ডা. মো. কামরুল হাসান চৌধুরী
চলছে শীতকাল। আবহাওয়ায় ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস। অনেকেরই এ সময় হাত, পায়ের পাতা ও ঠোঁট ফেটে যায়। বেড়ে যায় নানা রকম চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব। শীতের রুক্ষতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় চুল। খুশকির পরিমাণ এবং চুল পড়ে যাওয়ার পরিমাণ দুটোই বেড়ে যায়।

শীতে ত্বকের সমস্যা
• ত্বক ফেটে যায়।
• ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যায়।
• ত্বকে ক্ষত, খোস-পাঁচড়া, ঘা হয়।
• ঠোঁট, হাত ও পায়ের পাতা ফেটে যায়।
• অ্যালার্জি ও ড্রাই অ্যাকজিমার প্রাদুর্ভাব ঘটে।
ত্বকের যত্নের জন্য
প্রথমে বুঝতে হবে,
আপনার ত্বক তৈলাক্ত,
শুষ্ক, মিশ্র, সংবেদনশীল
নাকি স্বাভাবিক।
ত্বকের যত্নে ত্বকের ধরন
ত্বকের ধরনের ওপর এর যত্নের ধরন নির্ভর করে। প্রথমেই বুঝে নিতে হবে, আপনার ত্বক তৈলাক্ত, শুষ্ক, মিশ্র, সংবেদনশীল নাকি স্বাভাবিক। ত্বকের ধরন বোঝার জন্য কিছু লক্ষণ দেওয়া হলো।
তৈলাক্ত ত্বক: এ ধরনের ত্বক চকচক করে, ঘাম বেশি হয়। একটুতেই ধুলোবালি বসে যায়। ব্রণের প্রকোপ থাকে বেশি।
শুষ্ক ত্বক: মাঝেমধ্যেই ত্বক ফেটে গিয়ে মরা চামড়া দেখা যায়। মাঝে মাঝে চুলকানিও হয়ে থাকে। শীতকালে আরো রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে।
মিশ্র ত্বক: কপাল, নাক আর চিবুকের অংশ সহজেই তেলতেলে হয়ে যায়। সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার পর এটি বেশি হয়।
স্বাভাবিক ত্বক: এ ধরনের ত্বক শুষ্কও নয়, তেলতেলেও নয়; নরম ও মসৃণ। প্রাকৃতিকভাবেই সুন্দর। তবে অযত্ন হলে এ ত্বকও অসুন্দর হয়ে যেতে পারে।
সংবেদনশীল ত্বক: একটু এদিক-ওদিক হলেই এ ধরনের ত্বকে জ্বালাপোড়া, চুলকানি শুরু হয়। লালচে ফুসকুড়ি উঠে যায়।
ত্বকের যত্নে যা করবেন
সকাল থেকে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত একটি স্কিনকেয়ার রুটিন করে নিন। যথাযথ বিশ্রাম, শরীরচর্চা, প্রসাধন সামগ্রীর পরিমিত ব্যবহারের প্রতি লক্ষ রাখুন। নিম্নোক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিন।
পরিচ্ছন্নতা
ত্বকের যত্নে প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা। বাইরে যাওয়ার আগে-পরে হাত-মুখ ধোয়া ও সময়মতো গোসল করা জরুরি। এক্ষেত্রে পানি কুসুম গরম করে নিতে পারেন। তবে গরম পানি দিয়ে মাথা ও মুখ ধোবেন না।
প্রসাধনী ব্যবহার
ত্বকের ধরন বুঝে শীতকালে ময়েশ্চারাইজার, লোশন, ফেসওয়াশ, সানস্ক্রিন, সিরাম, গ্লিসারিন, জেল, পেট্রোলিয়াম জেলি, লিপবাম প্রভৃতি স্কিনকেয়ার প্রসাধনী ব্যবহার করা ভালো। তবে অব্যশই এসব পণ্য যেন ভালো মানের হয়।
খাবারদাবার
এ সময় খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, ফলমূল, মধু ও ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবারের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। অতিরিক্ত তেলসমৃদ্ধ খাবার, ফাস্টফুড ও নেশাজাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
এক্সফোলিয়েশন
শীতকালে ত্বকে মৃতকোষ বাড়ে। এ জন্য এক্সফোলিয়েশন করাতে পারেন। যাদের পা ফাটার সমস্যা আছে, তারা রাতে ঘুমানোর সময় মোজা পরে ঘুমালে উপকার পাবেন।

শীতে চুলের সমস্যা
- খুশকি
- অতিরিক্ত চুল পড়া
- চুলের ডগা ফেটে যাওয়া
- চুল নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া
চুলের সমস্যা সমাধানে যা করবেন
মাথার ত্বক সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। শীতে চুলের যত্নে কিছু বিষয় অনুসরণ করতে পারেন।
• সব সময় ভালো মানের প্রসাধনী ব্যবহার করুন। মানহীন শ্যাম্পু, কন্ডিশনার বা তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
• হেয়ার ড্রায়ার বা হেয়ার স্ট্রেইটনিং আয়রন যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন।
• খুশকি থেকে বাঁচতে ডিমের সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে স্কাল্পে লাগান। লেবুর রস ও মধুর মিশ্রণও বেশ উপকারী। শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
• নারকেল তেলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে হালকা গরম করে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া কমে যাবে। ডগা ফাটা রোধ হবে এবং চুল পুষ্টি পাবে।
• চুলের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ, যেমন মাথার ত্বকে র্যাশ বের হওয়া, খোস পাঁচড়া হওয়া ইত্যাদি সমস্যায় দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
• অতিরিক্ত সূর্যতাপ চুলের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষত চুলে যদি রং করা থাকে, তাহলে সূর্যরশ্মি সরাসরি চুলে লাগতে না দেওয়াই ভালো। এ ক্ষেত্রে আরামদায়ক হ্যাট বা মানসম্মত হেয়ার-স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।

ডা. মো. কামরুল হাসান চৌধুরী
এমবিবিএস, ডিসিডি, এমএসসি (ক্লিনিক্যাল ডার্মাটোলজি)
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন (যুক্তরাজ্য)
চর্ম, যৌন, অ্যালার্জি, লেজার অ্যান্ড হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন
কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল
