই নড়তে থাকে এবং সেই দাঁত তুলে ফেলার পর যদি ক্ষত না শুকায়।
- কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া যদি ঠোঁট বা জিহ্বার কোনো অংশ অবশ লাগে বা অনুভ‚তিহীন মনে হয়।
- মুখের ভেতর যদি লাল বা সাদা দাগ দেখা যায়।
- ভাঙা কোনো দাঁতের কারণে যদি মুখের ভেতরে ক্ষত তৈরি হয়।
- বেশি মাত্রায় যদি গলা ব্যথা হয়।
- ব্রাশ করার সময় বা থু থু ফেলার সময় যদি মুখ বা মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়।
কেন হয়
- পান-সুপারি-জর্দা খাওয়া। এসবে ৪৭ টি ক্যানসার উপাদান আছে।
- মুখে গুল ব্যবহার করা।
- হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) সংক্রমণ।
- তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ।
- ভাঙা দাঁতের কারণে জিবে বা গালের মাংসে ক্ষত হওয়া।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা।
- পারিবারিক ইতিহাস বা জেনেটিক কারণ।
- রেডিয়েশনের সংস্পর্শ।
- বিকৃত যৌনাচার।
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি।
যারা ঝুঁকিতে
মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। মুখের ক্যানসার সাধারণত ৫১-৫৫ বছরের লোকদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। কিন্তু বিকৃত যৌনাচার এবং এইচপিভি সংক্রমণের কারণে ৩০ থেকে ৪০ বছরের লোকদের মাঝেও দেখা যাচ্ছে। যারা অতিরিক্ত তামাকজাত দ্রব্য ও অ্যালকোহল সেবন করেন তাদের মাঝে মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।
প্রতিরোধ
দৈনন্দিন জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমেই মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। যেমন-
- পান-সুপারি-জর্দা-চুন প্রভৃতি খাওয়া বন্ধ করা।
- মুখে গুল ব্যবহার না করা।
- মুখে গুল ব্যবহার না করা।
- অ্যালকোহল সেবন না করা।
- একটানা বেশি সময় ধরে সূর্যের আলোয় না থাকা এবং ত্বক ও ঠোঁটে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।
- নিয়মিত নিজে পরীক্ষা করা ডেন্টিস্ট বা ম্যাক্সিলোফ্যাসিয়াল সার্জন দ্বারা মুখ ও মুখগহ্বরের চেকআপ করা।
- এইচপিভি সংক্রমণ এড়ানো, প্রয়োজনে টিকা গ্রহণ করা। মুখ ও দাঁতের যথাযথ যত্ন নেওয়া।
- ফলমূল, শাক-সবজি ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।
চিকিৎসা
মুখের ক্যানসারের চিকিৎসার প্রথম ধাপই হচ্ছে সার্জারি। অর্থাৎ সার্জারির মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্ত অংশ নির্মূল করা। মাইক্রোভাসকুলার রিকনস্ট্রাকশনসহ মুখের ক্যানসারের জন্য আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির সকল সার্জারিই বাংলাদেশে সম্ভব। এছাড়া আর যে সকল চিকিৎসা সার্জারির পর প্রয়োজন সেগুলো হলো-
- অনেক বেশি আক্রান্ত হলে সার্জারির পূর্বে নিউ অ্যাডজুভ্যান্ট কেমোথেরাপি।
- সার্জারি পরবর্তী রেডিওথেরাপি।
- টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি।
- কেমোথেরাপি।
- ইমিউনোথেরাপি।
চিকিৎসাপরবর্তী জটিলতা
মুখের ক্যানসারের চিকিৎসা চলাকালে বা পরবর্তীকালে কিছ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- খাদ্যগ্রহণে অসুবিধা থেকে ডিহাইড্রেশান ও পুষ্টির অভাব।
- মুখের মিউকাস মেমব্রেনের জ্বালা-যন্ত্রণা।
- ক্যানসারের চিকিৎসার ফলে রোগীর কথা বলার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- মুখের লালা তৈরি করা গ্রন্থির ক্ষতির পাশাপাশি এটা মুখকে শুষ্ক করে দেয়।
- অবসাদ বা ক্লান্তি।
- দুশ্চিন্তা হতে সৃষ্ট বিষণ্নতা।
ডা. মোহাম্মদ ওয়াহিদুল ইসলাম (প্রিন্স)
এফসিপিএস (ওএমএস), বিডিএস (ডিইউ), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
সহকারী অধ্যাপক
ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ট্রেইন্ড ফেসিয়াল কসমেটিক,
মাইক্রোভাসকুলার, ওরাল ক্যানসার অ্যান্ড লেজার সার্জারি (ভারত ও চায়না)