হতে পারে হাড়ের যক্ষ্মা, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে
ওসমান গণির বয়স ৪৫ বছর। কিছুদিন ধরে ব্যাক পেইনে ভুগছেন। একেক সময় ব্যথা খুব তীব্র হয়ে ওঠে। পিঠে জড়তা বোধ হয়। নড়াচড়া করতে পারেন না। হাঁটতেও সমস্যা হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানালেন, তার মেরুদণ্ডের হাড়ে যক্ষ্মা হয়েছে। ওসমান গণি বেশ অবাক হলেন। ফুসফুসের যক্ষ্মার কথা শুনেছেন, কিন্তু হাড়ের যক্ষ্মা!
যক্ষ্মা কেবল ফুসফুসের রোগ নয়
ওসমান গণির মতো অধিকাংশ মানুষই অবাক হতে পারেন। কারণ সাধারণ লোকজন যক্ষ্মা বলতে ফুসফুসের যক্ষ্মাকেই বুঝে থাকেন। কিন্তু বিষয়টি কি আসলেই তাই? একদমই নয়। এটি কেবল ফুসফুসের রোগ নয়। দেহের যেকোনো অঙ্গেই এটি হতে পারে। মস্তিষ্ক, ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি, হাড়, অস্থিসন্ধি, মেরুদণ্ড—দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গেই যক্ষ্মা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়া মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে যক্ষ্মা হয়ে থাকে। আর এই সংক্রমণ হতে পারে দেহের যেকোনো অংশে।
হাড়ের যক্ষ্মার ধরন
বিভিন্ন ধরনের হাড়ের যক্ষ্মা রয়েছে। ধরন অনুযায়ী চিকিৎসায়ও ভিন্নতা রয়েছে।
- মেরুদণ্ডের যক্ষ্মা
- ঊরুসন্ধির যক্ষ্মা
- কনুইয়ের যক্ষ্মা
- জানুসন্ধির (হাঁটুর জোড়া) যক্ষ্মা
- গোড়ালির সন্ধির যক্ষ্মা
- কাঁধের যক্ষ্মা
হাড়ের যক্ষ্মার কারণ
সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু প্রবেশ করে। প্রাথমিকভাবে এটি ফুসফুসকে আক্রমণ করে। তবে ফুসফুস থেকে হাড়, মেরুদণ্ড বা অস্থিসন্ধিসহ অন্যান্য অঙ্গে যখন ছড়িয়ে যায় তখন সেই অঙ্গও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। এই বিস্তারটি ঘটে রক্তের মাধ্যমে।
অধিক ঝুঁকিতে যারা
বংশগতভাবেই কেউ কেউ যক্ষ্মার জীবাণু বহন করেন। যক্ষ্মার জীবাণু বহনকারী ব্যক্তি সবসময় নিজে আক্রান্ত নাও হতে পারেন। তার সংস্পর্শে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম এবং ডায়াবেটিস বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে তুলনামূলক ঝুঁকি বেশি। যারা মাদক বা ধূমপানে আসক্ত, অপুষ্টিতে ভুগছেন বা দূষিত-নোংরা পরিবেশে বাস করেন তারা অন্যদের তুলনায় অধিক ঝুঁকিতে রয়েছেন।
উপসর্গ ও লক্ষণ
- পিঠে, কোমরে, অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়।
- শরীরে জড়তা তৈরি হয়। হাঁটাচলা, নড়াচড়া, ওঠাবসা করতে সমস্যা হয়।
- মেরুদণ্ড ফুলে ওঠে।
- স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়।
- পেশি দুর্বল হয়ে যায়।
- হাড়ে ভাঙন ধরতে পারে। পা-কোমর অবশ হয়ে যেতে পারে। রোগী কুঁজো হয়ে যেতে পারেন। আক্রান্ত অঙ্গ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার-প্রতিরোধ
হাড়ের যক্ষ্মার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এই চিকিৎসা সাধারণত ছয় মাস থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত চালানো হয়। এতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে অস্ত্রোপচার দরকার হতে পারে। যক্ষ্মার জীবাণু বিস্তার রোধে নিম্নোক্ত নির্দেশনাসমূহ মেনে চলবেন—
- ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন।
- বাইরে বের হলে অবশ্যই মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।
- হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় মুখ রুমাল বা টিস্যু দিয়ে ঢেকে নিন। আশপাশে লোকজন থাকলে যথাসম্ভব দূরে গিয়ে হাঁচি-কাশি দেবেন। যত্রতত্র থুতু ফেলবেন না, নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। সম্ভব হলে থুতু ফেলার পর তা মাটিচাপা দিয়ে দিন।
- যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করবেন না।
- সুস্থ ব্যক্তির শরীরের কোনো অংশে ক্ষত থাকলে তা যেন যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির আক্রান্ত স্থানের সংস্পর্শে না আসে সেটি লক্ষ রাখুন।
- যক্ষ্মার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি। তাই খাবারের ব্যাপারে সচেতন হোন। পুষ্টিকর ও সুষম খাবার নিশ্চিত করুন।
- ধুলোবালি ও নোংরা পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।
অধ্যাপক ডা. এ. কে. এম সালেক
এফসিপিএস (ফিজক্যাল মেডিসিন) ফিজিয়াট্রিস্ট
অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান
ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
চেম্বার : ল্যাবএইড লিঃ (ডায়াগনস্টিকস)