শীতে টনসিল সমস্যায় করণীয়

ডা. এম. আর. ইসলাম

৯ বছর বয়সী তুলি আইসক্রিম খেতে ভীষণ ভালোবাসে। শীতের সন্ধ্যায় আইসক্রিমের বায়না ধরতেই বাবা ওকে আইসক্রিম খাওয়াতে বাইরে নিয়ে গেলেন। সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকেই তুলির প্রচণ্ড গলাব্যথা শুরু হলো। কথা বলতে, পানি পান করতে এমনকি ঢোক গিলতেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বাবা-মা বেশ ঘাবড়ে গেলেন। চিকিৎসকের কাছে নিলে জানান, টনসিল প্রদাহের কারণেই তুলির এই গলাব্যথা।

কী এই টনসিল

টনসিল শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার একটি অংশ। আমাদের মুখের ভেতরেই লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও এডিনয়েড নামে চারটি গ্রুপে তারা অবস্থান করে। এগুলোর কোনো একটির প্রদাহ হলেই তাকে বলে টনসিলাইটিস। শিশুদের বেশি হলেও যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে।

শীতে বাড়ে টনসিলের প্রকোপ

শীতের তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়ে যায় টনসিলের সমস্যা। টনসিল প্রদাহের অন্যতম প্রধান কারণ শীতকালীন ঠান্ডা আবহাওয়া, ঠান্ডা খাবার, আইসক্রিম ও ঠান্ডা পানি পান। এ সময় অপুষ্টিতে ভোগা ও অ্যালার্জিজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীরা সহজেই সংক্রমিত হতে পারেন।

টনসিলের লক্ষণসমূহ

• তীব্র গলাব্যথা
• গলায় ঘা-সহ টনসিল স্ফীতি
• স্বর-পরিবর্তন
• পানি পান করতে সমস্যা
• কথা বলতে কষ্ট
• মাথা ও কানে ব্যথা
• হাঁ করতে বা ঢোক গিলতে অসুবিধা
• মুখে দুর্গন্ধ
• খাবারে অরুচি
• হাঁ করে শ্বাস নেওয়া
• ঘুমের ভেতর নাক ডাকা

ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন রোধে মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য বা ওরাল হাইজিন ঠিক রাখা জরুরি।

শীতে টনসিল উপশমে করণীয়

ফ্রিজের শীতল পানি পরিহার

রোদ থেকে ফিরে ফ্রিজের শীতল পানি পান করার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। অভ্যাসটি টনসিল প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ায়। এ সময় ঠান্ডা পানি ও খাবার খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে।

গরম কাপড়

আবহাওয়ার পরিবর্তনে শীতের প্রকোপ বেশি হলে পর্যাপ্ত শীতপোশাক পরিধান ও গলায় মাফলার ব্যবহার করতে হবে।

ওরাল হাইজিন ঠিক রাখা

ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন রোধে মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য বা ওরাল হাইজিন ঠিক রাখা জরুরি। সেক্ষেত্রে মাউথওয়াশ বা লবণ মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে বারবার কুলি করতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর পরিবেশ

অস্বাস্থ্যকর ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ টনসিল ছাড়াও আরো নানান রোগ ডেকে আনতে পারে। সুস্থ থাকতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে হবে।

লবণ-পানি বা স্যালাইন ব্যবহার

গলাব্যথা শুরু হলে কুসুম গরম লবণ- পানি বা খাবার স্যালাইন দিয়ে গড়গড়া করলে আরাম হবে। এটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের আশঙ্কাও কমিয়ে দেয়।

লেবু ও মধু

লেবু শরীরের টক্সিন দূর করতে দারুণ কার্যকর। টনসিল সংক্রমণে গলাব্যথা দূর করতে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে সেবন করতে পারেন।

হলুদ

দুধে গুঁড়ো হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন। হলুদে থাকা অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি উপাদান টিস্যুকে টনসিল প্রদাহ থেকে রক্ষা করে।

টনসিল চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার জরুরি

সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি টনসিলাইটিসের সমাধান অস্ত্রোপচার। তবে এক্ষেত্রে প্রচলিত ধারণা রয়েছে, টনসিল কেটে ফেললে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। ধারণাটি ঠিক নয়। টনসিল ছাড়াও ৬০০-এর মতো লিম্ফগ্ল্যান্ড আছে যেগুলো রোগ প্রতিরোধ করে।যদি বারবার টনসিলাইটিস হয় এবং জটিলতার সৃষ্টি হয় তাহলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টনসিল কেটে ফেলাই ভালো।


ডা. এম আর ইসলাম

এমবিবিএস, এমএস (ইএনটি)
নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ও হেড-নেক সার্জন
প্রাক্তন কনসালট্যান্ট
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ক্যানসার হাসপাতাল
অনারারি অধ্যাপক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল


Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp