বর্ষাকালে শিশুর বাড়তি সুরক্ষা
শিশুদের কাছে বর্ষাকাল অত্যন্ত প্রিয়। সুযোগ পেলেই বৃষ্টিতে ভেজা, কাদাপানিতে খেলাধুলা করা—এসব যেন তাদের কাছে উৎসবের মতো। তবে বৃষ্টি-বাদলা কেবল আনন্দের উপলক্ষ্য নয়, বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিরও কারণ। বিশেষত শিশুরা এ সময় অধিক ঝুঁকিতে থাকে। ঠান্ডা আবহাওয়া, বৃষ্টির পানি, কর্দমাক্ত রাস্তাঘাট, জলাবদ্ধতা—প্রভৃতি কারণে শিশুদের বিভিন্ন রকম রোগ তৈরি হতে পারে। তাই অন্য সময়ের চেয়ে র্বষাকালে শশিুর বাড়তি সুরক্ষা প্রয়োজন।
বর্ষায় শিশুদের রোগ
সাধারণ সর্দি-জ্বর : বর্ষা মৌসুমে ঠান্ডা-জ্বরের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। আর্দ্র আবহাওয়া কিংবা তাপমাত্রার আকস্মিক পরিবর্তনের সঙ্গে অনেক শিশুই তাল মেলাতে পারে না। তা ছাড়া এ সময় বাতাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেট (হাঁচি-কাশির তরলকণা) ভেসে বেড়ায়। এসব কণা শিশুদের শরীরে প্রবেশ করলে তারাও কমন কোল্ড বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়। হালকা জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া—প্রভৃতি উপসর্গের মাধ্যমে শিশুর অসুস্থতার প্রকাশ ঘটে।
পরজীবীঘটিত অসুখ : বিভিন্ন পরজীবীঘটিত ও মশাবাহিত রোগগুলো এ সময় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সাধারণত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এসব রোগে উচ্চমাত্রার জ্বর, তীব্র শরীর ব্যথা, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, বমি, ত্বকে ফুসকুড়ি, পেট কামড়ানো—প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশিত হয়।
পানিবাহিত রোগ : বর্ষাকালে আমাদের দেশের শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যায়। অস্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা, দূষিত পানীয়জল ও অপরিশুদ্ধ খাবার গ্রহণ এসব রোগের জন্য দায়ী। এসব রোগে জ্বর, মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। জন্ডিসে আক্রান্ত হলে শিশুর প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়ে যায় এবং চোখ হলুদ বর্ণের হয়। শরীর অবসন্ন হয়ে পড়ে এবং খাবারে অনীহা দেখা দেয়।
বর্ষার শুরুতেই
শিশুকে ফ্লু প্রতিরোধী
ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়
টিকা দিয়ে নিন।
ছত্রাক সংক্রমণ : বর্ষাকালে ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে। শিশুদের ত্বক তুলনামূলক বেশি সংবেদনশীল। ফলে তারা এতে দ্রুত আক্রান্ত হয়। খোসপাঁচড়া, দাদ, ঘামাচি, আঙুলের ফাঁকে ঘা, মাথার ত্বকে ফুসকুড়ি—এ রকম নানা ধরনের চর্মরোগ হতে দেখা যায়।
বর্ষায় চাই বাড়তি যত্ন
বর্ষাকালে শিশুর যত্নের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখা দরকার—
নিরাপদ খাবার ও পানীয় : খাবার ও পানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি। খাবার ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করুন। কোনোভাবেই এ সময় শিশুকে বাইরের খাবার খাওয়াবেন না। আর বিশুদ্ধ পানি ব্যাপারটি কেবল পান করার ক্ষেত্রেই নয়, গোসল, হাত-মুখ ধোয়া, হাড়ি-পাতিল ধোয়ার মতো কাজগুলোর ক্ষেত্রেও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা উচিত।
পুষ্টিকর খাবার : সংক্রমণ এড়াতে শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। এজন্য খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখুন।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন : এ সময় শিশুরা সুযোগ পেলেই নোংরা কাদা-জল ঘাঁটাঘাঁটি করে। তাই লক্ষ রাখুন, বৃষ্টির দিনে শিশু যেন বাইরে বেশি খেলাধুলা না করে। অনেকসময় শিশুরা ময়লা জিনিসপত্র নিয়ে খেলে। এটাও করতে দেবেন না। নিয়মিত গোসল করিয়ে সুন্দর করে গা মুছে দিন। মলত্যাগের পর ভালো করে শিশুকে পরিষ্কার করে দেবেন।
বাড়ি-ঘর পরিচ্ছন্ন রাখুন : মশার উপদ্রব এড়াতে বাড়ির ভেতর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখুন। গর্তে, গাছের টবে, বাথরুমে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। ঘরের আবহাওয়া শুষ্ক রাখুন।
হালকা পোশাক : ভারী পোশাক নয়, বর্ষা মৌসুমে শিশুকে ঢিলেঢালা হালকা পোশাক পরানোর চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে শিশুর পোশাক হিসেবে সুতির কাপড় ভালো।
টিকা : বর্ষার শুরুতেই শিশুকে ফ্লু প্রতিরোধী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় টিকা দিয়ে নিন।
অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান
এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমডি (শিশুরোগ), এমডি (নিওনেটোলজি)
ফেলো নিওনেটোলজি, এনইউএইচ (সিঙ্গাপুর)
অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্স, দিল্লি
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হসপিটাল, ইউকে
পিএইচডি গবেষক
নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ (০-১৮ বছর)
প্রাক্তন চেয়ারম্যান, নবজাতক বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা