অধ্যাপক ডা. সাহানা পারভীন

সার্ভিকাল ক্যানসার; সোজা বাংলায় যাকে বলা হয় ‘জরায়ুমুখ ক্যানসার’। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৬ হাজারের অধিক নারী মারা যায় এই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে। তথ্যটি যেমন আঁতকে ওঠার মতো, তেমনি মরণঘাতী এই রোগটি নিয়ে অসচেতনতার চিত্রটিও আশঙ্কাজনক। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদেহের যেকোনো অঙ্গ নিয়ে কথা বলাই যেখানে ট্যাবু,সেখানে প্রধানতম অঙ্গটি নিয়ে পর্যালোচনা করা তো রীতিমতো অস্বস্তিকর। এই সংস্কার আর সংকোচের শিকার হয়ে এক সময় ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হন আমাদের নারীরা। তবে এখন সময় পাল্টেছে। মানুষ দিন দিন সচেতন হয়ে উঠছেন। সুন্দর জীবন যাপনের নিশ্চয়তায় আমাদের নারীরাও এগিয়ে আসছেন।

সার্ভিকাল ক্যানসার কী?

সার্ভিক্স হলো জরায়ুর তলার অংশ যা যোনির সঙ্গে সংযুক্ত। এখানে বাড়তি কোনো অংশের জন্ম এবং তার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলো সার্ভিকাল ক্যানসার। এরপর ধীরে ধীরে এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। সার্ভিকাল ক্যানসারের জন্য দায়ী ভাইরাসটির নাম ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা’ বা এইচপিভি।

যে বয়সী নারীদের সার্ভিকাল ক্যানসার বেশি হয়

জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রাপ্ত বয়স্ক হলে হয় বলে কেউ কেউ মনে করতে পারেন; কিন্তু ব্যাপারটি মোটেই তা নয়। জরায়ু ক্যানসার হতে পারে যেকোনো বয়সেই। তবে সাধারণত ৩০ থেকে ৫৫ বছর বয়সী মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে।

সার্ভিকাল ক্যানসারের লক্ষণসমূহ

  • সঙ্গম করার সময় রক্তপাত হওয়া।.
  • সঙ্গমকালে অসহনীয় ব্যথা।
  • দুটি মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের মধ্যবর্তী সময়ে কিংবা মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরও যোনি থেকে রক্তপাত হওয়া।
  • তলপেটে ধারাবাহিক যন্ত্রণা।
  • যোনি থেকে এমন কিছু বের হওয়া যা স্বাভাবিক নয়।
  • ঘন ঘন মূত্রত্যাগ।
  • একাধিক যৌনসঙ্গী।
  • বাল্যবিয়ে।
  • অল্প বয়সে সন্তান ধারণ।
  • ঘন ঘন সন্তান হওয়া।
  • অপরিচ্ছন্নতা।
  • দীর্ঘদিন ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন।

করণীয়

সার্ভিকাল ক্যান্সার থেকে বাচার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং করা জরুরি। নিয়মিত স্ক্রিনিং করা হলে প্রথম দিকেই এই ক্যানসার শনাক্ত করা যায়, ফলে সহজে চিকিৎসা করাও সম্ভব হয়। কিন্তু বেশি দেরি হয়ে গেলে দেহের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে, তখন মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়।
উল্লিখিত লক্ষণগুলো পাওয়া গেলে দেরি না করে দ্রুত পরীক্ষা করুন। পরীক্ষা কোনো ভালো হাসপাতাল থেকে করানো উচিত। এই পরীক্ষার জন্য যোনির ভিতরের, সার্ভিক্সের মুখ থেকে ‘ফ্লুইড’-এর নমুনা সংগ্রহ করা হয়।


ডা. সাহানা পারভীন

অধ্যাপক ডা. সাহানা পারভীন
এমবিবিএস, ডিজিও, এফসিপিএস (গাইনি এন্ড অব্স)
ট্রেইন্ড ইন গাইনি অনকোলজি
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল (বোস্টন, ইউএসএ), এনইউএইচ (সিঙ্গাপুর) অধ্যাপক, গাইনি অনকোলজি
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

LinkedIn
Share
WhatsApp