শিশুর হামে কী করবেন

ডা. মো. কামরুল হাসান চৌধুরী

রাফিক সাহেব তার মায়ের মুখে শুনেছেন বসন্তের মতো হামও খুব পরিচিত অসুখ। ছোটোবেলায় আশপাশের বাচ্চাদের সঙ্গে তারও নাকি একবার হাম হয়েছিল। যদিও এখন আর সেই ঘটনা তার স্মৃতিতে নেই। গত তিন দিন ধরে রাফিক সাহেবের আট বছর বয়সী মেয়ে মিতুর প্রচণ্ড জ্বর, অনবরত সর্দি। দুপুরে মেয়ের গা মোছার সময় দেখতে পান শরীরে ছোটো ছোটো লালচে ফুসকুড়ি। প্রথমে ঘাবড়ে যান তিনি। পরমুহূর্তেই মনে হয়, হাম নয় তো?

হাম সংক্রামক রোগ। এটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে, এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তৈরি হতে পারে নানান জটিলতা। শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে, বড়োদেরও হাম হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হাম হলে গর্ভপাতসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। সুস্থ শিশুদের ক্ষেত্রে হাম একটি নিরীহ রোগ। পুষ্টিহীন শিশুরা হামে আক্রান্ত হলে এর পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ।

হামের উপসর্গ

  • তীব্র জ্বর
  • শরীর ম্যাজম্যাজ করা ও ব্যথা
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া
  • চোখ দিয়ে পানি পড়া
  • হাঁচি, কাশি
  • নাক দিয়ে অনবরত পানি বা সর্দি পড়া
  • খাবারে অরুচি
  • শরীরে লালচে র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া ও দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া

শৈশবে হামের প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার মাধ্যমে পরবর্তীতে শিশুর হামের জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

হামের জটিলতা

প্রথম দুই থেকে তিন দিন জ্বর, সর্দি-কাশি ও ক্লান্তি থাকে। পরবর্তী চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে শরীরে র‍্যাশ বা কপলিক স্পট দেখা দেয়। কানের পেছন দিক থেকে শুরু হয়ে মুখ, পেট, পিঠ, হাত-পা ও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। চোখ লাল হয়ে আসে। র‍্যাশ পুরোপুরি ওঠার পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে মিলিয়ে যেতে শুরু করে। ত্বকের চামড়া উঠে যায় ও বাদামি দাগ পড়ে যায়। প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিন, তরল খাবার ও প্রচুর পানি পানের মাধ্যমে দশ থেকে বারো দিনের মধ্যেই সাধারণত হাম সেরে যায়। তবে, অপুষ্টিতে ভুগলে বা অন্যান্য জটিলতা থাকলে এটি মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হামে শিশুমৃত্যুর হার এক থেকে তিন শতাংশ। তবে, জটিলতা দেখা দিলে সেটি পনেরো শতাংশে গড়াতে পারে। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কানপাকা, কর্নিয়ার ক্ষত, নাকে-মুখে ঘা, অপুষ্টি, সেপটিসেমিয়া ও মস্তিষ্কের প্রদাহের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। এনকেফেলাইটিস ও এসএসপি-ই যা হামে আক্রান্ত হওয়ার সাত বছর পরেও হতে পারে।

চিকিৎসা

  • জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা
  • চোখ পরিষ্কার রাখা
  • শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা
  • আক্রান্ত ব্যক্তি হতে দূরত্ব বজায় রাখা।

এই চারটি সাধারণ নিয়ম মেনে চললে হাম প্রতিহত করা সম্ভব। হামের চিকিৎসা খুব সাধারণ। এটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ।প্রথম দুয়েক দিন প্রচণ্ড জ্বর থাকে। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিন, ভিটামিন-এ ও প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যেতে পারে। এ সময় শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে রোগীকে প্রচুর তরল খাবার ও পানি খাওয়ানো জরুরি। অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ এড়াতে আক্রান্ত ব্যক্তি বা শিশুকে র‍্যাশ মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত আলাদা রাখতে হবে। হাম এড়াতে শৈশবেই হামের প্রতিষেধক টিকা দিয়ে নিতে হবে।


ডা. মো. কামরুল হাসান চৌধুরী

ডা. মো. কামরুল হাসান চৌধুরী
এমবিবিএস, ডিসিডি, এমএসসি (ক্লিনিক্যাল ডার্মাটোলজি)
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন (ইউকে)
চর্ম, যৌন, এলার্জি, লেজার অ্যান্ড হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন
(আইএসএইচআরএস- অ্যাসোসিয়েট মেম্বার)
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল

LinkedIn
Share
WhatsApp