শরীরে এ সময়ের সুষম খাদ্য
-সালমা পারভীন
পিৎজা, বার্গার, বিরিয়ানিসহ বাইরের খাবারের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি? চট করে ক্ষুধা মেটাতে খাচ্ছেন চিপস-বিস্কুট, কোমল পানীয়? দুদিন পরপর পেটের নানান সমস্যা ও শারীরিক দুর্বলতায় নাজেহাল হয়ে পড়ছেন? প্রতিদিন যে খাবারগুলো আপনি ক্ষুধা মেটাতে খাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করছে আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। আজকাল শহুরে মানুষদের খাদ্যাভ্যাসে অনেক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। হোম ডেলিভারি সুবিধার কারণে ফাস্টফুড ও ফ্রোজেন ফুডের ব্যবহার বেড়েছে কয়েক গুণ। স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে কেউ কেউ ঝুঁকেছেন কিটো ডায়েটের প্রতি। তবে, সুস্থ থাকতে সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রতিটি কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশে প্রয়োজন সুষম খাদ্য। তাই ফাস্টফুডের পরিবর্তে পাতে তুলে নিন সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার।
সুষম খাবার কী?
খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুষম খাবারে সকল খাদ্য উপাদান পরিমিত পরিমাণে উপস্থিত থাকে এবং দেহের যাবতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য চাই সুষম খাবার। সাধারণত মানুষের বয়স, ওজন, কাজের ধরন, উচ্চতা, আবহাওয়া ও অর্থনৈতিক অবস্থা্র উপর সুষম খাবার নির্ভর করে। সুষম খাদ্যের উপাদান ছয়টি- শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ লবণ, পানি।
শর্করা
দেহে শক্তি জোগানের প্রধান উৎস শর্করা। প্রতিদিন ছয় থেকে এগারো সার্ভিংস শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। ভাত, রুটি, মুড়ি, খই, চিড়া, ওটস, আলু, পাস্তা, নুডলস, আপেল, কলা প্রভৃতি খাবারে শর্করা রয়েছে। স্বাস্থ্যসচেতন যারা, তারা শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে জটিল শর্করা, যেমন- লাল চাল, লাল আটার রুটি, ওটস খেতে পারেন।
দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, তাপ উৎপাদন ও নিজেদের
কর্মক্ষম রাখতে সুষম খাবারের বিকল্প নেই।
আমিষ
দেহের বৃদ্ধিসাধনে আমিষের বিকল্প নেই। কোষ গঠনেও মূল ভূমিকা রাখে আমিষ। মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, এসব প্রাণিজ খাবারে প্রচুর আমিষ পাওয়া যায়। এগুলোকে বলা হয় প্রথম শ্রেণির আমিষ। অন্যদিকে ডাল, বাদাম ও বীজজাতীয় উদ্ভিজ্জ আমিষকে দ্বিতীয় শ্রেণির আমিষ বলা হয়। প্রতিদিন দুই থেকে তিন সার্ভিংস আমিষ গ্রহণ করা শরীরের জন্য জরুরি।
স্নেহ বা চর্বি
মস্তিষ্কের শতকরা ৬০ ভাগ চর্বি দিয়ে তৈরি। এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৫০ গ্রাম স্নেহজাতীয় খাবার গ্রহণ আবশ্যক। প্রতিদিন খুব অল্প পরিমাণে হলেও তেল, মাখন, ডালডা, ঘি প্রভৃতি স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার খেতে হবে। সে ক্ষেত্রে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখী, বাদাম, ক্যানোলা বা জলপাই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভিটামিন ও খনিজ লবণ
খাদ্যের যে উপাদানগুলো দেহের গঠন, পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে, সেগুলোই মূলত ভিটামিন। ভিটামিনের অভাবে নানান ধরনের রোগবালাই দেখা দেয়। সাধারণত মানুষের দেহে তিন ধরনের ভিটামিন সঞ্চারিত থাকে।
আমিষ
দেহের বৃদ্ধিসাধনে আমিষের বিকল্প নেই। কোষ গঠনেও মূল ভূমিকা রাখে আমিষ। মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, এসব প্রাণিজ খাবারে প্রচুর আমিষ পাওয়া যায়। এগুলোকে বলা হয় প্রথম শ্রেণির আমিষ। অন্যদিকে ডাল, বাদাম ও বীজজাতীয় উদ্ভিজ্জ আমিষকে দ্বিতীয় শ্রেণির আমিষ বলা হয়। প্রতিদিন দুই থেকে তিন সার্ভিংস আমিষ গ্রহণ করা শরীরের জন্য জরুরি।
স্নেহ বা চর্বি
মস্তিষ্কের শতকরা ৬০ ভাগ চর্বি দিয়ে তৈরি। এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৫০ গ্রাম স্নেহজাতীয় খাবার গ্রহণ আবশ্যক। প্রতিদিন খুব অল্প পরিমাণে হলেও তেল, মাখন, ডালডা, ঘি প্রভৃতি স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার খেতে হবে। সে ক্ষেত্রে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখী, বাদাম, ক্যানোলা বা জলপাই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভিটামিন ও খনিজ লবণ
খাদ্যের যে উপাদানগুলো দেহের গঠন, পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে, সেগুলোই মূলত ভিটামিন। ভিটামিনের অভাবে নানান ধরনের রোগবালাই দেখা দেয়। সাধারণত মানুষের দেহে তিন ধরনের ভিটামিন সঞ্চারিত থাকে।
- প্রোভিটামিন
- অ্যান্টিভিটামিন
- সিউডোভিটামিন
দেহকোষ ও তরলের জন্য খনিজ লবণের কোনো বিকল্প নেই। শাকসবজি, ফলমূল ভিটামিন ও খনিজের মূল উৎস। প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ সার্ভিংস শাকসবজি এবং দুই থেকে চার সার্ভিংস ফলমূল গ্রহণের মাধ্যমে দেহে খনিজ ও ভিটামিনের অভাব পূরণ করা সম্ভব। প্রতিদিনের খাবারে গাঢ় সবুজ শাকসবজি, হলুদ ফলমূল ও মৌসুমি ফলকে প্রাধান্য দিতে হবে।
পানি
আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশ পানি। অক্সিজেনের পর পানিই জীবনধারণের প্রধান উপাদান। রক্ত ও কোষে অক্সিজেনসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে পানি। হজমশক্তি বাড়ায় ও হজম প্রক্রিয়া সচল রাখে। পানির অভাবে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ গ্লাস বা ৩ লিটার পানি পান করা আবশ্যক।
সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা
বয়স, ওজন ও শারীরিক পরিশ্রম অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের দৈনিক ২০০০ থেকে ৩০০০ ক্যালরি প্রয়োজন। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ক্যালরি পূরণে, দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরন ও তাপ উৎপাদনে বেছে নিতে হবে স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য উপাদান।
- সুষম খাদ্য দেহে প্রয়োজনীয় শর্করা, আমিষ, চর্বি ও খনিজ সরবরাহ করে।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়সাধন ও কোষ গঠনে সাহায্য করে।
- মস্তিষ্ক সঞ্চালনে সাহায্য করে।
- শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখে।
- মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।
- সুষম খাবার শরীরকে শক্তিশালী রাখে ও বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে
- ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যরক্ষা করে, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
শরীরের কর্মক্ষমতা সচল রাখতে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে এবং দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণে সুষম খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। পরিমিত ও সুষম খাদ্য না পেলে শরীর পুষ্টিহীন হয়ে পড়ে। সহজেই আক্রমণ করে নানান রোগবালাই।
সালমা পারভীন
প্রধান পুষ্টিবিদ
ল্যাবএইড হাসপাতাল