অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান
শীত এলেই শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। এ সময় শিশুর ভাইরাসজনিত জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও পেটের অসুখবিসুখ দেখা দিয়ে থাকে। ঠান্ডা বাতাস ও ধুলোবালি থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি শিশুর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
গরম কাপড়
শীতে শিশুদের নিরাপদ রাখার প্রধান শর্ত হলো, গরম কাপড় পরানো। তবে, না বুঝে অস্বস্তিকর গরম কাপড় পরাবেন না। যেহেতু বড়দের চেয়ে শিশুদের শীতের অনুভূতি বেশি থাকে, তাই শীতের তীব্রতা বুঝে শিশুকে শীতের কাপড় পরাতে হবে।
শীতে শিশুর ডায়রিয়া
শীতকালে শিশুর ডায়রিয়ার মূল কারণ খাদ্যনালিতে রোটাভাইরাসের সংক্রমণ। এটি মুখের মাধ্যমে শিশুর পাকস্থলীতে খুব সহজেই প্রবেশ করে। সংক্রমণরোধে শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। এ সময় শিশুর স্বাভাবিক খাবার বন্ধ করা যাবে না। ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে দুই-তিন ঘণ্টা পরপর মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, হঠাৎ জ্বর বাড়লে কিংবা খেতে অনীহা প্রকাশ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুর ডায়াপার
শীতকালে শিশুর ডায়াপার লিক করে বা ভিজে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। শিশুকে শুষ্ক ও পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতি ছয়-ঘণ্টা পরপর ডায়াপার পালটে দিতে হবে। বেছে নিতে হবে বেশি শোষণক্ষমতাযুক্ত ডায়াপার।

শিশুকে শুষ্ক ও পরিচ্ছন্ন রাখতে
প্রতি ছয়-ঘণ্টা পরপর
ডায়াপার পালটে দিতে হবে।
শিশুর গোসল
গোসল করালে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়বে এই ভয়ে অনেক বাবা-মা শিশুকে শীতে গোসল করাতে চান না। কিন্তু বাচ্চাদের গোসল না করালে উলটোটিও ঘটতে পারে। ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে শিশুকে নিয়মিত গোসল করানো জরুরি। গোসল করানোর পর নরম সুতি কাপড় দিয়ে গা মুছে দিন।
ত্বকের যত্ন
শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে শিশুর ত্বক হয়ে যায় রুক্ষ ও খসখসে। এ সময় শিশুর কোমল ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে হবে ভালো মানের বেবি অয়েল, গ্লিসারিন, ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন।
শীতে শিশুর খাদ্য
শীতকালে শিশুদের খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলে শরীর খারাপ হয়। এ সময় শিশুর খাবারে উপস্থিত থাকা চাই পর্যাপ্ত ভিটামিন-সি। এক্ষেত্রে মাল্টা, লেবু ও কমলার মতো সাইট্রাসজাতীয় ফল বেছে নিতে পারেন। যেসব বাচ্চা চিবিয়ে খেতে পারে না, তাদেরকে ডিমের কুসুম, সবজির স্যুপ, খিচুড়ি, ফলের রস খাওয়ান। মোটকথা, শীতকালীন এ সময়টাতে শিশুকে তার বয়স ও চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার, শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়াতে হবে।

শিশুর শরীর মালিশ
শিশুর দেহে রক্ত-চলাচল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মালিশ অত্যন্ত উপকারী। এতে শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি-ও পায়।
টিকাদান
শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে নির্ধারিত টিকাগুলো যথাসময়ে দিতে হবে।
স্বাস্থ্যবিধি
স্কুলে বা বাইরে মাস্ক পরা, ভালোমতো হাত ধোওয়া, নাকে-মুখে হাত না দেওয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, হাঁচি-কাশিতে রুমাল ব্যবহার প্রভৃতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস তৈরিতে শিশুকে সাহায্য করুন।
শরীর খারাপের লক্ষণ জানুন
শীতকালে শিশুদের শারীরিক পরিবর্তনগুলো খুব দ্রুত হয়ে থাকে। ফলে অনেক সময় আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। অথচ এসব পরিবর্তনগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে বড়ো কোনো রোগের বীজ। বাচ্চাদের এই অসুস্থতা ভালোভাবে খেয়াল করলে বাইরে থেকেই বোঝা যায়। যেমন- নাক, কান, পায়ের পাতা, আঙুল ফ্যাকাশে হয়ে গেলে বুঝতে হবে শিশু ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছে। বাচ্চার কথা বলতে অসুবিধা হলে কিংবা কাঁপতে থাকলে বুঝতে হবে হাইপোথারমিয়া। যেটি শীতকালে শিশুদের ক্ষেত্রে পরিচিত সমস্যা। রোগের উপসর্গ বুঝে মা-বাবাকে শিশুর জন্য দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান
এমবিবিএস, এমডি, এফসিপিএস (শিশু)
নবজাতক, কিশোর ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক, পেডিয়াট্রিক্স
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
চেম্বার: ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা।
