যেসব ওষুধ কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়

ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও নেফ্রাইটিস এই রোগগুলো কিডনি বিকলের প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু অনেক ধরনের ওষুধ আছে যেগুলোর কারণেও কিডনি বিকল হতে পারে। তবে একটু সচেতন হলে কিন্তু এগুলো এড়ানো যায়।

যে ওষুধগুলো কিডনির জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ

তীব্র ব্যাথার ওষুধ, যেমন- ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম, আইবুপ্রোফেন, কক্সইনহিবিটর, ইন্ডোমেথাসিন, নেপ্রোক্সেন এমনকি প্যারাসিটামলও কিডনির ক্ষতি করতে পারে। এই সকল ওষুধগুলো ঘন ঘন সেবন বা বেশি  মাত্রায় ব্যবহারে কিডনি বিকলের ঝুঁকি বাড়ে।

ব্যথা হলে কীকরবেন?

কিছু কিডনি বান্ধব ব্যথার ওষুধ আছে যে গুলো কিডনির ক্ষতি করে না এগুলো প্রয়োজন মত গ্রহণ করা যাবে। এগুলো হলো : ট্রামাডল, সুলিনডিক এসিড, মরফিন জাতীয় ওষুধ, প্রয়োজনে প্যাথিডিন ব্যবহার করা যেতে পারে। প্যারাসিটামল তুলনামূলক কিডনির কম ক্ষতি করে। মনে রাখতে হবে যে, একক ব্যাথার ওষুধ যত না ক্ষতি করে, একই সাথে একাধিক ধরণের ব্যথার ওষুধ গ্রহণ করলে কিডনির ক্ষতি অনেক বাড়িয়ে দেয়। উদাহরণ স্বরূপ একই সাথে ডাইক্লোফেনাক ও আইবুপ্রোফেন গ্রহনের চেয়ে পূর্ণ মাত্রায় যেকোন একটি যেমন ডাইক্লোফেনাক অথবা আইবুপ্রোফেন অনেক কম ক্ষতি করবে।

ব্যথার ওষুধ সেবন, শিরায় ইনজেক্শনের মাধ্যমে গ্রহণ বা সাপোজিটরিজ এর মাধ্যমে পায়ু পথে গ্রহণ যে কোন পথেই নেয়া হউক না কেন- সব ক্ষেত্রেই একই রকম ক্ষতি করে থাকে, কোন উপায়ে ওষুধ গ্রহণ করা হলো তার উপর ক্ষতি নির্ভর করে না।

আরও অনেক ওষুধ অনেক উপায়ে কিডনির ক্ষতি করে। কোন কোন ওষুধের কারণে বমি বা ডায়রিয়া হয়ে পানিশূণ্যতা দেখা দেয়, ফলে আকস্মিক কিডনি বিকল হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্রাববর্ধক ওষুধ সেবনেও শরীর পানিশূণ্য হয়ে কিডনি বিকল হতে পারে। ACE /অজই জাতীয় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের যে ওষুধগুলো – কেপ্টোপ্রিল, র‌্যামিপ্রিল, লিসিনোপ্রিল, লোসারটান, ভালসারটান, এনালাপ্রিল ইত্যাদি কিডনির জন্য সবচেয়ে ভালো। অনেক সময় এগুলো আকস্মিক কিডনি বিকল ঘটাতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে। কাজেই এই ওষুধ প্রয়োগের শুরুতে প্রতি ১৫ দিন পর পর রক্তের ক্রিয়েটিনিন বাড়ে কিনা দেখে নিতে হবে। ক্যান্সারের অনেক ওষুধ কিডনির উপর আঘাত হানে। এ ব্যপারে সচেতন থাকতে হবে।

হারবাল, কবিরাজী, হোমিওপ্যাথি ও স্বপ্নে পাওয়া ওষুধে যেসব হেভিমেটাল ও অসংখ্য রাসায়নিক উপাদান থাকে সেগুলো কিডনির মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে। এসব ওষুধ গ্রহনে অসংখ্য কিডনি বিকল রোগী আমরা দেখে থাকি। স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিজ্ঞ চিকিৎসকদের এ ব্যপারে সর্তক থাকতে হবে। প্রয়োজনে তীব্র ব্যথার ওষুধও ব্যবহার করা যাবে সেক্ষেত্রে ওষুধের মাত্রা ও সময়কাল চিকিৎসকগণ নির্ধারণ করে দেবেন। ওষুধের সাথে বেশি করে পানি পান করলে কিডনির ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। মনে রাখবেন, বেশি মাত্রায় দীর্ঘদিন তীব্র ব্যথার ওষুধ ব্যবহারে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।

কিডনি বিকল রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধের ব্যবহার

আমরা যে সকল ওষুধ ব্যবহার করি তার বেশির ভাগই কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কাজেই কোন কারণে কিডনির কর্মক্ষমতা কমে গেলে রক্তে দীর্ঘ সময় ওষুধ অবস্থান করে। কাজেই ওষুধের  মাত্রা ও প্রয়োগের হার সমন্বয় না করে দিলে পার্শ্বপতিক্রিয়া অনেক বেড়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় কিডনি বিকলের মাত্রার উপর নির্ভর করে ওষুধের  পরিমাণ ও প্রয়োগের হার ঠিক করে দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে কিডনির কার্যক্ষমতা পরিমাপের জন্য বএঋজ পরীক্ষাটি করতে হবে। বএঋজ পরীক্ষায়  রক্তের ক্রিয়েটিনিন, রোগীর বয়স ও লিঙ্গ থেকে একটি সহজ সমীকরণের মাধ্যমে বের করা হয়। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এর ক্ষেত্রে ওষুধের  মাত্রা ও কতবার গ্রহণ করবে তার সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উচ্চ রক্তচাপের কিছু ওষুধ যেমন- কেপ্টোপ্রিল, র‌্যামিপ্রিল, লিসিনোপ্রিল, লোসারটান, ভালসারটান, এনালাপ্রিল, এটেনোলল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ব্যথার ওষুধ যেমন- ডাইক্লোফেনাক, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, নেপ্রোক্সেন ইত্যাদি অসুস্থ কিডনির ক্ষমতা আরও দ্রুত নষ্ট করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে কিডনি বান্ধব ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।

ক্যান্সার চিকিৎসার অনেক ওষুধ কিডনির ক্ষতি করে। কোন কোন ওষুধ কিডনি দিয়ে বাহিত হয়। এ ওষুধগুলোর মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে।

মনে রাখা দরকার যে, অনেক ওষুধ অতিরিক্ত মাত্রায় ও দীর্ঘ সময় ব্যবহারে সুস্থ কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে। আবার যখন কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায় তখন অনেক সময় ওষুধের মাত্রা ও গ্রহণের হার কমিয়ে সমন্বয় করে নিতে হয়। তাই নিজে থেকে নয়, প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরমর্শ মেনে ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করুন।


অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ

এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমডি, এফআরসিপি
চিফ কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান, কিডনি রোগ বিভাগ
ল্যাবএইড স্পেশালাইজ্ড হাসপাতাল, ঢাকা।
চেয়ারম্যান, কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনসন সোসাইটি (ক্যাম্পস)

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp