ডা. কাজী শহীদ-উল আলম
দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভাইরাসটির আচমকা আক্রমণে চিকিৎসাবিজ্ঞান যখন ঘাবড়ে গিয়েছিল, তখন প্রাথমিকভাবে মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিই জোর দেওয়া হয়। বস্তুত করোনাভাইরাস বা অন্য কোনো সংক্রমণ প্রতিরোধই নয়, রোগহীন সুস্থ জীবন যাপনের জন্য রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এদিকে দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ব্যাপারগুলো থেকে আমরা ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছি। পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, দৈনন্দিন শারীরিক পরিশ্রম, নিয়মিত শরীরচর্চা, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন; এসব ব্যাপারে আমরা আজকাল খুবই উদাসীন। ফলে সুযোগ পেলেই রোগ আমাদের দেহে বাসা বাঁধে। বর্তমান নিবন্ধে যেসব শারীরিক পরিশ্রম ও শরীরচর্চা দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
শারীরিক পরিশ্রম ও শরীরচর্চা
সুস্থতার একেবারে প্রাথমিক শর্ত শারীরিক পরিশ্রম ও শরীরচর্চা। অলস দেহ রোগের আঁতুড়ঘর। দেহের ওজন ঠিক রাখা, মজবুত হাড় কিংবা শক্তিশালী পেশি গঠনের জন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর যথাযথ নিয়মিত ব্যবহার জরুরি।
বস্তুত করোনাভাইরাস বা অন্য কোনো সংক্রমণ প্রতিরোধই নয়, রোগহীন সুস্থ জীবনযাপনের জন্য
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
গৃহস্থালি কাজ
সময় সুযোগ পেলেই ঘরের কাজগুলো নিজ হাতে করুন। কাপড় ধোওয়া, নেড়ে দেওয়া, বাসন-কোসন ধোওয়া, রান্না করা, রুটি বানানো, ঘরদোর ঝাড়ামোছার মতো কাজগুলো যথাসম্ভব নিজে করতে পারেন। এসবের মাধ্যমে স্ট্রেচিং, স্কোয়াটিং, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের মতো উপকার পাওয়া যায়।
হাঁটাহাঁটি বা দৌড়ানো
দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত হাঁটাহাটি করা বা দৌড়ানো জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ( ডাব্লিউএইচও ) পরামর্শ অনুযায়ী একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট দ্রুত হাঁটার বা ৭৫ মিনিট দৌড়ানো উচিত। প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
খেলাধুলা
সুস্থতার জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়। ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন, টেনিস, লং জাম্প, হাই জাম্প প্রভৃতি খেলার মধ্যে বয়সভেদে উপযুক্ত, মানানসই এবং আপনার প্রিয় খেলাটি নিয়মিত খেলতে পারেন।
বাগান করা
বাসা বাড়ির সামনে কিংবা ছাদে শাক-সবজি বা ফুলের বাগান করতে পারেন। নিয়মিত পানি দেওয়া, মাটি খুঁড়ে দেওয়া; অর্থাৎ বাগানের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পারেন। এক ঘণ্টা বাগানের কাজ করলে ১০০ থেকে ২০০ ক্যালরি ক্ষয় হয়।
সাইকেল চালানো
ওজন কমানো কিংবা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর মতো গুরুপূর্ণ বিষয়ে ভ‚মিকা রাখে সাইকেল চালানো। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তি এক ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে প্রায় ৬৫০ ক্যালরি ক্ষয় করতে পারেন। হৃদযন্ত্রের ফিটনেস বাড়াতে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট সাইকেল চালানো যেতে পারে। সাইকেল চালালে হাড়ের জোড়া বা অস্থিসন্ধির ব্যথা কমে, পায়ের মাংশপেশির শক্তি ও নমনীয়তা
বাড়ে।
কর্মস্থলে শরীরচর্চা
অনেক সময়ই আমাদের কর্মস্থলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করতে হয়। যা আমাদের স্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। তাই টানা কিছুক্ষণ কাজ করার পর মাঝেমাঝে উঠে একটু সময় পায়চারি করবেন। এ ঘর থেকে ও ঘরে যাওয়া, ফোন এলে বসে না থেকে হেঁটে হেঁটে কথা বলা, ঘাড়ের ব্যায়াম করার মতো অভ্যাসগুলো করে নিন। মাঝেমাঝে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারেন। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বসে কাজ করার তুলনায় দাঁড়িয়ে কাজ করলে মিনিটে প্রায় ১.৩৬ ক্যালরি বেশি ক্ষয় করা যায়।
সাঁতার
সব ব্যায়ামের সেরা ব্যায়াম বলা হয় সাঁতারকে। সাঁতারের মাধ্যমে দেহের প্রত্যেকটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালন হয়। গবেষণা বলছে, একজন সাঁতারুর অকালমৃত্যুর আশঙ্কা কর্মহীন ব্যক্তির অর্ধেক। সাঁতারে ওজন কমে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা নিয়মিত সাঁতার কাটলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদেরাগের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বেশ কমে যায়। পাশাপাশি কোভিডের মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকিও অনেকটা কমে যায়।

লিফট নয়, সিঁড়িতে উঠুন
লিফট ব্যবহার করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকুন। সিঁড়ি ভাঙ্গা খুবই কার্যকর একটি ব্যায়াম। সিঁড়িতে ওঠার সময় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করতে হয়। আমাদের দেহ খাবার থেকে ক্যালরি নিয়ে যে চর্বি তৈরি করে জমিয়ে রাখে, সিঁড়ি ভাঙ্গার অভ্যাস এই চর্বিকে জমা রাখার সুযোগ দেয় না, বরং মাংসপেশির শক্তি বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে সাহায্য করে।
কারাতে
কারাতে অতিরিক্ত মেদ কমায়। রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। শারীরিক বৃদ্ধি হয় দ্রæত। প্রতিক‚ল পরিস্থিতিতে যেমন নিরাপত্তার সাহস দেয়, তেমনই রোগের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করার দৈহিক শক্তি জোগায়।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা জরুরি।

ডা. কাজী শহীদ-উল আলম
এমবিবিএস (ডিএমসি), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমএস (অর্থো), ডিএমসি
ফেলো পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিক সার্জারি, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া
সহকারী অধ্যাপক, পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিক সার্জন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা
পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল