শিশুর জ্বরের সময় যত্ন-আত্তি

শিশুর জ্বরের সময় যত্ন-আত্তি

শিশুর অসুস্থতা মা-বাবার জন্যেও সমান কষ্টের। পরিবারের ছোটো শিশুটির জ্বর সবাইকে উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে। ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুদের ঘন ঘন সর্দি-জ্বর হয়। অনেকের ভাইরাল জ্বর হয়। জ্বর কোনো অস্বাভাবিক ও জটিল অসুখ নয়। তাই শিশুর জ্বরে ঘাবড়ে না গিয়ে জ্বর কমানোর চেষ্টা করতে হবে। ভাইরাসজনিত জ্বর হলে তিন থেকে সাত দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। এ সময় অভিভাবকদের হতে হবে সচেতন, নিতে হবে শিশুর বাড়তি যত্ন।

শিশুর জ্বরের কারণ

ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ইউরিন ইনফেকশন, ইনফ্লুয়েঞ্জা, রেসপিটরি সিনসাইটাল, করোনা ও রাইনোভাইরাসসহ বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে শিশু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও যেসব কারণে শিশুর জ্বর হতে পারে—

  • টনসিলে সংক্রমণ
  • নিউমোনিয়া
  • রক্ত আমাশয়
  • কানে সংক্রমণ
  • ম্যালেরিয়া
  • মেনিনজাইটিস
শিশুর জ্বরের সময় যত্ন-আত্তি

উপসর্গ

সাধারণত ভাইরাস জ্বরে শিশুদের সর্দিকাশির সঙ্গে মাথা-গলা ও শরীরে ব্যথা হয়। কখনো কখনো বমি ও পাতলা পায়খানা হতে পারে। ডেঙ্গুজ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা কখনো ১০১° থেকে ১০৫° ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে। জ্বরের সঙ্গে মেরুদণ্ডে ব্যথা, মাথার পেছনে ও চোখের কোটরে তীব্র ব্যথা দেখা দেয়।

অনেকসময় ভ্যাকসিন
দেওয়ার কারণে শিশুর জ্বর
হতে পারে। সেক্ষেত্রে
শিশুকে বিশ্রাম দিন।

এ সময় চারদিন পর জ্বর ছেড়ে গিয়ে আবার ফেরত আসতে পারে। যেকোনো মৌসুমি বা ভাইরাল জ্বর বড়োদের তুলনায় শিশুদের সহজে কাবু করে ফেলে। তাই শিশুর জ্বর হলে যেসব উপসর্গ গুরুত্ব সহকারে খেয়াল করবেন—

  • শরীরে র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি উঠছে কি না।
  • শিশুর প্রস্রাব ঠিকমত হচ্ছে কি না। প্রস্রাবের রং ও পরিমাণ কেমন।
  • ঢোক গিলতে কষ্ট হচ্ছে কি না।
  • শিশুর কান দিয়ে কোনো তরল বের হচ্ছে কি না।
  • দাঁতের গোড়া বা নাক দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে কি না।
  • শিশু বমি করছে কি না।
  • শিশুর মল ও মলের সঙ্গে রক্তপাত হচ্ছে কি না।
  • শিশু নির্জীব হয়ে পড়েছে কি না।

যখন শিশুকে হাসপাতালে নেবেন

শিশুর জ্বরের সময় যত্ন-আত্তি

শিশুর জ্বর হলে সবচেয়ে জরুরি বিষয়—গুরুতর কোনো অসুস্থতার লক্ষণ আছে কি না তা নিরীক্ষা করা।

শিশু যদি পর্যাপ্ত তরল খাবার ও পানি পান করে এবং ওষুধ খাওয়ার পর খেলা করে তাহলে সেটি ভালো লক্ষণ। শিশুর খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি বজায় রাখা ও যত্নের মাধ্যমে সাত থেকে দশ দিনের মধ্যেই সুস্থ করে তোলা যায়।

সাধারণ সর্দি–জ্বর শিশুদের তেমন কোনো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে না। অনেকসময় শিশু ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয়। আবার জ্বর পুরোপুরি ছাড়ার পরের ৪৮ থেকে ৯৬ ঘণ্টা শিশুর জন্য অত্যন্ত নাজুক সময়। এ সময়ে চুলকানি হতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো নিউমোনিয়া মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে। শিশুর যদি তীব্র কাশি হতে থাকে এবং কাশির সঙ্গে বুক দেবে যায়, শ্বাসের গতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় সেটি ভালো লক্ষণ নয়।

যেমন—দুই মাসের কম বয়সী শিশুর শ্বাসের গতি মিনিটে ৬০ বা তার বেশি; দুই মাস থেকে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ৫০ বা তার বেশি এবং এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ৪০ অথবা তার বেশি হলে দেরি না করে দ্রুত শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
এছাড়াও যেসব উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে—

  • শিশুর জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে এবং তীব্রতা বাড়তে থাকলে।
  • শিশু খাওয়া বন্ধ করে দিলে ও নিস্তেজ হয়ে পড়লে।
  • নিঃশ্বাসের সঙ্গে শিশুর পাঁজর দেবে গেলে।
  • হঠাৎ খিঁচুনি শুরু হলে।

জ্বরে শিশুর যত্নে যা করবেন

বেশিরভাগ ভাইরাস জ্বর তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়। জ্বরের সঙ্গে অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে দুশ্চিন্তা এড়িয়ে শিশুর সঠিক যত্ন নিন। কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে শিশুর পুরো শরীর মুছে দিন। শরীরের তাপমাত্রা ১০০° ফারেনহাইটের বেশি হলে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ দিতে পারেন।

লক্ষ রাখতে হবে, শিশু মুখে খেতে পারছে কি না? খেলেই বমি হচ্ছে কি না? পর্যাপ্ত প্রস্রাব করছে কি না? শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়ছে কি না। এর কোনোটির ব্যত্যয় হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

শিশুর খাবারে আমিষ, ভিটামিন-সি বেশি রাখুন। স্যালাইন, ফলের রস ও বিভিন্ন তরল খাওয়ার খাওয়ান। এতে পানিশূন্যতা হবে না। জ্বর কমাতে সাপোজিটরও দেওয়া যেতে পারে। তবে ব্যথানাশক কোনো ওষুধ দেওয়া যাবে না। জ্বরের দুই-একদিনের মধ্যেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে নিন।


ডা. আজমেরী সুলতানা চৌধুরী

ডা. আজমেরী সুলতানা চৌধুরী

এমবিবিএস, এফসিপিএস (শিশুরোগ)
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ডিপার্টমেন্ট
অব পেডিয়াট্রিক্স অ্যান্ড নিউনেটোলজি
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp