স্যাঁতস্যাঁতে বর্ষায় কলেরার আতঙ্ক

স্যাঁতস্যাঁতে বর্ষায় কলেরার আতঙ্ক

ডায়রিয়া আর কলেরা কী একই?

আপাতদৃষ্টিতে কলেরা ডায়রিয়ারই একটি ধরন। তবে ডায়রিয়া ও কলেরা পুরোপুরি এক নয়। কলেরা একটি মারাত্মক ডায়রিয়াজনিত রোগ। এর জন্য দায়ী বিশেষ একধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং এই ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনই কলেরা। দূষিত খাবার খাওয়া, অনিরাপদ পানি পান করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে কলেরা হয় এবং আক্রান্ত রোগীর মল ও আবর্জনার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। কলেরায় আক্রান্ত হলে রোগীর তীব্র ডায়রিয়া ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়।

কলেরার উপসর্গ

কলেরার জীবাণু অনেকদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এক বার এই ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রবেশ করলে এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। কলেরার সাধারণ উপসর্গ তীব্র ডায়রিয়া, বমি ও প্রচণ্ড দুর্বলতা।

এ সময় অনেক রোগীর রক্তচাপও কমে যেতে দেখা যায়। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এছাড়াও কলেরায় অন্যান্য যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে—

  • তীব্র জ্বর
  • দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
  • পানিশূন্যতা
  • মাথা ঘোরা
  • বমিভাব/ বমি
  • হজমের সমস্যা
  • নিম্ন রক্তচাপ
  • মাংসপেশির সংকোচন
  • শরীর জ্বালাপোড়া

কলেরার চিকিৎসা ও প্রতিকার

স্যাঁতস্যাঁতে বর্ষায় কলেরার আতঙ্ক

কলেরায় আক্রান্ত হলে রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পানি ও খনিজ বের হয়ে যায়। ফলে রোগীর দেহে সোডিয়াম ও আয়রনের অভাব দেখা দেয়। এ অবস্থায় রোগীর ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এ সময় পানিশূন্যতা দূর করতে রোগীকে প্রচুর তরল খাবার ও স্যালাইন পান করাতে হবে। রোগীর রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে হবে। মুখে খাবার স্যালাইন খেতে না পারলে শিরার মাধ্যমে আইভি ফ্লুইড প্রয়োগ করতে হবে। রোগীকে আরামদায়ক শয্যায় এমনভাবে রাখতে হবে যেন তার দেহ উষ্ণ থাকে।

কলেরা আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে খিঁচুনি দেখা দেওয়া এমনকি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিতে পারে। তাই কলেরা রোগীর চিকিৎসায় দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া ও চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।

কলেরা প্রতিরোধে যা করবেন

বর্ষাকাল মানেই নানান রোগের প্রকোপ। এ সময় সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় কলেরা। বিশেষ করে আমাদের দেশে বর্ষা এলেই বেড়ে যায় মশা ও পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা। একসময় কলেরায় অনেক মানুষ মারা যেত। এখন কলেরায় মৃত্যুহার অনেক কমে গেছে।
ভয়ানক হলেও কলেরা এখন প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এছাড়া উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন, নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ, বিশুদ্ধ পানি পান এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার মাধ্যমে কলেরা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

  • সাধারণত পানি ও খাবারের মাধ্যমে কলেরার জীবাণু ছড়ায়। তাই বাইরের খোলা খাবার খাওয়া ও অন্যান্য অনিরাপদ উৎস থেকে পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • রোগজীবাণুর আক্রমণ এড়াতে নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • খাবার খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া জরুরি।
  • অপরিষ্কার, ঘিঞ্জি ও নোংরা পরিবেশে বসবাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং উন্নত পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
  • কলেরাপ্রবণ এলাকায় বেড়াতে যাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শমতো টিকা বা ওষুধ সেবন করতে হবে।
  • টিকার মাধ্যমে কলেরায় মৃত্যু ৫০ শতাংশ কমানো সক্ষম। তাই সময়মতো কলেরার টিকা গ্রহণ করতে হবে।

অধ্যাপক ডা. শংকর নারায়ণ দাস

অধ্যাপক ডা. শংকর নারায়ণ দাস

এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমডি, এফআরসিপি (গ্লাসগো, ইউকে)
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন বিভাগ ও অধ্যক্ষ (অব.)
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ
সিনিয়র কনসালট্যান্ট
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

LinkedIn
Share
WhatsApp