শরীরচর্চা: কাটবে শীত, বাড়বে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা

ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার

শীতের দিনে শরীরে শক্তি সঞ্চিত থাকে বেশি। তাই ব্যায়াম করার খুব ভালো সময় এটা। ব্যায়ামে শীতের জড়তা, আলসেমি কেটে যায় কাজকর্মেও গতি ফিরে আসে। অন্যদিকে ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে চাঙা রাখে। ব্যায়াম করলে শীতের সর্দি-কাশি, জ্বরের মতো রোগবালাই শরীরকে আর সহজে কাবু করতে পারে না। তাই শীতটাকে উপভোগ করতে চাইলে ব্যায়ামের বিকল্প নেই।

ব্যায়ামে চাই আরামদায়ক পোশাক

ব্যায়াম করার সময় আরামদায়ক পোশাক খুব গুরুত্বপূর্ণ। শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ব্যায়ামের সময় ফুলহাতা জার্সি পরে নিন। সঙ্গে ঢিলেঢালা ট্রাউজার। পায়ে পরতে হবে ব্যায়ামের জন্য উপযুক্ত কেডস। ব্যায়ামের সময় সঙ্গে তোয়ালে রাখতে পারেন। বেশি ঘাম ঝরলে মুছে ফেলুন।

ব্যায়ামের সময় পানি পান

ব্যায়াম করায় শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে পানি বেরিয়ে যায়। পানি পানের মাধ্যমেই তা পূরণ করতে হবে। জিরিয়ে নেওয়ার সময় এক-দুই ঢোঁক পানি পান করতে পারেন। ব্যায়ামের পাঁচ মিনিট পর পর্যাপ্ত পানি পান করবেন।

হাঁটাহাঁটি

ঠান্ডা লাগার ভয়ে অনেকেই শীতের সকালে বা সন্ধ্যায় হাঁটাহাঁটি বন্ধ রাখেন। এটি করতে গিয়ে অভ্যাসটিই যেন বন্ধ হয়ে না যায়। কুয়াশা-শিশিরের হাত থেকে বাঁচতে হাঁটাহাঁটি করার সময়টি বদলে নিন। সকালে নরম রোদ ওঠার পর এবং বিকেলে সন্ধ্যা নামার আগে হাঁটতে বের হোন। প্রতিদিন একটানা অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় জোরে হাঁটুন, যেন শরীর থেকে ঘাম ঝরে।

জিরিয়ে নিন একটুখানি

একটানা ব্যায়াম করবেন না। ক্লান্ত হয়ে গেলে জিরিয়ে নিতে পারেন একটু সময়।

দড়িলাফ-সাইক্লিং

ব্যায়াম হিসেবে দড়িলাফ (স্কিপিং রোপ বা জাম্প রোপ) খুবই উপকারী। এটি করতে স্থান কিংবা সময় নিয়ে ভাবার দরকার হয় না। ঘরে থেকেই সুবিধামতো সময়ে করা যায়।
শরীর সুস্থ রাখতে এবং মেদ ঝরাতে সাইক্লিং খুব ভালো ব্যায়াম। সাইক্লিং রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করা ও চর্বির মাত্রা হ্রাস করে। তবে কারও হাঁটুতে বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।

খালি হাতের (ফ্রি হ্যান্ড) ব্যায়াম

শীত কিংবা কোভিড-১৯; এই দুইয়ে মিলে পরিবেশ পরিস্থিতি অনেক সময়ই আপনার ব্যায়ামের জন্য অনুকূল না-ও থাকতে পারে। তাই বলে কি বাদ থাকবে দৈনন্দিন শরীরচর্চা? না, তা করা যাবে না। তাই ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামের কিছু কৌশল জেনে নিন। যেন ঘরে বসেই যখন-তখন করতে পারেন।

• সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত পাখির
ডানার মতো ছড়িয়ে দিন দুই ধারে।
এবার চর্কির মতো হাত দুটি ঘোরানো
শুরু করুন সামনের দিকে। গুনে গুনে ১০
বার। তিনবারে ৩০ বার করুন। এবার একই
নিয়মে হাত দুটি পেছনের দিকে ঘোরান।

• দুই পা বেশ খানিকটা ফাঁকা করে দাঁড়ান।
দুই হাত দুই পাশে ছড়িয়ে দিন। এবার
ডান হাত দিয়ে বাঁ পায়ের পাতা এবং
বাঁ হাত দিয়ে ডান পায়ের পাতা স্পর্শ
করার চেষ্টা করুন। দ্রুত করতে হবে,
কমপক্ষে ৫০ বার।

• সোজা হয়ে দাঁড়ান, হাত দুটি মাথার ওপরে
টান টান করে ধরে রাখুন। এবার সামনের
দিকে ঝুঁকে পড়ে পায়ের পা তা স্পর্শ করার
চেষ্টা করুন। ২৫ বার করুন টানা। শেষ
হলে আরও ২৫ বার।

• শক্ত বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন।
দুই হাত মাথার ওপরে সোজা করে বিছানার
সঙ্গে রাখুন। এবার কোমর এবং পা যথা
সম্ভব না নাড়িয়ে আস্তে আস্তে দেহটা তুলে
ফেলুন এবং হাত দিয়ে পা ছোঁয়ার চেষ্টা করুন।
এভাবে ১৫ বার করে ৩০ বার করতে হবে।

• শুয়ে থেকেই দুই হাত দিয়ে মাথার পেছনটা
ধরে রাখুন এবং মাথাটা মেঝে থেকে খানিকটা
ওপরে তুলুন। এবার দুই পা একসঙ্গে জোড়া লাগিয়ে
আস্তে-ধীরে ওপরে তুলুন যতটা পারা যায়। এভাবে ১৫
বার করে মোট ৩০ বার করতে হবে।


ডা. সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার

ব্যবস্থাপক, মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স
ল্যাবএইড হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp