শিশুদের কিডনি রোগ ও এর প্রতিকার

শিশুদের কিডনি রোগ এবং এর প্রতিকার

শিশুদের কিডনি রোগ ও এর প্রতিকার

বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক হলো ১৫ বছরের নীচের শিশু। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। শিশুদের কিডনি সমস্যা তার মধ্যে অন্যতম। তথাপি সকলের ঐকান্তিক চেষ্টায় দেশ আজ ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে।

শিশুদের কিডনি রোগ ও এর প্রতিকার

শিশুদের কিডনি রোগের লক্ষণসমূহ

  • শরীর ও মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া
  • প্রস্রাব বন্ধ কিংবা প্রস্রাব করতে অসুবিধা হওয়া
  • বয়স ৫ বছর হওয়ার পরও রাতে বিছানায় প্রস্রাব করা
  • অতিরিক্ত পানি পান করা ও প্রস্রাব করা
  • খাদ্যের প্রতি অনিহা, বমি বমি ভাব হওয়া অথবা ঘনঘন বমি করা
  • শিশুদের বয়সের তুলনায় বেড়ে না ওঠা
  • ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
  • বার বার প্রস্রাবে সংক্রমণ হওয়া
  • উচ্চ রক্তচাপ থাকা ইত্যাদি

কী কারণে কিডনি রোগ হতে পারে

  • জন্মগত ত্রুটি, যেমন- যেকোন কিডনি অনুপস্থিত থাকা, অথবা অকার্যকর কিডনি নিয়ে শিশুর জন্মগ্রহণ করা ইত্যাদি।
  • বংশগত জটিলতা যেমন- Polycystic kidney disease, Alport syndrome ইত্যাদি।
  • বিভিন্ন রোগের প্রদাহজনিত কিডনি রোগ যেমন- Acute Glomerulonephritis সাধারণত গলায় প্রদাহ অথবা  খোস-পাঁচড়া অসুখ থেকে হতে পারে।
  • নেফ্রোটিক সিনড্রোম- বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে আনুমানিক ৮৫-৯০ ভাগ অসুখ পুরোপুরি ভাল হয়ে যায় উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে।
  • বিভিন্ন জটিল অসুখ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতির সাথে সাথে কিডনিরও ক্ষতিসাধন করতে পারে। যেমন- SLE Ges Diabetes ইত্যাদি।
  • তাছাড়া আগুনে পুড়ে গেলে, ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ অথবা কোন বড় অপারেশনের পর শিশুর কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

কিডনি রোগ বিশ্বের অন্যতম ঘাতক ব্যাধি। বড়দের মতো শিশুরাও এই ঘাতক ব্যাধি থেকে মুক্ত নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের কিডনি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলে অনেক সময়েই বড় রকমের অসুখ থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের কিডনি রোগ চিকিৎসকদের অথবা বাবা মার অগোচরেই থেকে যায়। বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে রোগের লক্ষণগুলো দেখা দিতে থাকে। তাই এই রোগ প্রতিকারই সর্বোৎকৃষ্ট উপায়।

কিডনি রোগ প্রতিকারের উপায়

  • জন্মগত অসুখ অথবা ত্রুটি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সম্ভব হলে ফলাফল সন্তোষজনক হওয়া সম্ভব।
  • প্রতিটি মায়ের গর্ভকালীন সময়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা চেকআপ এর ব্যবস্থা করা।
  • ডায়রিয়া, বমি অথবা জ্বরের কারণে শিশুর শরীরে পানি এবং লবণের ঘাটতি হলে নিয়মমতো ওরস্যালাইন খাওয়ালে কিডনি বিকল হওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
  • গলায় প্রদাহ, খোস-পাঁচড়া এবং ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
  • শিশুদের ওষুধ যথাযথ নিয়মে সঠিক পরিমাণে সেবন করাতে হবে। ওষুধ সেবনের কারণে প্রস্রাব কমে গেলে অথবা কিডনি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ বন্ধ করে দিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • তিন বছরের উপরের সকল অসুস্থ শিশুর রক্তচাপ পরিমাপ করা গেলে বহু কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সম্ভব।
  • যেকোন বড় অপারেশন অথবা CT-Scan, MRI পরীক্ষার সময় শিশুর হাইড্রেশন এর দিকে নজর রাখা প্রয়োজন।

সর্বোপরি শিশুর জীবন বিপন্নকারী কিডনি রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য জনসাধারণের মধ্যে বিশেষ করে পিতামাতাকে সচেতন করে তুলতে হবে। কেননা শিশুরা কিডনি রোগের জন্য একটু বেশিই ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের শিশু স্বাস্থ্য সমস্যার প্রায় ৪.৪ শতংশই কিডনি সংক্রান্ত। তাই চিকিৎসকগণকেও শিশু কিডনি রোগ বিষয়ে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে।


ডা. সৈয়দ সাইমুল হক

সহকারী অধ্যাপক
শিশু নেফ্রোলজিস্ট

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp