আর্থ্রাইটিস বলতে সাধারণত অস্থিসন্ধির ব্যথাকে বোঝানো হয়। যাকে ইংরেজিতে বলে ‘জয়েন্ট পেইন’। আর্থ্রাইটিসে অস্থিসন্ধি, অস্থিসন্ধির আশেপাশের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় অস্টিওআর্থ্রাইটিস এবং রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস।
রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস
অস্থিসন্ধির রোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস। এটি একটি অটো ইমিউন অসুখ। শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক্ষমতার কারণে আপনা আপনিই কিছু টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অস্থিসন্ধির বহিরাবরণীতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। তখন একে রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস বলা হয়। এ রোগটি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়। এ ধরনের রোগে হাত ও পায়ের ছোটো ছোটো অস্থিসন্ধিগুলো বেশি আক্রান্ত হয়। তবে বড়ো বড়ো সন্ধিগুলোও আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতায় জটিলতার কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। এর ফলে অস্থিসন্ধি ও এর আশেপাশে ব্যথা হয়, জড়তা তৈরি হয়, ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়, শরীরে জ্বর অনুভ‚ত হয়, অস্থি ও অস্থিসন্ধির আকারেও পরিবর্তন ঘটে।
সব বয়সেই রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস রোগ হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৩০-৪০ বছর বা তার পরবর্তী বয়সে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কেন হয়
যদিও রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিসের প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি তবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে এ রোগের জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে।
- মূত্রপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- হরমোনের পরিবর্তন।
- হতাশা।
- ধূমপান।
- মহিলাদের মনোপজ।
ঝুঁকিতে আছেন যারা
- ৬৫ বা তার চেয়ে অধিক বয়সী মানুষ।
- ৪৫ এর কম বয়সী পুরুষ এবং ৪৫ এর বেশি বয়সী নারী।
- অস্থিসন্ধিতে আঘাত পেয়েছে এমন মানুষ।
- স্থ‚ল শরীরের মানুষ।
- ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ী।
- অলস ব্যক্তি।

এছাড়া অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, ভিটামিন ডি-র অভাব আছে এমন ব্যক্তিদেরও রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি আছে।
লক্ষণ ও উপসর্গ

- অস্থিসন্ধি ও এর চারপাশের মাংসপেশিতে প্রদাহ।
- হাঁটাচলায় জড়তা আসা।
- অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা।
- অল্পতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া।
- চোখমুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
- বুকে ব্যথা।
- মাঝে মাঝে জ্বর হওয়া।
- ওজন কমে যাওয়া।
- অস্থিসন্ধি ফুলে যাওয়া এবং আকৃতিতে পরিবর্তন আসা।
কীভাবে নির্ণয় করা হয়
একই সঙ্গে অনেকগুলো অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হলে প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া হয় রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কয়েক ধরনের রক্ত পরীক্ষা ও এক্স-রে করা হয়ে থাকে।
চিকিৎসা
রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস কখনো পুরোপুরি নিরাময় হয় না। যদি প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরা পড়ে তাহলে সামান্য ওষুধ, ব্যায়াম বা সেঁকের মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। দ্রæত রোগ নির্ণয় ও ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে গুরুতর ক্ষতি হতে পারেন। এমনকি রোগী স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণও করতে পারে। তবে উপসর্গ দেখা দেওয়ামাত্র চিকিৎসা শুরু করলে রোগ যেমন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তেমনি স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি থেকে বাঁচা যায়। এ চিকিৎসার বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। ওষুধ, ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ কিংবা অপারেশন।
শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক্ষমতার কারণে আপনা আপনিই কিছু টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অস্থিসন্ধির বহিরাবরণীতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। তখন একে রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস বলা হয়।
——————————————————————————————————————————————————

অধ্যাপক ডা. মোঃ আবু শাহীন
এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি, রিউমাটোলজি
ফেলো, রিউমাটোলজি (সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল, সিঙ্গাপুর)
সহযোগী অধ্যাপক, রিউমাটোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞ, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল