শীতকালীন যেসব খাবারে শরীর ভালো থাকে

সালমা পারভীন

প্রকৃতিতে শীত এসে গেছে। বাতাসে শীতের আমেজ। মৌসুমের এ পরিবর্তনে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীর ও মনেও আসে বেশ কিছু পরিবর্তন। কুসুম গরম পানিতে স্নান, গরম কাপড়ের উষ্ণতা, বিকেলের মিষ্টি রোদে এক কাপ গরম কফি বা চায়ের স্বাদের কারণে শীতকাল অনেকেরই ভীষণ পছন্দের। সুস্থ দেহে প্রিয় শীতকাল উপভোগ করতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা চাই পুষ্টিকর খাবার। যা শরীরকে ভেতর
থেকে সুস্থ রাখে, গরম রাখে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কমলা

সারা বছর পাওয়া গেলেও শীতকালে সাইট্রাসজাতীয় ফল বেশি পাওয়া যায়। অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে এ সময় ফলগুলো বেশি সুস্বাদু ও সহজলভ্য হয়। শীতে যেহেতু ফ্লু জাতীয় ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যায়, তাই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল খেতে পারেন।

মাছ ও শিম

আমিষের চাহিদা মেটাতে মাংস এড়িয়ে বেছে নিতে পারেন মাছ। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ খান। মাছের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি শিম। মাছ ও শিমের ঝোল অনায়াসেই খেতে পারেন পুরো শীতকালজুড়ে। আমিষের চাহিদা মেটাতে শিমের বিচি ও মটরশুঁটি খেতে পারেন।

পালংশাক ও ব্রকলি

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধী গুণের কারণে পালংশাক সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। স্বল্প ক্যালরিযুক্ত গাঢ় সবুজ পাতার এই শাক দ্রুত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। শীতে বাজারে প্রচুর পরিমাণে পালংশাক পাওয়া যায়। চর্বি কমাতে চাইলে খেতে পারেন পুষ্টিগুণে ভরপুর পালংশাক। ব্রকলিতে রয়েছ প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শীতকালে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ত্বক সুন্দর করে।

মূলজাতীয় সবজি

শীতকালে দেহের উষ্ণতা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে খাওয়া যেতে পারে বিট, গাজর, মিষ্টি আলু, মুলা ও শালগম। শীতে এসব সবজির সরবরাহ থাকে ব্যাপক। শরীরে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে দারুণ কার্যকর মূলজাতীয় সবজি।

আদা

আদার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি বৈশিষ্ট্য সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও ফ্লু সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। রোজকার রান্নায় বা চায়ের সঙ্গে অথবা যেকোনো উপায়ে আদা নিয়মিত খেতে পারেন।

মধু

মিষ্টিজাতীয় খাবার যদি প্রিয় হয়ে থাকে, তবে চিনির পাত্রটি সরিয়ে মধুকে স্থান দিন। মধু শক্তিপ্রদায়ী খাদ্য। নানান প্রাকৃতিক গুণে ভরপুর মধু সর্দি-কাশি উপশম করে, দেহে উষ্ণতা বাড়ায়। ফ্যাটি লিভার, হৃদরোগসহ শরীরে নানান জটিলতা তৈরি করে চিনি। তাই শীতকালে চিনির বিকল্প হিসেবেও খেতে পারেন মধু।

বাদাম, খেজুর ও শুকনো ফল

বাড়তি চিনি ও মিষ্টি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। মিষ্টির চাহিদা পূরণে খেজুর, অ্যাপ্রিকট, কিশমিশ ও অন্যান্য শুকনো ফল খেতে পারেন। বাদামে থাকা ক্যালসিয়াম ও আয়রন শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে উষ্ণ রাখে এবং শক্তি জোগায়।

গ্রিন টি

প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানসমৃদ্ধ গ্রিন টি শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। অনেকেরই প্রচুর চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। শীতকালে সুস্থ থাকতে চা-কফি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে বা এর পরিবর্তে বেছে নিতে পারেন গ্রিন টি। শীতে দু-এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গ্রিন টি মন ও শরীর দুটোই চাঙা করে তুলবে।

ডিম

ডিমে আছে প্রয়োজনীয় নয়টি অ্যামাইনো অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও আয়রন। বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর ভিটামিন বি২, বি১২, এ ও ই সমৃদ্ধ ডিম। এতে আছে প্রয়োজনীয় জিংক, ফসফরাস ও মিনারেল। শুধু শীতই নয়, সারা বছর খাদ্যতালিকায় রাখুন ডিম।

শীতকালে বাজারে হাত বাড়ালেই মেলে নানান রকম টাটকা ফল, শাকসবজি, ভিটামিন সি ও জিংকসমৃদ্ধ খাবার। প্রচুর পানি পান, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে সহজেই রোগবালাই এড়িয়ে শীতকাল উপভোগ করতে পারেন।


সালমা পারভীন

প্রধান পুষ্টিবিদ
ল্যাবএইড হাসপাতাল


Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp