শীতে হৃৎস্বাস্থ্য

ডা. তাহমিনা করিম

শীতকাল সেরা ঋতুগুলোর একটি। ছুটি আর উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে শীত। তবে, মুদ্রার উলটো পিঠও আছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকলে বৃদ্ধি পায় হৃদরোগের ঝুঁকি। শূন্য ডিগ্রিতে নেমে এলে সেই ঝুঁকি বেড়ে যায় চার গুণ। দেহের তাপমাত্রা ৯৬ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে হাইপোথারমিয়া হতে পারে। অতিরিক্ত শীতের প্রকোপে রক্তনালি সংকুচিত হয়ে হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ বাড়ায়। শুরু হয় হার্টের
অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন। এতে তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হতে পারে।

শীতে হৃদরোগ কেন বাড়ে

শীতে শারীরিক ও মানসিক দুভাবেই আসে বেশ পরিবর্তন। অনেকেই ঘরকুনো হয়ে যান। হাঁটাচলা ও শরীরচর্চা কমিয়ে দেন। খাবারের বিধিনিষেধে আসে ঢিলে ভাব। শরীরে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। শীত মানুষের মনকেও নাড়া দেয়। সৃষ্টি করে মানসিক নানান জটিলতার। এ সময় শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করতে হৃদযন্ত্রকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। ফলে দ্রুত হৃৎস্পন্দন হয়।

গরমে সিঁড়ি ভাঙতে অসুবিধা না হলেও শীতকালে সেই একই সিঁড়ি ভাঙতে বুক ধড়ফড় করতে পারে। হৃৎস্পন্দনের গতি ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় বলে গরমের তুলনায় শীতকালে রক্তে জমাটবদ্ধতা, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

হৃদরোগের লক্ষণ

• বুকে, বাহুতে ব্যথা।

• চোয়ালের পেছন দিক ও গলায় চিনচিনে ব্যথা।

• বদহজম, অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস।

• বুক জ্বালাপোড়া (গ্যাস্ট্রিকের জ্বালাপোড়া ভেবে অনেকেই গুরুত্ব দেন না কিন্তু হতে পারে এটিও হৃদরোগের লক্ষণ।)

• বমি বমি ভাব ও প্রবল অস্বস্তিবোধ।

• প্রবল শীতেও শরীর ঘামতে থাকা।


হৃদরোগের
ঝুঁকি এড়াতে
একসঙ্গে বেশি
খাবার খাওয়ার
অভ্যাস ত্যাগ
করুন। হৃদরোগী
ও বয়স্ক ব্যক্তিগণ
খাবার পরপরই
হাঁটাহাঁটি করবেন না।

শীতে হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় করণীয়

শীতকালে বুকে যেকোনো ধরনের অস্বস্তি, অতিরিক্ত ঘাম, ঘাড়-বাহু-চোয়াল ও কাঁধে ব্যথা কিংবা দম নিতে অসুবিধা হওয়া মোটেও হেলাফেলা করা যাবে না। হৃদযন্ত্র যে সুষ্ঠুভাবে কর্ম সম্পাদনে ব্যর্থ হচ্ছে, এগুলো তারই লক্ষণ। বয়স্ক এবং যারা আগে থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের পক্ষে শীতকালে হৃদযন্ত্রের বাড়তি চাপ সহ্য করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় তাই বাড়তি সতর্কতা অতি আবশ্যক।

• যারা হৃদরোগে আক্রান্ত তারা শীতের শুরুতেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধের মাত্রা ঠিক করে নেবেন এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন করবেন।

• হৃদযন্ত্রের ওপর যেসব রোগ প্রভাব ফেলে সে রোগগুলো (বিশেষ করে ডায়াবেটিস) নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

• গরম কাপড়, ছাতা, জুতা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে বের হবেন। সকালে বেশি ঠান্ডা থাকলে বিকেলে বের হতে পারেন। তবে, শীতে ব্যায়াম এবং হাঁটাহাঁটি বন্ধ করা যাবে না।

• পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে মন ভালো থাকে। বয়স্ক রোগীরা প্রতিদিন গোসল করতে না পারলে একদিন পরপর কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন।

• শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে ঘরে বেশি সময় থাকার চেষ্টা করতে হবে। বাইরে গেলে প্রয়োজনীয় শীতের পোশাকের পাশাপাশি হাত ও পায়ে মোজা ব্যবহার করুন।

• বাইরের খাবার ও ধূমপান পরিহার করে ঘরে তৈরি খাবার খান। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পরিমাণ বিশেষ করে, শর্করা জাতীয় খাবার ১৫ থেকে ২০% বৃদ্ধি করা উচিত।

• অতিরিক্ত ওজন হার্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তাই বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন জেনে তা বজায় রাখুন।

• হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে একসঙ্গে বেশি খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। পরিমাণে কম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

• শরীর ও মনের চাপ কমাতে চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।

• ভরপেট খেয়ে ঠান্ডায় হাঁটাহাঁটি করলে রক্তনালি সংকুচিত হয়ে যায়। শুরু হয় এনজিনার ব্যথা। সুস্থ-সবল যারা, তারা সহজেই এটি কাটিয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু হৃদরোগী ও বয়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। তাই হৃদরোগী ও বয়স্ক ব্যক্তিগণ খাবার পরপরই হাঁটাহাঁটি করবেন না।

• নিয়মিত শরীর চেকআপ করুন। জেনে নিন, আপনার কী কী স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। সে অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে জীবনযাপন করুন।


ডা. তাহমিনা করিম

এমবিবিএস, এফসিপিএস (পেডিয়াট্রিক্স)
ফেলো পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি (ইন্ডিয়া)
ফিটাল ইকোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (ইন্ডিয়া)
পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক, পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
চেম্বার: ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল


Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp